
প্রিন্ট: ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৭ এএম
অমিত শাহর বিরুদ্ধে ‘বিশেষাধিকার হনন’ নোটিশ কংগ্রেসের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৭:১৬ পিএম

আরও পড়ুন
ভারতীয় সংসদের বিরোধী দল কংগ্রেস বুধবার দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় একটি বিশেষাধিকার হনন নোটিশ জমা দিয়েছে।
নোটিশের কারণ হিসেবে কংগ্রেস দাবি করেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সম্পর্কে ‘মানহানিকর ও ভিত্তিহীন’ মন্তব্য করেছেন, যা সংসদের বিশেষাধিকারের লঙ্ঘন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৫ মার্চ, রাজ্যসভায় ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিল, ২০২৪’-এর ওপর আলোচনার সময়। কংগ্রেসের প্রধান চিফ হুইপ এবং রাজ্যসভার সদস্য জয়রাম রমেশ এই নোটিশটি রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়ের কাছে পেশ করেছেন।
রাজ্যসভা সদস্য জয়রাম রমেশ তার নোটিশে উল্লেখ করেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলের ওপর আলোচনার জবাবে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল কংগ্রেসের শাসনকালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আর পিএম কেয়ার্স তহবিল শুরু হয়েছে নরেন্দ্র মোদিজির সরকারে। কংগ্রেসের শাসনকালে একটি পরিবারই এটির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখত। কংগ্রেসের সভাপতি এর সদস্য ছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি সরকারি তহবিলের ওপর কর্তৃত্ব রাখতেন। এই দেশের জনগণের কাছে আপনারা কী জবাব দেবেন?’
কংগ্রেসের দাবি, অমিত শাহ সরাসরি সোনিয়া গান্ধীর নাম উল্লেখ না করলেও তার মন্তব্যে পরোক্ষভাবে সোনিয়া গান্ধীকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
কংগ্রেসের অভিযোগ, অমিত শাহর এই বক্তব্য ‘স্পষ্টতই মিথ্যা ও মানহানিকর’। জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এটি সোনিয়া গান্ধীর বিশেষাধিকারের লঙ্ঘন এবং সংসদের প্রতি অবমাননার সমতুল্য’।
রাজ্যসভার এই সদস্য জানান, সংসদের নিয়ম অনুযায়ী কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে মানহানিকর বা অবমাননাকর মন্তব্য করা বিশেষাধিকার হনন হিসেবে গণ্য হয়।
‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোনিয়া গান্ধীর খ্যাতি নষ্ট করার পূর্বপরিকল্পিত উদ্দেশ্য নিয়ে এই ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন’ বলেও দাবি করেন তিনি।
বিতর্কের পটভূমি
এই বিতর্কের পটভূমিতে রয়েছে সোনিয়া গান্ধীর একটি বক্তব্য। তিনি রাজ্যসভায় ‘জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রী মাতৃ বন্দনা যোজনা’ (পিএমএমভিওয়াই)-এর অধীনে মাতৃত্বকালীন সুবিধা পূরণে ব্যর্থতার বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন।
তিনি বলেন, এই সুবিধার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য বছরে প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকার বাজেট প্রয়োজন। কিন্তু ২০২৫-২৬ সালের জন্য ‘সমর্থ্য’ প্রকল্পে মাত্র ২,৫২১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এটি স্পষ্ট যে পিএমএমভিওয়াই-এর জন্য তহবিলের তীব্র ঘাটতি রয়েছে, যা সংসদে পাস হওয়া আইনের মূল বিধানের লঙ্ঘন।
বক্তব্যের জবাবে অমিত শাহ
এই বক্তব্যের জবাবে অমিত শাহ প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিল এবং পিএম কেয়ার্স তহবিলের প্রসঙ্গ তুলে কংগ্রেসের শাসনকালে তহবিলের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
কংগ্রেসের দাবি, অমিত শাহর এই মন্তব্য সোনিয়া গান্ধীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। জয়রাম রমেশ বলেন, ‘এটি সংসদের মর্যাদার প্রতি অবমাননা। আমি চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ করেছি, অমিত শাহর বিরুদ্ধে বিশেষাধিকার হননের কার্যক্রম শুরু করা হোক’।
ভারতীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা
এই ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। কংগ্রেস দল দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, বিজেপি সরকার তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মানহানিকর মন্তব্য করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
এরই জেরে এবার এই নোটিশের মাধ্যমে কংগ্রেস অমিত শাহর বিরুদ্ধে আইনি ও সংসদীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
অন্যদিকে, বিজেপি এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই ঘটনা দুই দলের মধ্যে বিরোধকে আরও তীব্র করবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও অমিত শাহর বিরুদ্ধে কংগ্রেস বিশেষাধিকার হননের নোটিশ দিয়েছিল। ২০২৩ সালে মহারাষ্ট্রের কৃষক বিধবা কলাবতী বন্দুরকরের বিষয়ে অমিত শাহর বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছিল কংগ্রেস। সেই সময় দলটি দাবি করেছিল, অমিত শাহ সংসদে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেননি। এবারও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে, যা রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও জোরদার করেছে।
সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস সমর্থকরা অমিত শাহর মন্তব্যের নিন্দা করছেন এবং সোনিয়া গান্ধীর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা অমিত শাহর পক্ষে সাফাই গাইছেন। বলছেন, তিনি কেবল কংগ্রেসের শাসনকালের ত্রুটি তুলে ধরেছেন।
তবে এই দ্বন্দ্ব রাজ্যসভায় আগামী দিনে আরও উত্তপ্ত আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের নোটিশ সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এটি সংসদ সদস্যদের মর্যাদা রক্ষা এবং সংসদের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে, অনেক সময় এটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে, কংগ্রেসের এই পদক্ষেপকে অনেকে বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দেখছেন।
এদিকে এই নোটিশের পরবর্তী পদক্ষেপ এখন রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের হাতে। তিনি এটি গ্রহণ করবেন কি না, বা এর ওপর কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে, এ ঘটনা সংসদের ভেতরে এবং বাইরে বিতর্কের আগুনকে আরও জ্বালিয়ে তুলেছে। আগামী দিনে বিষয়টি কোন দিকে গড়ায়, তা দেখার জন্য রাজনৈতিক মহল মুখিয়ে রয়েছে।সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে