Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়তে হবে 

Icon

হাসান আল বান্না

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২১ পিএম

শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়তে হবে 

শিক্ষা খাতে নানা সমস্যা। বই প্রকাশে ভুল, ভুল করে প্রচ্ছদে প্রতিমার ছবি ছাপানো, পাঠ্যপুস্তকে অপ্রত্যাশিত বিষয়াদি সংযোজন করাসহ নানা বিষয়েই বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু সেসব বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা নয়। 

আজ বলতে চাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নানামুখী হওয়ার কারণে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তা কোনো জাতির জন্য মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়। আমাদের শিক্ষার্থীদের একটি বিরাট অংশ পড়াশোনা করছে বড় হলে ভালো চাকরি করবে, জীবনযাপন সুন্দরভাবে করবে। কিন্তু আমাদের শিশুদের একটি অংশ যে সন্ত্রাসী হয়ে উঠছে, খুনিও হয়ে উঠছে তার জন্য কি আমরা সমাজ ব্যবস্থাকে দায়ী করব নাকি, শিক্ষা ব্যবস্থাকে? 

যেমন আমাদের অতি পরিচিত একটি শব্দ হচ্ছে কিশোর গ্যাং, এটা কি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একেবাইে যায়নি? পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যাকারী সন্তান ঐশী কি শিক্ষার্থী ছিলেন না? তাহলে শিশু শিক্ষার্থীরা কেন এমন জঘন্য কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন। এ নিয়ে কি কোনো গবেষণা হচ্ছে। কেউ এ নিয়ে ভাবছেন না। শিক্ষিত হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ার পরও কেন শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঘুস ও দুর্নীতি ছাড়ছেন না। 

আমাদের সমাজের দরিদ্র ও স্বল্প শিক্ষিত লোকদের পক্ষে অনিয়ম ও দুর্নীতি করার কোনো সুযোগ কি আদৌ আছে? যদি না থাকে তাহলে ঘুস বাণিজ্য ও দুর্নীতি যারা করেন তারা অবশ্যই শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত। এই শিক্ষিত লোকদের ঘুস-দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে হলে শিক্ষা খাতে নানা দিক থেকে সংস্কার করতে হবে। ..

দেশের অনেক ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। একধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে ইংরেজি মাধ্যমের। এক ধরনের রয়েছে আরবি এবং এক ধরনের বাংলা মাধ্যমের। কোনো কোনো ধর্মের গুরুরা ধর্মভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। যে যে ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই গড়ে তুলুন না কেন কারিকুলামের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সেটি হচ্ছে শিক্ষার্থীরা যাতে ভুলেও ঘুস-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত না হয় সেজন্য শিশুকাল থেকেই সিলেবাসে বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

আমাদের শিক্ষার্থীদের আলু ভর্তা কিভাবে বানাতে হবে তা শেখানো বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই, অথচ পাঠ্যবইয়ে তাই শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেনশনে থাকা অভিভাবকরা সব সময়ই বলে আসছে শিক্ষার্থীদের প্রতিটি ক্লাসে বাধ্যতামূলক অন্তত ২০০ মার্কের ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা থাকা একান্তই আবশ্যক। যাকে একজন শিশু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ম ও নৈতিকতা শিখে যায়। 

যে শিশুটি যে ধর্ম শিখতে আগ্রহী তাকে সেই ধর্ম শেখার সুযোগও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, যার যার ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী তিনি চলবেন, তবে সব ধর্মই মানুষকে সৎ ও নৈতিকতা শেখায়, বর্বরতা শেখায় না। যদি এমনটি যায় তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা ক্রমেই শুণ্যের কোঠায় নেমে আসবে। অন্যদিকে কর্মজীবনে গিয়ে এসব শিক্ষার্থীরা ঘুস খাবে না, জড়াবে না দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে। 

এছাড়াও বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা নানামুখী হওয়ার কারণে লেজেগোবরে অবস্থা। চরম সমন্বয়হীনতার কারণে ন্যাশনাল কারিকুলাম, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং ইংরেজি মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এখন আর মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের সন্তানেরা লেখা পড়া করে না। কেবলমাত্র নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের সন্তানেরাই সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে। ফলে, যে সামাজিক বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে তা ভবিষ্যতে জাতির জন্য মঙ্গলজনক তো নয়ই বরং ভয়ংকর! 

ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলো ব্রিটিশ কারিকুলাম অনুসরণ করলেও কেবলমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে আমাদের শিশুরা ব্রিটিশ শিশুদের চেয়েও একাডেমিক্যালি ২ বছর পিছিয়ে থাকছে। একটি জাতির উন্নয়নের পথে এটি একটি বড় বাধা। বিদেশে এবং দেশেও উচ্চশিক্ষায় সুফুল পেতে হলে সমন্বিত কারিকুলাম প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। বিদেশি কারিকুলামের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন দেশীয় কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে।

যাতে করে বাংলাদেশের শিক্ষা উন্নত দেশগুলোতে গ্রহণযোগ্য হয়। আর এটি করা তেমন কোনো কঠিন কাজ নয়। শিশুদের শিক্ষা জীবনের দুই বছর সাশ্রয় করার জন্য সরকারি নির্দেশনা প্রয়োজন। হাইকোর্টের আদেশ থাকা সত্ত্বেও বাচ্চাদের এখনো ভারী ব্যাগ বহন করতে হচ্ছে। এর থেকে শিশুদের মুক্ত করতে একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট, এজন্য ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন হবে না। দরকার শুধু সদিচ্ছা এবং সঠিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ। 

আমরা দেখতে পাচ্ছি, উচ্চ শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে কিন্তু প্রকৃত ফলাফল আসছে না। এর পেছনেও প্রধান কারণ পদ্ধতিগত ত্রুটি। বই এবং মুখস্থ বিদ্যানির্ভর উচ্চশিক্ষা বর্তমানে বাংলাদেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও প্রচলিত নেই। এক সময় যেসব দেশের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আসত সেসব দেশও এখন আমাদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। প্রকৃত পক্ষে উচ্চশিক্ষা হওয়া উচিত গবেষণাধর্মী, অ্যানালিটিক্যাল এবং অধিকতর ব্যবহারিক অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রি ওরিয়েন্টেড।

দেশের বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে শিক্ষণ-শিখনের দুর্বল মান, শেখানোর ক্ষেত্রে যত্নের অভাব শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা বিদ্যালয় পরিচালনার মৌলিক বিষয়সমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কর্মোদ্যোগ খুব কমই লক্ষ্য করা গেছে। তাছাড়া শিক্ষকদের একটি অংশ শিক্ষার্থীদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার মনসিকতা ছেড়ে শুধু চাকরি করছেন। এরকম আরও নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষা খাত। 

লেখক: হাসান আল বান্না, সাংবাদিক ও কলামিস্ট

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম