নিউইয়র্কের চিঠি
হোয়াইট হাউজে ইলন মাস্ক

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

টাইম ম্যাগাজিনের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংখ্যার কভারে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিতর্কিত ব্যবসায়ী ইলন মাস্ককে একটি টেবিলের পেছনে দুপাশে আমেরিকান পতাকা ও প্রেসিডেন্টের পতাকাসহ আসীন দেখানোকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ঐতিহাসিক এ টেবিলটি ১৮৮০র দশকের শেষভাগ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা ব্যবহার করছেন। মাস্ক এর আগেও টাইম ম্যাগাজিনের কভারে এসেছেন, কিন্তু তাতে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তারা তাদের সম্পাদকীয় নীতি, ব্যবসায়িক স্বার্থ ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে বিশ্বের বহু ব্যক্তিত্বকে ম্যাগাজিনের কভারে নিয়ে আসে। কিন্তু চলতি সংখ্যার কভারে মাস্ককে ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্ট হিসাবে দেখানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাকে কি আমেরিকান প্রশাসনের বিকল্প ক্ষমতাধরে পরিণত করা হয়েছে? অথবা মাস্কের এত ক্ষমতার উৎস কী? অধিকাংশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক টাইম ম্যাগাজিনের এ ধরনের কভারকে দায়িত্বহীন ও উসকানিমূলক বলে বর্ণনা করেছেন। গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ‘টাইম’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ফেডারেল চাকরিতে ছাঁটাই, ইউএসএইড বন্ধ, গাজা উপত্যকা নিয়ে তার সম্ভাব্য পরিকল্পনা, যা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্য নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, সবকিছুর ওপর ইলন মাস্কের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। তার ক্ষমতা যে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে, এর পেছনে রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যক্ষ মদদ। ট্রাম্প ছাড়া আর কারও কাছে মাস্ক দায়বদ্ধ নন অথবা তার জবাবদিহিতা শুধু ট্রাম্পের কাছে। কারণ তিনি ট্রাম্পের নির্বাচনি অভিযানে বিপুলভাবে অর্থায়ন করে তার বিজয় নিশ্চিত করেছেন। টাইমের মতে, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলন মাস্কের ভূমিকা ছিল একজন ‘কিংমেকার’র; যিনি ট্রাম্পের নির্বাচনি অভিযানে ২৮৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। এখন ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের প্রবাদতুল্য সিংহাসনের পেছনে প্রকৃত ক্ষমতা মাস্কের। এক অর্থে বলা যায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিকে কিনে নিয়েছেন বিত্তবান ইলন মাস্ক।
ইলন মাস্ক বহুদিন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগের জনবল এবং বিভিন্ন ফেডারেল কর্মসূচি সংকোচনের পক্ষে কথা বলে আসছিলেন এবং ইউএসএআইডিকে একটি ‘অপরাধী সংস্থা’ বলে বর্ণনা করেছেন; ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর মাস্কের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজে নামেন এবং ফেডারেল সরকারের ব্যয় সংকোচনে জনবল ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেন। এর সার্বিক তদারকির দায়িত্বও ইতোমধ্যে ইলন মাস্ককে প্রদান করা হয়েছে প্রেসিডেন্টের এক নির্বাহী আদেশে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ (ডিওজিই) নামে নতুন একটি বিভাগ চালু করে। এ বিভাগের নেতৃত্ব দেবেন ইলন মাস্ক। দ্রুততার সঙ্গে কাজ শুরু করে দিয়েছে এ বিভাগ। ট্রাম্প তার কল্যাণকারী মাস্কের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইলন দারুণ কাজ করছেন। তিনি মারাত্মক সব জালিয়াতি, দুর্নীতি ও অপচয় খুঁজে বের করছেন। আপনারা এরই মধ্যে ইউএসএআইডির ক্ষেত্রে দেখেছেন এবং অন্য সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে ও সরকারের অন্যান্য অংশের ক্ষেত্রেও এ ধরনের আরও উদ্যোগ দেখতে পাবেন। তাকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি চমৎকার জনবল পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ কাজ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।’ অতএব তারা সরকারি বিভাগ, যেমন ফেডারেল শিক্ষা বিভাগ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রশাসনের শিক্ষানবিশ কর্মীদের ছাঁটাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাছাড়া সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত ফেডারেল কর্মচারীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস করারও উদ্যোগ নিয়েছে মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফেশিয়েন্সি’ এবং ইতোমধ্যে তাদের সবেতন প্রশাসনিক ছুটিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কর্মচারী ছাঁটাইয়ে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হচ্ছে, বিপুলসংখ্যক ফেডারেল কর্মচারীকে স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ করার প্রস্তাব। যারা স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ করবেন, তাদের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেতন প্রদান করা হবে। প্রায় ৭৭ হাজার ফেডারেল কর্মচারী এ প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন বলে গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি এত শক্তিশালী, এ আদেশে অন্যান্য সব ফেডারেল এজেন্সি প্রধানকে সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ভবিষ্যৎ নিয়োগ বাতিল, সীমিতকরণ ও নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে ইলন মাস্কের জন্য সৃষ্ট বিভাগকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ফেডারেল বিভাগ যদি নতুন নিয়োগ দিতে চায়, তাহলে ওই বিভাগ থেকে চাকরিচ্যুত কর্মী সংখ্যার প্রতি চারজনের বিপরীতে একজন নতুন জনশক্তি নিয়োগ করা যাবে। এটি হবে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা ইলন মাস্কের ‘ওয়ার্কপ্লেস অপটিমাইজেশন ইনিশিয়েটিভ’ বা কর্মক্ষেত্রকে উন্নততর করার উদ্যোগের অংশ।
টেক বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্কের হাতে এখন অনেক ক্ষমতা। তার ওপর ন্যস্ত নতুন বিভাগটির দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি আমলাদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান সম্পর্কে জানান, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একটি বৃহৎ অনির্বাচিত আমলাতন্ত্রের অধীন থাকবেন কিনা, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যিনি এ কথাগুলো বলেছেন, সেই ইলন মাস্ক স্বয়ং একজন অনির্বাচিত ব্যক্তি। ইতোমধ্যে যারা চাকরি হারিয়েছেন বা ভবিষ্যতে চাকরি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন, তাদের পক্ষ থেকে বেশকিছু মামলা করা হয়েছে এবং ফেডারেল সরকারের জনবল ছাঁটাইয়ে ‘স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ’র প্রস্তাব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। কিন্তু ছাঁটাইসংক্রান্ত ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে এটা স্পষ্ট, বিচার বিভাগের প্রতি ট্রাম্প শ্রদ্ধাশীল নন এবং আদালত দায়েরকৃত মামলাগুলোর রায় দেওয়ার আগেই ট্রাম্প তার আদেশ কার্যকর করার জন্য তার এখতিয়ারে যা আছে, তা সবই করবেন।
১২ ফেব্রুয়ারি পিবিএস নিউজের অনলাইন সংস্করণে লারা ব্যারন লোপেজ তার ‘ইলন মাস্ক’স ইনফ্লুয়েন্স ইন দ্য হোয়াইট হাউজ গ্রোজ অ্যাজ ট্রাম্প হ্যান্ডস হিম মোর পাওয়ার’ শিরোনামে নিবন্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন, ‘কোনো একক বেসরকারি নাগরিক, বিশেষ করে যার বিপুল সম্পদ এবং ওয়েব ব্যবসা প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট ফেডারেল এজেন্সিগুলোর তদারকির অধীনে রয়েছে, এমন একজন ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি বিভাগগুলোর ওপর খবরদারি করার নজিরবিহীন ক্ষমতা ন্যস্ত করা কতটা যৌক্তিক?’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বহু বিলিয়ন ডলারের টেক ও মিডিয়া মোগলকে ট্রাম্প প্রশাসনে যুক্ত করা হয়েছে ফেডারেল আমলাতন্ত্রের ব্যাপক বিস্তৃত সংশ্লিষ্টতাকে ভেঙে ফেলার জন্য, যার মধ্যে রয়েছে-বাজেট কাটছাঁট করা, জনবল কমিয়ে সিভিল সার্ভিসকে পঙ্গু করে ফেলা এবং আমেরিকার প্রেসিডেন্টের অযাচিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, যা অনেক সময় আইনবহির্ভূত হতে পারে, সেগুলোর বাস্তবায়ন প্রতিহত করার সামর্থ্যসম্পন্ন স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা বিনষ্ট করা।
ইলন মাস্ক যেহেতু একজন অতি প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, আমেরিকান কর বিভাগ ও প্রশাসনের সঙ্গে তার স্বার্থের সংঘাত থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এমন একজন ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে বিপুল ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত করে সেই স্বার্থের সংঘাতকে আরও ভয়াবহ রূপ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সমীচীন হয়নি বলে অনেকেই মনে করছেন। আমেরিকান সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিমত ব্যক্ত করা অব্যাহত রয়েছে। যদিও ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সিসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করার পর ট্রাম্প ও মাস্কের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি নতুন বিভাগটিকে এমন ক্ষেত্রগুলোতে হস্তক্ষেপ করার অনুমতি দেবেন না, যেখানে স্বার্থের সংঘাত সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব, তা বিতর্কসাপেক্ষ। ইলন মাস্ক ‘স্পেসএক্স’, ‘টেসলা’ এবং ‘এক্স’ এবং ‘টুইটার’সহ ছয়টি সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করেন।
ফেডারেল সরকার থেকে ইলন মাস্কের সবচেয়ে সুবিধাভোগী দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি হলো, স্পেসশিপ সংস্থা ‘স্পেসএক্স’ এবং অপরটি বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’। গত ৫ বছরে সব মিলিয়ে মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী, ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে। এরই মধ্যে শুধু ২০২৪ সালে সরকার থেকে লাভ করেছে ৩.৮ বিলিয়ন ডলার। এ চুক্তিগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স, নাসা ও জিওফের সঙ্গে। ধারণা করা হয়, প্রতিরক্ষা বিভাগের চুক্তিগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের। এর মধ্যে কিছু প্রকাশ্য, যা গণমাধ্যমগুলো জানতে পারে, কিন্তু যেগুলো ক্লাসিফায়েড, সেগুলোর জন্য কত ব্যয় হয়েছে অর্থাৎ মাস্কের কোম্পানি পেয়েছে, তা দলিলগুলো ডিক্লাসিফায়েড করার পূর্ব পর্যন্ত কখনোই জানা যাবে না। নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টার ক্রিস্টেন গ্রিন্ড বেশ কয়েক বছর ধরে ফেডারেল সরকারের সঙ্গে মাস্কের ব্যবসায়িক লেনদেনের তদন্ত চালিয়ে তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে উত্থাপিত ৩২টি আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এবং সেগুলোর তদন্ত করছে কমপক্ষে ১১টি ফেডারেল এজেন্সি। অবশ্য ইলন মাস্ক তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের চলতি মেয়াদে আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে ইলন মাস্কের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা তো দূরের কথা, তার কোনো সমালোচনকারীও থাকতে পারবে না। যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিনি পছন্দ করেন না, তার মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খড়্গহস্ত হয়েছেন। মাস্ক ফেডারেল চাকরি ও ব্যয় হ্রাসের ক্ষেত্রে যা করছেন, তাতে স্বচ্ছতা নেই বলে প্রশ্ন উঠেছে গণমাধ্যমে এবং ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেছেন, যেসব ডিপার্টমেন্ট ও এজেন্সিতে তরুণ কর্মীরা তার আদেশ পালন করেছেন, তাদের জন্য গোপনীয়তা প্রয়োজন। অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেটের নতুন প্রধান রাসেল ভট বলেছেন, আমরা চাই, আমলাদের ওপর এখন যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, তাতে তারা অনুভব করছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ বোধ বিদ্যমান ও নতুন আমলাদের সতর্ক করবে, যাতে তাদের কর্মক্ষেত্রে খলনায়ক হিসাবে দেখা না হয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্ক কি তাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে আমলাতন্ত্রকে আসলেই পঙ্গু করে দেবেন?
১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউএসএআইডি ১৩০টি দেশে কর্মরত ছিল এবং তারা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার বা আমেরিকার বার্ষিক বাজেটের ১ শতাংশ অর্থের ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করছিল। ইউএসএআইডিতে কর্মরত ছিলেন প্রায় ১০ হাজার কর্মী। ইলন মাস্ক এ প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ‘অপরাধী সংস্থা’ বলে অভিযুক্ত করে বলেছেন, এখন এটির মরে যাওয়ার সময় হয়েছে। অতএব, ট্রাম্প ৬ দশকের বেশি সময় ধরে দেশে দেশে ক্ষুধা দূরীকরণ, শিক্ষায় অর্থায়ন এবং মহামারি নির্মূলে কাজ করে আসছিল। এ প্রতিষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘোষণা ট্রাম্প-মাস্ক জুটির অস্বাভাবিক কোনো উদ্যোগ নয়। ট্রাম্প দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের খাদ্য ও চিকিৎসা সুবিধা তহবিলের বিপুল পরিমাণ অর্থ হ্রাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মুদ্রাস্ফীতি এবং ভোগ্যপণ্যের মূল্য যখন বেড়ে চলেছে, তখন এ দুটি খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি না করে হ্রাস করার পরিকল্পনার ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ইলন মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ সৃষ্টি করা হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন যে দিকগুলোকে সরকারি অর্থের অপচয় বলে বিবেচনা করে, সেগুলোকে নির্মূল করা। এ সংস্থা ট্রেজারির রেকর্ড দেখতে পারবে এবং যখন খুশি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে তদন্ত চালাতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে এ প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার ইলন মাস্কের ব্যক্তিগত এখতিয়ার, ঠিক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ জারি করার এখতিয়ারের মতো।
গত সপ্তাহে ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’ ম্যাগাজিন প্রশ্ন তুলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প কি ইলন মাস্ককে ভয় করেন? সাংবাদিক গ্যাব্রিয়েল শেরম্যান তার ‘ইজ ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাফ্রেইড অব ইলন মাস্ক’ শীর্ষক নিবন্ধে বলেছেন, কোনো নিয়োগ অথবা নির্বাহী পদক্ষেপ গ্রহণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার আগের মেয়াদে কোনো উদ্বেগ বা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই কাজ করেছেন। কিন্তু এবার তার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও বিত্তবান রাজনৈতিক মিত্র অনেকটা যান্ত্রিক করাত প্রয়োগ করে ফেডারেল সরকারের মাধ্যমে তার পথ করে নিয়েছেন। কিছু পর্যবেক্ষক মনে করছেন, ট্রাম্প হয়তো তার নিজের তৈরি ওষুধের স্বাদ গ্রহণ করছেন।
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু : সিনিয়র সাংবাদিক, অনুবাদক