Logo
Logo
×

চিত্র বিচিত্র

সঙ্গীর বিরহে শোক পালন করে প্রাণীরাও

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:০২ পিএম

সঙ্গীর বিরহে শোক পালন করে প্রাণীরাও

প্রিয়জনের বিরহে শুধু মানুষই শোক পালন করে এমনটি নয়। সঙ্গীর প্রতি ভালোবাসা বা শোক পালন করে প্রাণীরাও। সঙ্গী হারানোর যন্ত্রণায় অশ্রু ফেলে তারাও। হয়ে পড়ে উদাসীন। হোক সেটা বিচ্ছেদ অথবা মৃত্যু। 

ঘাতক তিমি থেকে শুরু করে কাক, বেশ কিছু প্রাণীর মধ্যেই দেখা গেছে এই বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে হাতি, ডলফিন, বানর, শিম্পাঞ্জি, পেঙ্গুইন, নেকড়ে ও কুকুরের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিবিসি। 

সম্প্রতি এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী হয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেটের একটি উপকূলের মানুষ। সৈকতের কাছেই চোখে পড়ে এক মা অর্কা (এক জাতীয় তিমি) তার মৃত নবজাতক সন্তানকে ক্রমাগত ঠেলে নিয়ে চলছে। এর আগেও এই জাতীয় তিমিকে একইভাবে শোক পালন করতে দেখেছিলেন সেন্টার ফর হোয়েল রিসার্চের কর্মকর্তারা। তবে তিমিই যে একমাত্র প্রজাতি যারা নিজেদের মৃত সন্তানের দেহ বহন করে শোক পালন করে, এমনটা নয়। 

২০২১ সালে এডিনবার্গের চিড়িয়াখানার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, সেখানকার এক শিম্পাঞ্জি মৃত শিশুর জন্ম দেয়। সে তার মৃত সন্তানকে ছাড়তেও চায়নি। এজন্য চিড়িয়াখানার ভেতরেই সন্তানের মৃতদেহ কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল সে। বুদ্ধিমান হিসেবে বিবেচিত স্তন্যপায়ী প্রাণী ডলফিন ও বানরকেও একই ধরনের আচরণ করতে দেখা গেছে। মৃতদের দেহ যেখানে থাকে সেই স্থান বরাবর পরিদর্শন করতে আসে হাতিরা। কঙ্কালের পাশে দীর্ঘ সময় ধরে এমনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে যেন দেহাবশেষকে পাহারার দিচ্ছে তারা। কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলসফি অব কগনিটিভ সায়েন্সের বিশেষজ্ঞ গবেষক বেকি মিলার ব্যাখ্যা করেছেন, প্রাণীদের এই আচরণকে শোকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার না করতে পারাটা কঠিন। মানুষ হিসেবে আমরা যখন কাছের কাউকে হারাই তখন যে কোনোভাবেই তাকে আঁকড়ে থাকতে চাই। প্রিয়জনের সঙ্গে বন্ধনটা ধরে রাখার যে আকুতি মূলত এটাই এখানে স্পষ্ট হয়।

নিকটজনকে হারানোর পর প্রাণীদের তীব্র যন্ত্রণা প্রকাশের অনেক কাহিনী রয়েছে। নৃতত্ত্ববিদ বারবারা কিং তার বই ‘হাও অ্যানিমালস গ্রিভ’-এ ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে বিড়াল, কুকুর ও খরগোশরা প্রিয়জনের মৃত্যুর পর কান্নাকাটি করে এবং মৃতদের খুঁজতে থাকে। শুধু পশু নয়, পাখিরাও দুঃখ পায়। অস্ট্রিয়ান প্রাণিবিদ কনরাড লরেঞ্জ বর্ণনা করেছেন, সঙ্গী হারানোর পর গ্রেল্যাগ গিজ বা ধূসর রাজহাঁসের মধ্যে যে আচরণ দেখা যায় তা অনেকটা শোকসন্তপ্ত মানুষের আচরণের মতোই। অনেক সময় তারা খাবারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং চারপাশের জগতের প্রতি উদাসীনও হয়ে যায়।

শুধু চোখের দেখাই নয়, গবেষণাতেও দেখা গেছে, প্রাণীরা দুঃখের মতো আবেগ অনুভব করে। ল্যাবরেটরির গবেষণায় দেখা গেছে, মায়ের আকস্মিক মৃত্যুর পর শিশু প্রাইমেটরা (বানর, শিম্পাঞ্জির মতো স্তন্যপায়ী প্রাণী) হাহাকার বা কান্নাকাটি করে। তারা পারিপার্শ্বিক পৃথিবী থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অন্যদের সঙ্গে আর খেলাধুলা করে না। নতুন কোনো জিনিস দেখলে তা এড়িয়ে যায় এবং নিজের মধ্যেই কুকড়ে থাকে। স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গে গ্রেফায়ার্স ববি নামে টেরিয়ার প্রজাতির এক কুকুর তার মালিকের কবর রক্ষা করে ১৪ বছর কাটিয়েছিল। জাপানে মালিকের মৃত্যুর পরও দিনের পর দিন তার জন্য এক রেল স্টেশনে বসে অপেক্ষা করতো আকিতা প্রজাতির কুকুর হাচিকো। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম