ভ্রূণের ভেতরে আরেক ভ্রূণ, কেন এমনটি হয় জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা

যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৫৭ পিএম

অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভে যে ভ্রূণ বড় হচ্ছে, তার ভেতরে রয়েছে আরও একটি ভ্রূণ। সম্প্রতি ভারতের মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার সরকারি হাসপাতালে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে এসেছিলেন ৯ মাসের এক অন্তঃসত্ত্বা। তার জীবনেই ঘটেছে এমন এক বিস্ময়কর ঘটনা।
যদিও সেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এমন ঘটনা বিরল হলেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে ‘ফিটাস ইন ফিটু’ বলা হয়ে থাকে।
কিন্তু কেন এমনটি হয়? কারা এই বিরল পরিস্থিতির স্বীকার হতে পারেন জেনে নিন?
‘ফিটাস ইন ফিটু’ বা অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভে যে ভ্রূণ বড় হচ্ছে, তার ভেতর আরেকটি ভ্রূণের বেড়ে ওঠা! শুনলে অবাক হওয়ার কথাই। বিশ্বে এখন পর্যন্ত এমন ঘটনার নজির রয়েছে মাত্র ২০০টি। এর মধ্যে ভারতে রয়েছে ১৫ থেকে ২০টি।
এ বিষয়ে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, আসলে ভ্রূণের পেট বা পাকস্থলীর ভেতরে নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভ্রূণটি প্রোথিত হয় আসল ভ্রূণ বা মায়ের গর্ভে। যে ভ্রূণটি বেড়ে উঠছে তার নাড়িভুঁড়ি বা পাকস্থলীর দেয়ালে। আল্ট্রাসাউন্ডে যা দেখলে মনে হয় দ্বিতীয় ভ্রুণটি প্রথমটির পেটের ভেতরে রয়েছে। আমরা যেটিকে ‘ফিটু’ বা দ্বিতীয় ভ্রূণ বলে দিচ্ছি, তা আসলে রক্তপিণ্ড।
এমন পরিস্থিতি কখন হতে পারে? সে বিষয়ে চিকিৎসক মল্লিনাথ জানিয়েছেন, ফ্যালোপিয়ান টিউবে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনে তৈরি হয় নতুন একটি কোষ। তারপর কোষটি প্রতিস্থাপিত হয় জরায়ুতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই কোষ বা জাইগোট ক্রমশ বিভাজিত হতে থাকে। ভ্রূণের গঠনেও ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভে যমজ ভ্রূণ থাকলে অনেক সময়ে এমনটি হতে পারে। কোষ ক্রমশ বিভাজন প্রক্রিয়ার সময়ে কোনোভাবে একটি বড় কোষের ভেতর আরেকটি ছোট কোষ প্রবেশ করে যায়। সেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত। স্বাভাবিক নিয়মে নির্দিষ্ট সময়ে বড় কোষটি ভ্রূণের আকার নিতে শুরু করে। কিন্তু ছোট কোষ বা জাইগোটটি বড়টির ভেতরে থেকে যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আসল ভ্রূণটি বড় হতে থাকে। কিন্তু ভেতরে থাকা কোষটি আদৌ ভ্রূণের আকার নেবে কিনা, তা আগে থেকে বলা মুশকিল বলে জানান চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়।
মহারাষ্ট্রের বুলধানা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলেছেন, এ ধরনের সমস্যায় অন্তঃসত্ত্বার বিশেষ কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। শারীরিক তেমন কোনো সমস্যা না থাকলে হবু মা স্বাভাবিকভাবেই সন্তান প্রসব করতে পারেন। তবে প্রসব করার পর সদ্যোজাতের শারীরিক অবস্থা কেমন থাকে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর রাখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, এই পরিস্থিতিতে ৯ মাস ধরে মায়ের গর্ভে যে ভ্রূণটি আসলে বেড়ে উঠল, দেখতে হবে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার গঠনগত কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে দ্রুত অস্ত্রোপচার করে সদ্যোজাতটির পেট থেকে অবাঞ্ছিত কোষটি বের করে ফেলাই বাঞ্ছনীয়।