যে বার্তা দিল জার্মানির নির্বাচন

ফাতমা আইদেমির
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
-67be3a8f476d9.jpg)
ছবি: সংগৃহীত
এখন একসঙ্গে চলার সময়। জার্মানির ফেডারেল নির্বাচনে চরম দক্ষিণপন্থিদের ঐতিহাসিক সাফল্য এ দেশের সব পশ্চাৎপদ গোষ্ঠীর জন্য একটি হুমকি-যার মধ্যে রয়েছে নারী, অভিবাসী, বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, ইহুদি, প্রতিবন্ধী। এবং এটি গণতন্ত্রের জন্যও হুমকিস্বরূপ, যা সবার জন্যই উদ্বেগের বিষয়।
এ গোষ্ঠীগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণের মনোভাবের এ পরিবর্তনের কারণে, এবং এটাই বাস্তবতা। এক-পঞ্চমাংশ ভোটার যে দলের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে, যার সহ-নেতা অ্যালিস ওয়েইডেল, গত রাতে লাইভ টিভিতে ঘোষণা করেছেন : ‘আমরা তাদের শিকারে বের হবো!’ ২০১৭ সালে যখন দলটি প্রথম পার্লামেন্টে প্রবেশ করেছিল, তখন এএফডি’র একজন সাবেক সহ-সভাপতির দ্বারা প্রায়ই বলা হতো এমন সতর্কতামূলক কথা। এটি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি সতর্কতা হলেও এর ভাষা আমাদের সবাইকে উসকে দেয়, যাদের এফডি প্রতিপক্ষ মনে করে। এবং এটি এখন আরেকটি কেলেঙ্কারির কারণও হয় না। আমরা জানি তারা কারা এবং তারা কী করছে। প্রশ্ন হলো, আর কে তাদের বাগাড়ম্বর ও কার্যক্রমে যোগ দেবে?
রোববার রাতে যখন নির্বাচনের ফলাফল গণনা শুরু হয়, আমি বার্লিনে একটি ‘বহুত্ববাদী গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনি পার্টি’তে গিয়েছিলাম। এই নির্দলীয় অনুষ্ঠানটি ‘জনসাধারণের উচ্চকণ্ঠ’ হিসাবে পরিচিত ছিল এবং এটি চ্যান্সেলরির কয়েক মিটার দূরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একটি অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট প্লাটফর্মের ছাতার তলায় শিল্পী, কর্মী, সাংবাদিক ও পণ্ডিতরা একত্রিত হয়েছিলেন সংক্ষিপ্ত প্যানেলে তাদের আশা ও উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরতে। তখন দর্শকরা পিৎজা খাচ্ছিল এবং সোয়াগ ব্যান্ডের সঙ্গে উদ্দীপক হিপ-হপ নাচছিল। বাড়িতে শোক প্রকাশ করার পরিবর্তে বাইরে পরিপাটি পোশাক পরা মানুষের মধ্যে থাকতে ভালো লাগছিল।
রক্ষণশীল এবং চরম ডানপন্থী দলের বিজয় ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত ছিল। তাই আমরা ছোট ছোট বিজয়গুলো উদযাপন করলাম। এ বিজয়গুলো হলো, ব্যবসাবান্ধব এফডিপি এবং অভিবাসীবিরোধী পপুলিস্ট দল বিএসডব্লিউ পার্লামেন্টে প্রবেশ করতেই পারেনি। আর বামপন্থিরা ডিসেম্বরের জরিপের তুলনায় তাদের ভোট তিনগুণ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ থেকে প্রায় ৯ শতাংশে নিয়ে গেছে।
রাতের গুরুত্বপূর্ণ উপসংহার হলো : দক্ষিণপন্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধকে সংগঠিত ও শক্তিশালী করতে হবে। আমাদের এই শক্তিকে বার্লিনের বাইরে ছড়িয়ে দিতে হবে এবং একে অপরের প্রতি নজর রাখতে হবে। বামের মধ্যকার দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত সব কষ্টকে একপাশে রাখতে হবে। আমাদের নাগরিক ও মানবাধিকার সুরক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এসব কৌশল অবশ্য নতুন নয়, কিন্তু বিশেষ করে একটি রাতের ফলাফল পরবর্তী সময়ের জন্য প্রগতিশীল শক্তিগুলোর জন্য একটি সন্ধিক্ষণ ছিল বলে বারবার একে অপরকে আশ্বস্ত করার জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এবং একটি বিশাল ডিস্কো বলের নিচে এটি করা নিশ্চিতভাবেই সহায়ক হবে।
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনূদিত
ফাতমা আইদেমির : গার্ডিয়ানের ইউরোপবিষয়ক কলামিস্ট এবং বার্লিনভিত্তিক সাংবাদিক