সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্নে আপস করতে দেখিনি: অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
যমুনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম ভাইয়ের আরও কিছুদিন বেঁচে থাকাটা বড় বেশি প্রয়োজন ছিল। তার সঙ্গে আমার পরিচয় আরও তিন দশক আগে। তিনি আশির দশকে নাটোরের সুগার মিলের পাশে যমুনা ডিস্টিলারি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময়ে ঢাকা থেকে নাটোরের যোগাযোগব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না, তাই তিনি নাটোরে খুব কমই যেতেন। কিন্তু তার পরিবারের অন্য সদস্যরা এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন, যাদের মাধ্যমেই নুরুল ইসালম ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম যোগাযোগ বা পরিচয় হয়েছিল। একসময় আমাদের সম্পর্কটা কাছাকাছি চলে আসে, ঘুচে যায় সামাজিকতার দূরত্ব, বয়সের ব্যবধান। কী অবলীলায় তিনি আমার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার আসনে সমাসীন হয়ে যান, আমি বুঝতেও পারিনি। পড়ন্ত বিকালে অফিসে কাজের চাপ কমে এলে অনেক গল্পই করতেন। ৪৬ বছরে ৪১টি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে যেমন এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন, তেমনই পরিচ্ছন্ন শিল্পপতি হিসাবে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। তিনি কোনো ব্যাংকের টাকা মেরে দেননি, কোনো ব্যাংকে তার এক টাকাও খেলাপি ঋণ ছিল না। একজন দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী হিসাবে তার সব অর্থ, মেধা ও পরিশ্রম দেশেই বিনিয়োগ করেছেন। তিনি খেলাপি ঋণ এবং বিদেশে টাকা পাচারের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি অতীতকে ভিত্তি করে অপূর্ব সুন্দর করে ভবিষ্যতের স্বপ্ন রচনা করতে পারতেন। আমি দেখেছি ওই সময়ে তার অফিসের ওয়েটিং রুমে অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন, তার সঙ্গে একটু খোশগল্প করার জন্য মুখিয়ে থাকতেন। যারা পরে এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন এবং এখনো তাদের বেশির ভাগই জীবিত আছেন। পরবর্তীকালে আমিও এমপি, মন্ত্রী হয়েছি। এ সময়ে অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটেছে; কিন্তু নুরুল ইসলাম ভাইয়ের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক অক্ষুণ্ন্ন ছিল। ভালো কিংবা খারাপ সময় আমি যেমন তার পাশে ছিলাম, ঠিক তিনিও সব সময় আমার পাশে ছিলেন। তাকে কখনো ভেঙে পড়তে বা সত্য ও ন্যায়ের প্রশ্নে বিচ্যুতির মাধ্যমে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করতে দেখিনি। তার জনকল্যাণমূলক ব্যবসা চিন্তা ও অর্ধলক্ষাধিক লোকের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির মধ্য দিয়ে দেশ এবং জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রবাদ আছে, পৃথিবীতে কিছু মৃত্যু নাকি পাহাড়ের মতো ভারী, আর কিছু মৃত্যু পালকের চেয়ে হালকা হয়। আমার কাছে নুরুল ইসলাম ভাইয়ের মৃত্যু পাহাড়ের মতো ভারী মনে হয়। তার এই অসময়ে চলে যাওয়াটা আমাদের জাতীয় জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াল। স্বপ্ন যার কাছে বাস্তব হয়ে ধরা দিত, তার শূন্যতা এত সহজে পূরণ হওয়ার নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা জনকল্যাণে তার অবদান এ দেশের মানুষ কখনো ভুলতে পারবে না। চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে তার আত্মার মাগফিরাত এবং সেই সঙ্গে তার স্বপ্নের যমুনা গ্রুপের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)