Logo
Logo
×

বাতায়ন

মিঠে কড়া সংলাপ

সৎ পরামর্শ বাস্তবায়ন দরকার

Icon

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সৎ পরামর্শ বাস্তবায়ন দরকার

বিএনপির সদস্য নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল পুনর্গঠনের জন্য যে মূল্যবান বক্তব্য দিয়েছেন এবং দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সে বিষয়ে যেসব লিড নিউজ করা হয়েছে, এর ওপর ভিত্তি করেই লেখাটি লিখতে বসেছি। ২১ জানুয়ারি বিভিন্ন পত্রিকায় গুরুত্বের সঙ্গে তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে পরিবেশিত সংবাদের হেডলাইন ছিল-‘বিএনপি পুনর্গঠনে ভালো মানুষ দরকার’, ‘মেধাবী ও পরিশ্রমী মানুষকে দলে সম্পৃক্ত করতে হবে’, ‘সৎ আদর্শবান মানুষ দলে নিতে হবে’ ইত্যাদি।

বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে তারেক রহমান তার দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে যেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে চলেছেন, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং সুবিবেচনাপ্রসূত। আর রাজনৈতিক দলে ভালো মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য তিনি যে কথাটি বলেছেন, সে বিষয়টির প্রতিও তাই সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা উচিত। উল্লেখ্য, গতানুগতিক রাজনীতির প্রতি দেশের মানুষের মনে যে একধরনের অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সে কথাটি এখন আর অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ, অতীতে একশ্রেণির রাজনৈতিক নেতা রাজনীতির নামে যেসব অপকর্ম করেছেন, লুটতরাজ করে দেশের অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন, তাতে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে ‘রাজনীতি করে খাওয়া লোকদের’, অর্থাৎ দলীয় আদর্শের প্রতি অনুগামী না হয়ে, দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য নিবেদিত না হয়ে, যারা শুধু নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য রাজনীতি করেন, তাদের হাত থেকে রাজনীতিকে উদ্ধার করতে না পারলে, রাজনীতি এবং রাজনীতিকদের প্রতি দেশের মানুষের শেষ যে আস্থাটুকু আছে, তাও নষ্ট হয়ে যাবে। সুতরাং, বিএনপি পুনর্গঠনে বর্তমানে বিদ্যমান ভালো মানুষের পাশাপাশি আরও কিছু ভালো এবং আদর্শবান মানুষকে দলে নিতে হবে বলে তারেক রহমানের নির্দেশনা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে বলেই মনে করি; আর বিএনপির বিদ্যমান ভালো ভালো নেতাকর্মীর হাত আরও শক্তিশালী, আরও সক্রিয় করার স্বার্থেই এ কাজটি জোরেশোরে করা উচিত। কারণ, এভাবে দলে সৎ, ভালো এবং আদর্শবান নেতাকর্মীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভালো মানুষের শক্তির কারণে দলের নাম ভাঙিয়ে অন্য কেউ খারাপ কিছু করতে সাহস পাবেন না! কথাটি বলার কারণ হলো, আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই কিছু না কিছু ধান্ধাবাজ লোক আছেন, যারা সময়-সুযোগ বুঝে নিজেদের আখের গোছানোর কারণে দলের দুর্নাম হয় এবং কালক্রমে সেসব রাজনৈতিক দল ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর অতীতে যেহেতু এর প্রমাণ পাওয়া গেছে; দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেহেতু নিজ দলেরই একশ্রেণির নেতাকর্মীর খারাপ কাজের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চরমভাবে তার মূল্য দিয়েছে, সুতরাং রাজনৈতিক দলে পরোপকারী, জনদরদি, নিঃস্বার্থ নেতাকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার প্রয়োজনে রাজনীতিতে ভালো মানুষের সন্ধান করে তাদের কাজ করার সুযোগ দিলে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটির পাশাপাশি দেশের সাধারণ মানুষও উপকৃত হবেন।

উল্লেখ্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় প্রতিদিনই দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আদেশ, নির্দেশ, পরামর্শ দিয়ে দল পুনর্গঠনসহ দলের ভিত্তি মজবুত করার কাজে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন; অভিজ্ঞতার আলোকে ভালোমন্দের বাছবিচার করে ইতোমধ্যে তিনি তার দলকে আরও গতিশীল করে তুলেছেন। তার নেতৃত্বে বিএনপি এখন দেশের সেরা রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। কিন্তু তাই বলে তিনি বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বীদের খাটো করে দেখছেন না। আর এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘এবারের নির্বাচনে বিএনপি সহজেই জিতে যাবে মনে করলে ভুল করা হবে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলটি যদি নির্বাচনি ময়দানে নাও থাকে, তা সত্ত্বেও বিএনপির পক্ষে জিতে যাওয়া একদম সহজ হবে, এমনটি ভাবাও ঠিক হবে না’।

আমরা যারা রাজনীতি নিয়ে কিছুটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি, আমরা মনে করি, তারেক রহমানের উপলব্ধি সম্পূর্ণ সঠিক। বিশেষ করে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে তারেক রহমান বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সঠিক বাণী প্রেরণ করেছেন। কারণ বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির শত্রুও কিন্তু এদেশে কম নেই। তাছাড়া চক্রান্তকারীরাও চুপচাপ বসে থাকবেন না। দেশে-বিদেশে চক্রান্তকারীরা বসে আছেন। সে অবস্থায় নিজ দলে ভালো মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ানো গেলে এবং দলের ভেতরে এমন কেউ থাকলে যিনি বা যাদের কর্মকাণ্ডে দলের ক্ষতি হতে পারে, একটা শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে তাদের চিহ্নিত করতে পারলে বিএনপি আরও শক্তিশালী, আরও গতিশীল হতে পারবে। কারণ, দেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলেই যেহেতু এমন কিছু লোক ওত পেতে থাকেন, যাদের ধান্ধাই হলো কখন দল ক্ষমতায় আসবে আর কখন তারা স্বার্থ হাসিলে নেমে পড়বেন; বিএনপিতেও যে এমন লোকজন নেই, হলফ করে সে কথাটিও বলা যায় না। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্ক হওয়াই ভালো। অন্যথায় দল ক্ষমতায় আসার আগেই অভ্যুত্থান-পরবর্তী এ কয় মাস সময়ের মধ্যেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দলটিকে দুর্নামের অংশীদার হতে হতো না! এ বিষয়ে বলা চলে, অল্পকিছু ক্ষেত্রে হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের কেউ কেউ দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু অন্যায় বা খারাপ কাজ করেননি, এমনটি কিন্তু নয়। অন্যথায় অন্য একটি রাজনৈতিক দলের নেতা চাঁদাবাজির ঘটনায় বিএনপির প্রতি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতে পারতেন না এবং বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীকেও সে কথার প্রতিবাদ করতে হতো না। এখানে কথাটি উল্লেখ করার কারণ হলো, অন্য দলের সেই নেতা কর্তৃক চাঁদাবাজিসংক্রান্ত মন্তব্যটি এলোপাতাড়িভাবে করার কারণে রিজভীর প্রতিবাদ সঠিক বলে বিবেচিত হলেও ইতোমধ্যেই বিএনপি নেতাকর্মীদের কেউ কোনো অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়ছেন কি না, হোক তা সংখ্যায় অতি অল্প, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত বলে মনে করি। কারণ, এক্ষেত্রে ছোটখাটো কোনো ঘটনাও কিন্তু ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে! দশ মন দুধে যেমন এক ফোঁটা টক পড়লে সে দুধ নষ্ট হয়ে যায়, এসব ঘটনার ফলাফলও কিন্তু তেমনটিই হয়, বিশেষ করে বিএনপির শত্রুরা যেখানে সুযোগের সন্ধানে বসে আছে। বর্তমান অবস্থায় এসব বিষয়ে আমি নিজে পর্যবেক্ষণ করে যা দেখতে পেয়েছি তা হলো, একশ্রেণির লোক বিএনপি নেতাদের পেছনে ঘোরাঘুরি করে সময়ে সময়ে মিটিং-মিছিলে স্লোগানও দেয়, যারা বিএনপির কোনো নেতাও নন বা বিএনপির আদর্শ ধারণকারী কোনো কর্মীও নন। অথচ তারাই বিএনপির নাম ভাঙিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসায় ইত্যাদি অপকর্ম করে চলেছে। আর এসব অপরাধীর কারও কারও নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলে সেখানেও তারা নিজেদের বিএনপির নেতাকর্মী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন। এ অবস্থায় বিএনপি নামধারী এই শ্রেণির ধান্ধাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করাও জরুরি বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। আবারও উল্লেখ করা প্রয়োজন-একশ্রেণির অপরাধী, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজও কিন্তু বিএনপির নাম ভাঙিয়ে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন! আর বিএনপির নেতাকর্মী পরিচয়ে তারা ধান্ধাবাজি শুরু করে দেওয়ায় ইতোমধ্যেই সেসব ঘটনা বিএনপির ভাবমূর্তির প্রতিও আঘাত হানতে শুরু করেছে! সুতরাং নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেই বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি নামধারী এ ভুয়া ব্যক্তিদের চিহ্নিত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন, একশ্রেণির নেতাকর্মীর অপকর্মের কারণেই কিন্তু দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল গলেপচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অতএব, সাধু সাবধান।

পরিশেষে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দীর্ঘসময় হোমওয়ার্ক তথা গবেষণা করে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি যেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে চলেছেন, সেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে তা বাস্তবায়ন করাই হবে এখন সময়ের কাজ। আর এ মুহূর্তে দেশের মানুষ শহিদ রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত দলটির দিকেই যেহেতু তাকিয়ে আছেন, সুতরাং এ দলটির প্রতিটি কার্যক্রম, প্রতিটি পদক্ষেপ, নেতাকর্মীদের আচার-আচরণ ইত্যাদির প্রতিও দেশের মানুষের সতর্কদৃষ্টি আছে। এ অবস্থায় শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার আদর্শে দলটি পরিচালিত হবে এবং রাজনীতিতে সুবাতাস প্রবাহিত হবে, এমনটিই আমাদের কাম্য। আর সেক্ষেত্রে রাজনীতিতে মেধাবী, সৎ এবং ভালো মানুষের অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। সেই কথাটিই তারেক রহমান অতিসম্প্রতি বিএনপির সদস্য নবায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলে দিয়েছেন।

ড. মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন : মুক্তিযোদ্ধা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম