Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

‘তলে তলে ইসরাইলের সঙ্গে ভাব জমাচ্ছিলেন ইমরান খান’

জিও নিউজের কলাম

Icon

মূল: মির্জা ইশতিয়াক বেগ, অনুবাদ: বেলায়েত হুসাইন

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ পিএম

‘তলে তলে ইসরাইলের সঙ্গে ভাব জমাচ্ছিলেন ইমরান খান’

ইসরাইলের প্রসিদ্ধ সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরাইল’ অবৈধ দেশটির প্রথম সারির গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। এটি ইসরাইলি ও পশ্চিমা দেশগুলোতে অবস্থানরত ইহুদি কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্য। 

গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত সংবাদ ও বিশ্লেষণগুলো তারা বেশ গুরুত্ব সহকারে দেখেন। একই সঙ্গে এটি ইসরাইলি সরকারের আশির্বাদপুষ্টও বটে। 

গত কয়েক দিন আগে টাইমস অব ইসরাইলে ‘An Unlikely Ally: How Imran Khan Could Shape Israel-Pakistan Relations’ (একটি অসম্ভাব্য মিত্রতা: ইমরান খান যেভাবে ইসরাইল-পাকিস্তান সম্পর্ক জোড়া দিতে পারেন) শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাকিস্তানের রাজনীতিতে হইচই ফেলে দিয়েছে। 

প্রতিবেদনটি করেছেন আইনুর বাশিরাভা নামের একজন ইহুদি নারী সাংবাদিক, যিনি তেহরিকে ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে পাকিস্তান-ইসরাইল সম্পর্ক স্থাপনে সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি আখ্যা দিয়েছেন। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে যে, ইমরান খান নিজের শাসনামলে তার সাবেক স্ত্রী জামাইমার ‘গোল্ডস্মিথ’ পরিবারের মাধ্যমে কীভাবে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন এবং ইসরাইলি সরকারকে আশ্বস্ত করে চলছিলেন যে, তিনি পাকিস্তান-ইসরাইল সম্পর্ককে স্বাভাবিক করতে আন্তরিক। 

আইনুর বাশিরাভা এটিও তুলে ধরেন যে, পাকিস্তান অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর প্রতিকূলে গিয়েও যুগ যুগ ধরে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা আন্দোলনে দৃঢ় সমর্থনকারী দেশ, যার শেকড় পাকিস্তানি মুসলিম সমাজ ও সংবিধানের মধ্যে প্রোথিত। দেশটি জাতিসঙ্ঘসহ প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফোরামে ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক, চারিত্রিক ও কূটনৈতিকভাবে সমর্থন জানিয়ে আসছে। 

আর ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়াটা পাকিস্তানের পরিচিতি-বিরোধীও। ইমরান খানও জনসম্মুখে প্রকাশ্যভাবে ইসরাইলবিরোধী এমন বয়ানই দিয়ে আসছিলেন। তবে পর্দার আড়ালে তিনি ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। 

ওই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, ইমরান খান পশ্চিমা বিশ্ব ও মুসলিম দেশগুলোর মধ্যকার দূরত্ব ঘোচানোর ক্ষেত্রে বিস্ময়কর যোগ্যতা লালন করেন। এজন্য ইসরাইল ও তার পশ্চিমা মিত্রদের উচিৎ ইমরান খানকে রাজনীতি ও ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে নিজেদের ভূমিকা পালন করা। 

একথাও উল্লেখযোগ্য যে, ইমরান খান ক্ষমতায় থাকাকালেই এমন সংবাদ প্রকাশ্যে আসত যে, ‘পাকিস্তান-ইসরাইল সম্পর্ক স্থাপনে ইমরান খানের সাবেক স্ত্রী জামাইমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।’ এই সত্যও সবার জানা যে, জামাইমার ‘গোল্ডস্মিথ’ পরিবার ব্রিটেনের একটি অভিজাত বংশ, ইসরাইলপন্থী লবির সঙ্গে যাদের রয়েছে গভীর ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। 

ইমরান খানও তার সাবেক স্ত্রী জামাইমার ভাই জ্যাক গোল্ডস্মিথকে ব্রিটেনের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে এবং তাকে লন্ডনের মেয়র প্রার্থী বানাতে প্রচারণা চালান। ২০১৬ সালে লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মুসলিম প্রার্থী সাদিক খানের বিপরীতে ইহুদি বংশোদ্ভূত জ্যাকের পক্ষাবলম্বন ও সমর্থনের ঘোষণা দেন ইমরান, যার কারণে তাকে পাকিস্তানি ও ব্রিটেনে অবস্থানরত মুসলিমদের কঠোর সমালোচনায় পড়তে হয়। 

ইহুদি পরিবারের সঙ্গে ইমরান খানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় মাওলানা ফজলুর রহমান, হাকিম মোহাম্মদ সাঈদ ও ডাক্তার আসরার আহমাদের মতো ব্যক্তিরাও পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে ‘ইহুদি এজেন্ট’ আখ্যা দেন। 

ইসরাইলি গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক এই প্রতিবেদন প্রকাশ ও গোল্ডস্মিথ পরিবারের সঙ্গে ইমরান খানের সখ্যতা আগামী দিনগুলোতে তার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে পারে এবং একই সঙ্গে তিনি সম্মুখীন হতে পারেন আরও একাধিক সমস্যারও। 

অবশ্যই ইমরান খান নিজের শাসনামলে ফিলিস্তিনের পক্ষে দারাজ কণ্ঠে কথা বলছিলেন, প্রকৃতপক্ষে যা ‘লিপ সার্ভিস’র চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। তবে তিনি প্রকাশ্য বক্তৃতা ও তলে তলে ইসরাইলের সঙ্গে ভাব জমানোর ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা বজায় রেখেছিলেন, এর মাধ্যমে ধারণা করা যায় যে, ইসরাইলের সঙ্গে পাকিস্তানের যে ঐতিহাসিক অবস্থান, ইমরান খান সেটা পুনঃপর্যালোচনার ইচ্ছাপোষণ করতেন এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির যে দ্রুত পরিবর্তন, সেটা দেখে এও সম্ভব মনে হয় যে, ইমরান খান তার শাসনকালে ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে অনেকটা উন্নতিও করেছিলেন। 

পাকিস্তানিদের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের জন্য যে ভালোবাসা, এটি রাজনৈতিক কোনো লেনদেন ও স্বার্থের কারণে নয়; বরং এ সম্পর্ক তাদের ধমনীর, যার প্রতিফলন দেখা যায় দেশটির সরকারি পলিসিতেও। 

(টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনটি এমন সময় প্রকাশিত হলো), যখন নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪০ হাজার ফিলিস্তিনিকে দখলদার সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। এর ফলে ইসরাইলের বিপক্ষে বর্তমানে পাকিস্তানিদের আবেগ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে। 

ইসরাইলি গণমাধ্যমে পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন তার সমস্যা আরও ঘনীভূত করবে। আর এটা দিয়ে যে শুধু রাজনৈতিক দলগুলো সুবিধা নেবে- এমন নয়; বরং ইমরান খানের জনপ্রিয়তায়ও বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। 

ইমরান খানকে ফের ক্ষমতায় বসাতে ইসরাইল ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে এরই মধ্যে বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে। আর তাকে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর বানানোর পশ্চিমা যে প্রচেষ্টা, তাও এই তৎপরতারই অংশ। যাতে তাকে অক্সফোর্ডের চ্যান্সেলর বানিয়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা যায় এবং একই সঙ্গে এমন একজন বিশ্বনেতা হিসেবে উপস্থাপন করা যায়, যিনি পাকিস্তানে ‘প্রকৃত’ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন। 

পরে মালালা ইউসুফজাইয়ের মতো ইমরান খানকেও নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে ফের ক্ষমতায় বসিয়ে নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তাকে ব্যবহার করাই পশ্চিমাদের আসল উদ্দেশ্য।

জিও নিউজ উর্দুতে প্রকাশিত মির্জা ইশতিয়াক বেগের কলাম অনুবাদ করেছেন- বেলায়েত হুসাইন

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম