Logo
Logo
×

বাতায়ন

তরুণ প্রজন্মের জন্য এআই জ্ঞান ও দক্ষতা কেন প্রয়োজন

Icon

ড. শাহ জে মিয়া

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তরুণ প্রজন্মের জন্য এআই জ্ঞান ও দক্ষতা কেন প্রয়োজন

অস্ট্রেলিয়া থেকে

আমি এ যুগের দুই ধরনের তরুণ প্রজন্মের কথা বলছি। জেনারেশন জেড (যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২-এর মধ্যে এবং যারা তাদের বেশিরভাগ কাজ করার জন্য ডিজিটাল মাধ্যমকেই বেছে নেয়) এবং মিলেনিয়াল্স জেনারেশন (জন্ম ১৯৮০ থেকে ১৯৯৭-যে প্রজন্ম ইন্টারনেটের ঊষালগ্নে বড় হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী বহু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী)। এ দুটি প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞানের ভিত্তির জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হবে প্রোগ্রামিং দক্ষতা। তাদের দক্ষতা হতে পারে একটি বা একাধিক প্রোগ্রামিং ভাষার ওপর ভিত্তি করে, যেমন-পাইথন (Python), আর (R), সি++ (C++) এবং জাভাস্ক্রিপ্টের মতো প্রোগ্রামিং প্লাটফর্মে। সব প্রোগ্রামিংয়ের ভাষা যে একজনকেই শিখতে হবে, এমনটা নয়। বরং, কেউ শুধু একটি ভাষার ওপর জোর দিয়ে তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জ্ঞানচর্চা এবং বিভিন্ন ফাংশনের সৃষ্টি ও প্রয়োগ সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারে। এ প্রোগ্রামিং ভাষা সাধারণত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম লিখতে, টেস্ট করতে এবং তার প্রয়োগে ব্যবহৃত হয়। এখানে বলে রাখা ভালো, প্রোগ্রামিং ভাষাগুলোর পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এলগোরিদম ও মডেলগুলো তৈরি এবং ব্যাখ্যা করার জন্য বীজগণিত, ক্যালকুলাস, সম্ভাব্যতা ও পরিসংখ্যান সম্পর্কিত পর্যাপ্ত জ্ঞানও প্রয়োজন। এর সঙ্গে সঙ্গে সুপারভাইজ্ড লার্নিং এবং আনসুপারভাইজড লার্নিং, রিইনফোর্সমেন্ট লার্নিং এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক বোঝা এবং সর্বোচ্চ জ্ঞান রাখার অভ্যাস ও ধারণাগুলো আয়ত্ত করা অপরিহার্য। অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, আমাদের তরুণ প্রজন্ম যদি এ বিষয়গুলোর ওপর যথেষ্ট সময় ব্যয় করে, তাহলে তারা উপকৃত না হয়ে পারে না।

উপরোল্লিখিত এ স্কিলগুলোর সঙ্গে সঙ্গে এটাও অপরিহার্য যে, তরুণ প্রজন্মের ডেটা সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। এ সময়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এ পৃথিবী বিগ ডেটার ওপর ভর করে আছে এবং আমাদের ব্যবসার জগৎ দিন দিন কৃত্রিম বুদ্ধিমতা নির্ভরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এটি ঘটছে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে। এবং তা ঘটছে ডেটা সায়েন্স এবং বি ডেটার জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে। এজন্য ডেটা সায়েন্সের জ্ঞান আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। তাই এখানে বি ডেটা কী তা নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার। এ যুগের বিজ্ঞানীরা বিগ ডেটাকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে ব্যাখা করেছেন। বিগ ডেটাকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীরা ইংরেজিতে ছয়টি v ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলো হলো Volume (পরিমাণ), Variety (বৈচিত্র্য), Velocity (গতিশীলতা), Variability (পরিবর্তনশীলতা), Veracity (সত্যতা) ও Value (মান)।

Volume : এটি বিগ ডেটার প্রধান বৈশিষ্ট্য। বিগ ডেটার ‘বিগ’ শব্দটি দিয়ে মূলত বিপুল পরিমাণ ডেটাকেই বোঝানো হয়। প্রতিদিন সারা বিশ্বে এত পরিমাণ ডেটা তৈরি হয় যে, এর পরিমাণ এখন আর শুধু গিগাবাইটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিমাণ ও সংরক্ষণের জন্য এখন ডেটা গিগাবাইটের সীমা ছড়িয়ে জেটাবাইট, এক্সাবাইট ও ইয়োটাবাইট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। উদাহরণস্বরূপ, এ সময়ে প্রতি মিনিটে শুধু ইউটিউবে সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ ঘণ্টা ভিডিও আপলোড করা হয়ে থাকে।

Variety : এখানে বৈচিত্র্য বলতে, বিগ ডেটা উৎসের ধরনকেই বোঝানো হচ্ছে। কারণ বিগ ডেটা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে-কাঠামোগত, আধা-কাঠামোগত এবং কাঠামোগত নয়। আজকের বিশ্বে প্রচুর পরিমাণে যে বিগ ডেটা তৈরি হয়, তা হলো সাধারণত অকাঠামোগত ডেটা, যেমন-অডিও ফাইল, ভিডিও, ছবি, টেক্সট ফাইল ইত্যাদি।

Velocity : গতিশীলতা বলতে যেটা বোঝায় সেটা হলো, এখানে বিগ ডেটা কত দ্রুত গতিতে প্রক্রিয়াজাত ও অ্যাক্সেস করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও, অডিও ফাইল এবং প্রতি সেকেন্ডে হাজার হাজার আপলোড করা ছবি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অ্যাক্সেসযোগ্য হওয়ার প্রয়োজনীয়তা।

Variability : পরিবর্তনশীলতা বৈচিত্র্য থেকে আলাদা। এটি এমন বিগ ডেটার ধরনকে বোঝায়, যা ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। পরিবর্তনশীলতা মূলত কাঁচা ডেটার সঠিক অর্থ বোঝা এবং প্রতিদিনের তৈরি ডেটার সময়সাপেক্ষ ব্যাখ্যা করার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। যদি ডেটা ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়, তাহলে এটি বিগ ডেটার মানের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

Varacity : যদি বিগ ডেটা সঠিকভাবে উপস্থাপন করা না হয়, তবে এটি কোনো কাজে আসবে না। এবং এখানে বিগ ডেটার সত্যতা ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তা চলে আসে। এটি বিগ ডেটার বিশ্বাসযোগ্যতা বা গুণগত মান নির্ণয়ের একটি দরকারি অন্তর্দৃষ্টি অর্জনের প্রক্রিয়া।

সবশেষে, Value : ব্যবহারকারীরা যদি বিগ ডেটা সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করে, তাহলে এটি তাদের সঠিক মূল্য নির্ধারণে সহায়তা করবে। এ প্রজন্মের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এসব বিগ ডেটার জ্ঞান না থাকলে কোনোভাবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞান সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।

আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বিগ ডেটার দক্ষতা ও জ্ঞান তরুণ প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। কারণ অনেক আন্তর্জাতিক ও জাতীয় প্রতিষ্ঠান ডেটা ও প্রক্রিয়াকরণ স্থানান্তরের (Data Migration) মাধ্যমে তাদের সিস্টেমস পুনর্গঠন করবে। তাই তাদের এক্ষেত্রে দক্ষতা ও সক্ষমতার প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের বিদ্যমান সিস্টেমগুলোকে আরও স্মার্ট ও স্বায়ত্তশাসিত করা বা মানুষের হস্তক্ষেপ কমানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রে পরোক্ষ ইনজেকশন প্রোগ্রাম এবং প্লাগ-ইন ফাংশনের প্রয়োজন হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বিভিন্ন স্কিলস যেমন-ডেটা সংগ্রহ, পরিষ্কার এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মতো টুলস ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেমগুলো তৈরি করতে বিগ ডেটা ব্যবহার করে ট্রেনিং ও টেস্টিং করা অপরিহার্য, যেটা কিনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল ডেভেলপ করার পূর্বশর্ত। সেই সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল ডেভেলপ করতে সবসময় বা যখন যে প্লাটফর্ম দরকার, তাতে দক্ষতা থাকতে হবে। যেমন-জুপিটার নোটবুক, টেনসরফ্লো, পাইটর্চ ও স্কিট-লার্নের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে পরিচয় থাকতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ শুরু করার আগে এ প্রজন্মকে দায়িত্বশীলভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা, পক্ষপাতিত্ব এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সামাজিক প্রভাব সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। নতুনদের জন্য জটিল ধারণাগুলোকে সহজ করে ব্যাখ্যা করতে হবে, যাতে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে সুন্দর করে বুঝতে, তৈরি করতে এবং ব্যবহার করতে পারে।

শিক্ষানবিশ হিসাবে আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা জ্ঞান কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খাতে প্রয়োগ করার মতো অন্তর্দৃষ্টি তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য একটি সুখবর এসেছে। গ্রামীণ ইন্টারনেট সেবা আরও সহজলভ্য করার জন্য আমেরিকার স্টারলিংক কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এ সম্পর্কের ভিত্তি হলো স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদানে গতিশীলতা নিয়ে আসা, যার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ শক্তিশালী ডেটা অ্যাক্সেস পেতে পারে। আমাদের তরুণ সমাজ এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত ইন্টারনেট-সক্ষম অ্যাপ্লিকেশনগুলো তৈরি করতে এবং বাজারজাত করতে প্রয়োজনীয় আউটসোর্সিংয়ের পদ্ধতি নিয়ে কাজ করতে পারে। এখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপরোল্লিখিত জ্ঞান এবং বিগ ডেটা জ্ঞান তাদের খুবই কাজে দেবে। যদি এটি ঘটানো সম্ভব হয়, তাহলে স্যাটেলাইটভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইন এবং এর স্থাপনা ও ব্যবস্থাপনায় আমাদের বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা হবে। আমাদের দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিমান চলাচল, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, কৃষি ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার জন্য একটি স্যাটেলাইট স্থাপন করা হয়েছে। স্যাটেলাইটটির ব্যবস্থাপনা এবং এর প্রয়োগের ব্যাপ্তি আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অজানা। কিন্তু আমাদের এ প্রজন্ম বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইনোভেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইনার মাধ্যমে এ স্যাটেলাইটের ব্যবহার বহুগুণে বাড়িয়ে দেশের জন্য রেমিট্যান্স আয় করতে পারে। এসব স্যাটেলাইট অ্যাপ্লিকেশন যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে অন্যসব মাধ্যমে (যেমন-কৃষি ব্যবস্থাপনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, বিমান চলাচল, মিলিটারি এবং সার্বিক নিরাপত্তায়) এশিয়া মহাদেশে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে। আমাদের প্রজন্মই হতে পারে এর চালিকাশক্তি। বিভিন্ন বহুজাতিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য আমাদের তরুণ প্রজন্ম অবস্থানভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইন করতে পারে, যা এশিয়া অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ব্যবহারকারীকে পরিষেবা প্রদানে সক্ষম হবে। আমাদের তরুণ ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত স্যাটেলাইট অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ব্যবসায়িক সেবা দিতে সক্ষম হবে। আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকেই পরিচালনা করবে, যেখানে তাদের গ্রাহক হবে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার মতো পার্শ্ববর্তী দেশের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গ্রাহক পরিষেবাগুলোর মধ্যে থাকতে পারে সিভিল এভিয়েশন, মিলিটারির মতো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো। আমাদের এ তরুণ প্রজন্মের কর্মক্ষমতা, ইনোভেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জ্ঞান তাদেরকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রথম সারির মর্যাদায় নিয়ে আসবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক স্যাটেলাইটচালিত সিস্টেমসগুলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য বিশ্বব্যাপী অনন্য বাজার তৈরি করবে।

এখন আসা যাক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষা-প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা-ব্যবস্থায় কীভাবে সংযুক্ত করা যেতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাধারণ ব্যবহারগুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া যেতে পারে। এ প্রযুক্তিকে কিভাবে ট্র্যাডিশনাল আইসিটিকে মানুষের অনুকরণীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় এবং কেন তা প্রয়োজনীয়, এর ভালো ও খারাপ দিকগুলো কী কী, কিভাবে এ প্রযুক্তি সমাজের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায় বা যেতে পারে। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত নৈতিকতা শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে ছোট পরিসরে কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত অ্যাপ্লিকেশন তৈরি ও প্রয়োগের জ্ঞান লাভ করতে পারে। এ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রজেক্টগুলোকে স্কুলের আইসিটি শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ব্যবহারিক শিক্ষা প্রদানের অংশ হিসাবে দেখা যেতে পারে। এছাড়াও শিক্ষা প্রদানের সহযোগিতার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে রোবটের প্রয়োগ উন্নত দেশগুলোতে বহুল প্রচলিত। যেমন, কোনো শিশুই যাতে পিছিয়ে না থাকে, সেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত রোবট শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত শেখার গতি ও শৈলীর সঙ্গে পাঠগুলোকে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করতে পারে। ইন্টারেক্টিভ লার্নিং টুলস বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক গেম এবং অ্যাপগুলো গণিত, বিজ্ঞান ও ভাষার মতো বিষয়গুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত অনুবাদ এবং ভয়েস রিকগনিশন টুলস শিক্ষার্থীদের ইংরেজির পাশাপাশি তাদের মাতৃভাষায় শেখাতে সাহায্য করতে পারে।

দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণাকেন্দ্র চালু করা খুবই জরুরি। সরকারি ও বেসরকারিভাবে এ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণার জন্য সমৃদ্ধ ফান্ড তৈরি করতে হবে, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় পাঠগুলো সংযোজন করতে হবে। দেশে-বিদেশে অবস্থিত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিক্ষক ও গবেষক দ্বারা শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সদয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণা সহায়তা যেমন-বিভিন্ন ডেটা বিশ্লেষণ, নমুনা পর্যালোচনা এবং উদ্ভাবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে গবেষণার গতি বৃদ্ধি করা যেতে পারে। এছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত সিস্টেমগুলো শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও আগ্রহ বিশ্লেষণ করে ক্যারিয়ারের পথ এবং উপযুক্ত অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রামগুলোর সুপারিশ করতে পারে। ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মগুলো অভিযোজিত কনটেন্ট ডেলিভারি, স্বয়ংক্রিয় মূল্যায়ন এবং রিয়েল-টাইম প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষাকে উন্নত করতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতি মানুষের জ্ঞান অন্বেষণের আগ্রহ ক্রমবর্ধমান। তাই স্বল্প পরিসরে সরকারি সহযোগিতায় কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোর্স চালু করা এখন সময়ের দাবি। এ কোর্সগুলো হতে পারে পাইথন, মেশিন লার্নিং, কম্পিউটার ভিশন, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) এবং জেনারেটিভ এআই (GenAI)-এর মতো বিষয়গুলোর ওপর। আজকের এ আলোচনার প্রতিটি বিষয় ও উদ্যোগ দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ড. শাহ জে মিয়া : প্রফেসর অফ বিজনেস এনালিটিক্স, নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি, নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম