ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরও পরিবারের সঙ্গে ইফতারের সুযোগ দিন
আবু মুহাম্মাদ রেজাউল করীম
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
গতকাল মুহাম্মাদের মা বললেন— একদিন আমাদের সঙ্গে বাসায় ইফতার করেন। বললাম, ইচ্ছে আছে সামনের সপ্তাহে। মা-বাবা, ভাইবোন, ভাগিনা-ভাতিজা, ছেলে, স্ত্রী— সবার সঙ্গে বসে ইফতার করব ইনশাআল্লাহ।
আমি ঢাকাতে ছোট্ট একটি মসজিদে ইমামতি করি। পরিবার থাকে গ্রামে। এবার রমজানে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইফতার করা হয়নি। অবশ্য প্রতি রমজানেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে দুই-তিনবার ইফতার করে থাকি। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে এবার একদিনও করার সুযোগ হয়নি।
গত সপ্তাহে আমাদের মুয়াজ্জিন সাহেবকে বাসায় পাঠিয়েছি বাবা-মাসহ সবার সঙ্গে বসে ইফতার করার জন্য। ইফতার করে আসার পর তিনি উৎফুল্ল আলহামদুলিল্লাহ।
দেশের বিভিন্ন এলাকাতে অনেকেই নানা মন্তব্য করতে পারে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের নিয়ে। যদি তারা নিজেদের মতো করে তাদের ফ্যামিলির মতো ইমাম-খতিব মুয়াজ্জিনের ফ্যামিলির কথাও ভাবত তা হলে তাদের মন্তব্য করা বা গীবত করার প্রবণতা কমে যেত।
মসজিদে যখন ইফতার করি, তখন অনেক মুসল্লিকে ইফতার খেতে বললে মসজিদে বসে মুখভরে বলে দেয়— না! খান আপনারা! বাসায় ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা আছে তো! তাদের সঙ্গেই করতে হয়। খেয়েছি, আপনারা খান!
তাদের ছেলেসন্তান সব আছে বুঝলাম; কিন্তু দেশের সব ইমাম-মুয়াজ্জিনের স্ত্রী-সন্তান কি নেই? তা হলে রমজানে কেন তাদের পরিবারের সাথে ইফতারের সুযোগ আমরা দিই না? এটি সমাজের একটি জুলুমি সংস্কৃতি, যা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে।
আমি আলহামদুলিল্লাহ প্রতি রমজানে কমপক্ষে দুদিন হলেও পরিবারের সাথে ইফতার করি। তাতে পরিবারের মন ভালো থাকে। মুসল্লিদের কেউ সমালোচনা করলেও আমার কিছু যায় আসে না। কারণ এটা তার বুঝের ভুল যে, ইমাম সাহেব অনুপস্থিত কেন? তার বুঝের অভাবের কারণে তো আমি পরিবারের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারি না!
দেশের সব মহল্লার মুসল্লিদের করণীয় হলো— ইমাম-মুয়াজ্জিনকে তাদের পরিবারের সঙ্গে ইফতার করার সুযোগ করে দেওয়া। প্রয়োজনে রমজানেও তাদের দুই-একদিন ছুটি দিন। রমজানে আলাদা ডিউটির তো কিছুই নেই।
রমজানে এবং রমজানের বাহিরেও ৫ ওয়াক্ত নামাজই তো! তা হলে রমজানের বাহিরে ছুটি কাটাইতে পারলে রমজানে তো আরও ভালোভাবে ছুটি কাটাতে পারার কথা। কারণ এ মাসে প্রায় মসজিদে সহযোগী একাধিক হাফেজ থাকেন। যারা ইমাম-মুয়াজ্জিনের বদলে নামাজ-আজান চালিয়ে নিতে পারবে।
আমরা সেসব ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কথাই বলছি, যাদের পরিবার তাদের কর্মস্থল থেকে দূরে বসবাস করে।
আসুন, ধারণা বদলাই। মসজিদের দায়িত্বশীলদের যথাযথ হক এবং সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করি। কারণ তাদেরও পরিবার রয়েছে। তারা এ সমাজেরই একটি অংশ।
লেখক: নগর গণপূর্ত অধিদপ্তর মসজিদের ইমাম