অভিশংসন শুনানিতে ডেমোক্র্যাট প্রসিকিউটর
‘ট্রাম্প সেদিন কংগ্রেসম্যানদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন’
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০১:০৭ এএম
ছবি: আল জাজিরা
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন বিচারে চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছেন ডেমোক্র্যাট প্রসিকিউটররা।
৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার ছবি ও ভিডিওসহ নতুন সব তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তারা।
স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে মার্কিন সিনেটের প্রবীণতম সদস্য প্যাট্রিক লেহির সভাপতিত্বে অভিশংসন আদালতের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়।
এ সময় তথ্যপ্রমাণ দিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রসিকিউটরা ট্রাম্পকে ওই হামলার প্রধান উস্কানিদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা ট্রাম্পকে ওই হামলার জন্য সরাসরি দায়ী করেন।
প্রসিকিউটর দাবি করেন, ট্রাম্প সেদিন হামলাকারীদের উস্কে দিয়ে কংগ্রেস সদস্যদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন। খবর বিবিসি ও আল জাজিরার।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাট প্রসিকিউটর স্ট্যাসি প্লাকেট তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে বলেন, পরাজিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বেচ্ছায় এই সহিসংসতাকে উৎসাহিত করেছেন। এই কাজে রিপাবলিকান দলের জ্যেষ্ঠ নেতারাও তাকে সহায়তা করে। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে উস্কানির জন্য দোষারোপ করেন এই ডেমোক্র্যাট প্রসিকিউটর।
অভিশংসন আদালতে এ সময় আগে দেখা যায়নি এমন ছবি-ভিডিও চিত্রের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রেকর্ড উপস্থাপন করে ক্যাপিটল হিলে হামলার ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে।
গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার ঘটনায় ট্রাম্প তার সমর্থকদের উসকে দিয়েছেন-এমন অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও ট্রাম্প বরাবরই বলে আসছেন হামলার ঘটনায় তার কোনো দায় নেই।
তার আইনজীবী দলও বলছেন, হোয়াইট হাউজ ছাড়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্টকে বিচারের মুখোমুখি করা যায় না। তবে ডেমোক্র্যাটরা সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার’ অভিযোগ এনে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
যদিও এই শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ট্রাম্প।
সিনেট কক্ষে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ভোটের দিনটি শুরু হয়। অভিশংসন বিচারে কৌঁসুলির দায়িত্বপালনকারী ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা একটি গ্রাফিক ভিডিওর মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেন।
ভিডিওতে ক্যাপিটলে সহিংসতার ছবি ও দাঙ্গার কিছুক্ষণ আগে একদল সমর্থকের উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের দেওয়া ভাষণের ক্লিপ তুলে ধরা হয়।
ক্লিপে দেখা যায়, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনী পরাজয় উল্টে দেওয়ার জন্য ট্রাম্প সমর্থকদের লড়াই করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
জুরি সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালনকারী সিনেটররা দেখেন, ট্রাম্পের অনুসারীরা ক্যাপিটলে গিয়ে প্রতিবন্ধকগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের আঘাত করছেন।
ভিডিওতে ওই দৃশ্যটিও ছিল যখন পুলিশ প্রতিনিধি পরিষদ কক্ষটি পাহারা দিচ্ছে এবং হামলকারী আশলি বাবিটকে গুলি করছে; এই দাঙ্গায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ যে পাঁচ জন মারা গেছেন বাবিট তাদের একজন।
প্রসিকিউশন দলের অন্যান্য সদস্যও তাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে ভিডিও চিত্র, ট্রাম্পের টুইট বার্তা, ক্যাপিটল পুলিশের গোপন নিরাপত্তা বার্তাসহ ট্রাম্পের উগ্র সমর্থকদের তাণ্ডবের তথ্য স্লাইড শোতে প্রদর্শন করেন।
আদালতের দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমে প্রধানত ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের আইনপ্রণেতাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে বলা হয়।
একই সঙ্গে বলা হয়, তিনি দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি ভাইস প্রেসিডেন্টের জীবনকেও বিপন্ন করে তুলেছিলেন।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ট্রাম্প অনেক আগে থেকেই লোকজনকে প্রস্তুত করে আসছিলেন। আর তার চূড়ান্ত পরিণতিতেই ক্যাপিটল হিলে হামলা হয়।
এই হামলার দায় ট্রাম্পের বলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে বলা হয়। এসব বিষয় প্রমাণ করার জন্য ট্রাম্পের টুইটসহ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়।
প্রসিকিউশন দলের একের পর এক উপস্থাপিত ভিডিও চিত্রে ক্যাপিটল হিলের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা রক্ষার তৎপরতা দেখা গেছে।
প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছে, সহিংসতায় অভিযোগে গ্রেপ্তার লোকজন হলফনামা দিয়ে ঘটনার সঙ্গে তাঁদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন।
মাইক পেন্স ও ন্যান্সি পেলোসিকে হত্যার উদ্দেশ্যে খোঁজ করার কথা তারা জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার শুনানি শুরুর পর ট্রাম্পের আইনজীবীরা দাবি করেন, সাবেক হয়ে যাওয়ায় ট্রাম্পকে বিচারের মুখোমুখি করা অসাংবিধানিক।
কিন্তু ৫৬-৪৪ ভোটে বিচার প্রক্রিয়া চালানোর পক্ষে মত দেয় কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ। এর অর্থ হচ্ছে অন্তত ছয়জন রিপাবলিকান সিনেটর ট্রাম্পকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পক্ষে মত দিলেন।
অভিশংসন আদালতের স্থগিত কার্যক্রম স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে আবার শুরু হবে।
ট্রাম্প হলেন একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাঁর বিরুদ্ধে সিনেটে দ্বিতীয় দফা অভিশংসন বিচার চলছে।