Logo
Logo
×

লাইফ স্টাইল

শুভ্রতা ছড়ানো বঙ্গবন্ধুর জন্মভিটা

Icon

শেখ আবদুর রহিম 

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৩, ০১:৪৩ পিএম

শুভ্রতা ছড়ানো বঙ্গবন্ধুর জন্মভিটা

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা এক সময় মোগল আমলের ঐতিহ্যবাহী ভবনে বসবাস করলেও বংশবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির চারপাশে ঘর তোলেন পরবর্তী প্রজন্ম। বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে টিনের চৌচালা ঘর তোলেন বঙ্গবন্ধুর দাদা শেখ আবদুল হামিদ। বঙ্গবন্ধু এ ঘরেই জন্মগ্রহণ করেন। স্মৃতিবিজড়িত এ ঘরের স্মৃতিচারণে বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বলেন, ‘এ বংশের অনেকেই এখন এ বাড়ির চারপাশে টিনের ঘরে বসবাস করেন। আমি এ টিনের ঘরের এক ঘরেই জন্মগ্রহণ করি। বঙ্গবন্ধুর দাদা সে সময়ে শাল ও সেগুনকাঠ দিয়ে টিনের চৌচালা ঘর নির্মাণ করেন। পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯ মে পাকিস্তানি হানাদাররা ঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। 

যুদ্ধপরবর্তী ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সহোদর শেখ আবু নাসের ওই স্থানে দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। বর্তমানে সাদা রঙের এ বাড়িটি সেই আগের ভিটায় শুভ্রতা ছড়াচ্ছে। বাড়িতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর আর রাজনৈতিক জীবনের গৌরবান্বিত নানা ছবি। এ ছাড়া বাড়ির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতার ব্যবহৃত নানা তৈজসপত্র এখনো বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বহন করে। 

বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া আগমনকালে এ স্মৃতিঘেরা বাড়িতে বিশ্রাম নেন। সাদা এ দালানটিকে দেখভালের জন্য এখনো বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমানের আমলের গৃহকর্মী নির্মল বিশ্বাস রয়েছেন। এর একেবারেই গা ঘেঁষে রয়েছে শেখ পরিবারের পূর্বপুরুষদের সেই বাড়ি। আদি বাড়ির চারপাশে এখনো বেশ কয়েকটি ঘরে বঙ্গবন্ধুর পরিজন বসবাস করছেন।

স্মৃতিধন্য এ বাড়ির সামনে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বাঙালি জাতির মুক্তির নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঘিয়ার নদীর পাড়ে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক কবরস্থান ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এ কমপ্লেক্স। ১৯৯৬ সালের তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। পরে ১৯৯৯ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৭৯তম জন্মবার্ষিকীতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন এ সমাধির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দীর্ঘ দুবছর কাজ শেষে ২০০১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেন। লাল সিরামিক ইট আর সাদা-কালো মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত এ সৌধের কারুকাজে ফুটে উঠেছে বিষাদের চিহ্ন। বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৩৮.৩০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বোর্ডের পরামর্শ মতো এ সমাধিসৌধের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।

শুধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স নয়, এর আশপাশের এলাকায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত অনেক কিছুই দেখার রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, শেখবাড়ি জামে মসজিদ (স্থাপিত ১৮৫৪ সাল) হিজলতলা ঘাট, রকেট স্টিমার ঘাট ও লঞ্চঘাট। মোটকথা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত এসব স্থানে ভ্রমণ করে মুজিবপ্রেমীদের মনে জীবন্ত কিংবদন্তি বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি ধরা দেয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাশেই টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’। সেখানে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীর জন্য রাখা হয়েছে বিশ্রামাগার।

যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকেই গোপালগঞ্জের বাস ধরে টুঙ্গিপাড়া আসা যায়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে টুঙ্গিপাড়া যাওয়া যায়। গুলিস্তান থেকে টুঙ্গিপাড়ার দূরত্ব ১৬৩ কিলোমিটার। গুলিস্তান বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে আসা টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, দোলা, পালকী, ওয়েলকাম, ইমাদ, গোল্ডেন লাইন, সেবা গ্রিন লাইন ও কমফোর্ট লাইন নামের বাসে টুঙ্গিপাড়া যেতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা। প্রতি পনেরো মিনিট পরপর বাস পাওয়া যায়। ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
টুঙ্গিপাড়ায় বাঘিয়া নদীর তীরবর্তী ‘মধুমতী’ নামে পর্যটনের একটি মোটেল আছে। গ্রামীণ প্রাকৃতিক পরিবেশের মাঝে এখানে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। রুম ভাড়া নন-এসি টুইন বেড ১,৩০০ টাকা ও এসি টুইন বেড ২,০০০ টাকা। এ ছাড়া ডরমিটরি বেডে ৪০০ টাকা করে থাকার সুযোগ রয়েছে। ডরমিটরির প্রতি রুমে চারজন করে থাকার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া রাত যাপনের জন্য চাইলে গোপালগঞ্জ শহরেও থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে হোটেল সোহাগ, রোহান, রাজ, জিমি, লুচি, শম্পা, শিমুলসহ বেশকটি হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া গুনতে হবে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম