Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কি আগের সম্মান ফিরে পাবে?

Icon

সাইফুজ্জামান

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৪ এএম

বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কি আগের সম্মান ফিরে পাবে?

ছবি: সংগৃহীত

এই প্রথম বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ স্থগিত করে সবার মনোযোগের কেন্দ্রে এলো। বাংলা একাডেমি যতটা গবেষণার বিষয় সম্পৃক্ত ছিল ততটা অন্য বিষয়ে অনেক আগেই জড়িয়ে পড়েছে। বইমেলা আয়োজন ও অন্যকাজে অনেক সময় অপচয় হয় বলে অনেকে ধারণা পোষণ করেন। বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। কাজের পরিধিও বেড়েছে নিশ্চয়ই। 

১৯৬০ সাল থেকে বার্ষিক পুরষ্কার প্রদান করে বাংলা একাডেমি। এ পুরস্কার বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার নামে সমধিক পরিচিত। বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই পুরষ্কার প্রদান করা হয়। ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শাখায় ৯ জনকে এই পুরষ্কার প্রদান করা হতো। ১৯৮৬ সালে ২ জন সাহিত্যিক পুরষ্কার পান। ২০০৯ সালে চারটি শাখায় পুরষ্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৯৮৫, ১৯৯৭ এবং ২০০০ সালে বাংলা একাডেমি কাউকে সাহিত্য পুরষ্কারের জন্য মনোনয়ন দেয়নি। 

১৯৫৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এরপর ১৯৬০ সালের ২৬ জুলাই পূর্বপাকিস্তানের গভর্নর দি বেস্টলি একাডেরী (অ্যামেনডেন্ট) অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে বাংলা একাডেমি কার্যক্রমের সূচনা ঘটে। সাহিত্য পুরষ্কার শুরু থেকেই প্রচলিত আছে। কবিতা, উপন্যাস, নাটক, গবেষণা, ছোটগল্প, শিশু সাহিত্য, আত্মজীবনী, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণ কাহিনী, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও অনুবাদ সাহিত্যে যারা অবদান রাখছেন তারাই একমাত্র বাংলা একাডেমি পুরষ্কারে ভূষিত হয়ে থাকেন। 

স্বাধীনতার পর অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। বাংলা একাডেমি পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়ে বিতর্ক ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশংকা তৈরি তার মধ্যে প্রধান। 

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ব্যক্তি বন্দনা ও সন্তুষ্টি কোন কোন ক্ষেত্রে এমন তীব্র হয়েছে যে- বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কার প্রাপ্তি যে গৌরবের ছিল তা ম্লান হয়েছে। এমন মানুষ এ পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন যাদের কেউ চেনে না। অজ্ঞাত, অখ্যাত, অপরিচিত অনেকের এই সম্মান জুটেছে। অনেক পুরষ্কারের সময় বাংলা একাডেমি তাদের পুরষ্কার ফিরিয়ে নিয়েছে। অনেকক্ষেত্রে রাখঢাক করে পুরষ্কার চালু রাখা হয়েছে।

বাংলা একাডেমী নয় জাতীয় পর্যায়ে ঘোষিত পুরষ্কার, পদক পুরষ্কার নিয়ে কম বিতর্ক তৈরি হয়নি। দুর্ভাগা স্বদেশ! ২০২০ সালে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে-সব ছাড়িয়ে যায়। বাংলা একাডেমীর সাবেক মহা পরিচালক শামসুজ্জামান খান ৭ আগস্ট  ২০২০ সালে ফেসবুকে লেখেন- এবারের একুশে পদক বড়ই হতাশাব্যঞ্জক হয়েছে। যারা যারা পুরষ্কার কমিটিতে ছিলেন তাদের সাহিত্য সংস্কৃতি সম্বন্ধে কোন ধারনা নেই। তিন চারটি ছাড়া অন্য গুলো ছিল হাস্যকর।’

কে সাহিত্যিক, কে মুক্তিযোদ্ধা কে আমলা সেই বিবেচনায় কেউ এ পুরস্কার পেতে পারেন না। সে সম্পর্কে বিচারক ও বাছাইকারীদের অজ্ঞতা পর্বতপ্রমাণ। এতে সরকারের বদনাম হয়। সরকারকে এ বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।’

স্বাধীনতা পুরস্কার ঘোষণার পর এবার শামসুজ্জামান লিখলেন-এবার সাহিত্যে পুরষ্কার পেলেন রইজউদ্দিন- ইনি কে চিনি না। নিতাই দাসই বা কে? হায়! স্বাধীনতা পুরষ্কার।’ তখন রইজউদ্দিন ও কালিদাসকে স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। একুশে পদক একজন কবির স্ত্রী পান একটি মাত্র অনুবাদ গ্রন্থের জন্য।

স্বাধীনতা পুরষ্কারে একজন সাবেক আমলার নাম অন্তর্ভুক্তিতে ক্ষোভ তীব্র দাবানলের মতো জ্বলতে থাকে।

অনেক আগে থেকেই বাংলা একাডেমী পুরষ্কার বিতরণ ও পক্ষপাত দুষ্ট। শৈশব ও কৈশোরে কিংবা যৌবনের প্রথম ভাগে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কারকে আমরা নোবেল পুরষ্কার ভাবতাম বললে অত্যুক্তি হবে না।

এবার বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরষ্কার ২০২৪ যারা মনোনয়ন পেয়েছিলেন তাদের ১০ জনের নাম ঘোষণা করা হয় ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখ। আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক বিস্তৃত হয়।

আমরা যদি পিছনে ফিরে যাই তখন অনেক কিছু দেখব। ২০১৭ সালে নিয়াজ জামানের নাম মনোনীত হলে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাকে এ পুরষ্কার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে তৎকালীন মহাপরিচালক জানিয়েছিলেন। এ তথ্যের কথা উল্লেখ করেছেন আহমদ মোস্তফা কামাল। পুরষ্কার ঘোষণার পর কবি ফরিদ কবির ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন ‘বাংলা একাডেমী পুরষ্কার নিয়ে আমি অনেক লিখেছি। এক সময় মনে হলো অনেক হয়েছে। এবিষয়ে কিছু লেখা পণ্ডশ্রম ছাড়া কিছু ছিল না। অনেকদিন চুপ ছিলাম। ভেবেছিলাম এ নিয়ে আর কিছু লিখব না। কারণ পুরষ্কারটির দাম সম্পর্কে আমি নিজেই ১ টাকা ২৫ কিংবা ১ টাকা ৫০, বলে উল্লেখ করেছিলাম। কিন্তু এই পুরষ্কার নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন আগ্রহ না থাকলেও লেখক সমাজে যখন বেশ আহা উহু ও হাহাকার দেখি তখন কিছু লেখার জন্য হাত ও হাতের আঙুল নিশপিশ করতে থাকে। তবে আজ লিখছি ভিন্নকারণে। পুরস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এমন সব প্রশ্ন উঠছে যা একটা জটিলতা সৃষ্টি করছে বলে আমার ধারনা ‘দুই ভাগের মনোনয়ন প্রথম ভাগে ফেলোদের মধ্য থেকে ও পরের ভাগের মহাপরিচালক সহ মনোনয়নকারীদের চূড়ান্ত বিচার সম্পর্কে তিনি একটি রসিকতার সূচনা করেছেন।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম