অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে যত প্রত্যাশা
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. নুরুন্নাহার ফাতেমা
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে প্রতিটি দুর্নীতি, ঘুষ, অন্যায়ভাবে অর্থ লেনদেনের জায়গাগুলোকে প্রথমে টার্গেট করতে হবে। প্রশাসনে সৎ নীতিবান এবং যোগ্য লোককে জায়গা করে দিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকে জনগণ যাতে বিশ্বাস করতে পারে এবং সম্পূর্ণভাবে তাদের উপরে নির্ভর করতে পারে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
সংসদে নারীদের অবমূল্যায়ন করে ৫০টি আলাদা আসনে সিলেকশন প্রক্রিয়া বন্ধ করে নারীদের আসনগুলোতে তাদের সরাসরি ইলেকশন করে জিতে আসার ব্যবস্থা করতে হবে।
সংসদ সদস্যদের শুধুমাত্র আইন প্রণয়ন কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। এলাকাভিত্তিক উন্নয়ন, বিভিন্ন স্কুল কলেজের সভাপতি হওয়া ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে। ভিজিএফ কার্ড, বয়স্ক ভাতার কার্ড ইত্যাদির তালিকা তৈরিতে কোনো হাত থাকবে না।
যেসব জায়গায় মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘন ঘন যাতায়াত করতে হয় সেই সমস্ত জায়গাগুলোর তালিকা করে সেগুলোকে অনলাইন করতে হবে। যেমন ভূমি অফিস , রাজউক অফিস, সিটি কর্পোরেশনের অফিস ইউনিয়ন পরিষদের অফিস ,বিদ্যুৎ ,পানি ,গ্যাস ইত্যাদি লাইনের আবেদনের জন্য নির্ধারিত অফিস।
প্রতিটি সরকারি অফিসে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করতে হবে যাতে সেখান থেকে প্রতিটি ক্লায়েন্টকে কিভাবে তার প্রয়োজনীয় সার্ভিসটি পাবে তার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
প্রতিটি হাসপাতালে হেল্প ডেস্ক স্থাপন, স্বাস্থ্য পুলিশ মোতায়েন ,এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে যাতে করে জনগণের চিকিৎসাসেবাগুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন করা যায়। প্রতিটি ইমারজেন্সি ডিপার্টমেন্টে ট্রয়াজ ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং সেখান থেকে রোগীর রোগের গুরুত্ব অনুযায়ী কে কত দ্রুত ব্যবস্থা পত্র বা চিকিৎসা পাবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
প্রতিটি ইমার্জেন্সি ডিপার্টমেন্টে চারটি করে ইনটেন্সিভ কেয়ার বেড থাকতে হবে যাতে করে গুরুতর অসুস্থ রোগীকে সাথে সাথে চিকিৎসা দেওয়া যায়।
প্রতিটি ইমারজেন্সি এবং অন্যান্য ডিপার্টমেন্টে সিনিয়র নার্সদেরকে রোগীর সেবায় অধিকতর ভূমিকা রাখতে হবে। রোগীদের নিয়ম শৃঙ্খলা সম্পর্কে অবহিত করা এবং চিকিৎসা সুবিধা ঠিক মতো পাচ্ছে কিনা তার তত্ত্বাবধান সিনিয়র নার্সদেরকে করতে হবে।
কোন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা যাবে না। আগে তার চিকিৎসা দিতে হবে এবং তারপরে একজন ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে তাকে অন্য হাসপাতালে ট্রান্সফার করতে হবে। একজন গুরুতর রোগীকে কখনোই এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে বিনা তত্ত্বাবধানে পাঠানো যাবে না।
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক হিসাব নিকাশ আয় ব্যয় জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
প্রতিটি ছোট ছোট সরকারি প্রতিষ্ঠান এক একটি সরকার। এ সমস্ত প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে আদর্শিক নেতৃত্ব দিতে হবে এবং নিজস্ব উদ্যোগে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে।
যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আয় থেকে দেশের অর্থনীতি সচল থাকে সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজধানীর বাহিরে এমন জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে যেখানে ঘন ঘন অবরোধ হরতাল ইত্যাদি করার কোন সুযোগ না থাকে এবং জনগণকে অবরুদ্ধ করে কোন দাবি-দাওয়া আদায়ের সুযোগ না থাকে।
মানুষের কর্ম ঘন্টা বিনষ্টের প্রধান কারণ ট্রাফিক জ্যাম। উপযুক্ত সড়ক পরিকল্পনা বিদের মাধ্যমে সড়কে যানবাহন চলাচলের নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং যানজটকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিহত করতে হবে।
সর্বোপরি মানুষ যাতে দ্রুত ন্যায় বিচার পায় তা সু প্রতিষ্ঠিত করতে হবে ।
লেখক: শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক