কী পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার শতাধিক পণ্য ও সেবায় ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছিল, তা কারও অজানা নয়। তবে এ পরিস্থিতিতে ভিন্ন পদক্ষেপও নেওয়া যেত। অর্থবছরের মধ্যভাগে এসে ওই পদক্ষেপ নেওয়ায় জনসাধারণ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে কিছু পণ্য ও সেবায় বর্ধিত কর প্রত্যাহারের ঘোষণাও দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে আসে বর্ধিত কর হ্রাসের পদক্ষেপ। এমন সংবেদনশীলতা দেখানোয় সরকারের প্রশংসাই হচ্ছে। তবে অনেকেই ভেবে আশ্চর্য হচ্ছেন, সরকার বিশেষ করে চলমান মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতিতে কোন্ বিবেচনায় এত পণ্য ও সেবায় কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নিল! সার্বিক ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুটোই এখন ‘ডাবল ডিজিটে’। এটা আবার কমবেশি দুবছর ধরে উচ্চপর্যায়ে থেকে দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে জনসাধারণের। মূল্যস্ফীতি উচ্চপর্যায়ে থাকলে শিল্পপণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় এক্ষেত্রেও সংকোচন ঘটে। তাই এটা সাধারণভাবে ব্যবসায়ীদেরও অপছন্দ। হালে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপে ব্যবসায়ীরাও তীব্র আপত্তি জানান এজন্য যে, এতে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা তো রীতিমতো আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এ খাতে ভ্যাট তিনগুণ করায়। দীর্ঘ করোনাকালে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। এর পুনরুদ্ধারের সময় বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতিও তাদের এক বিরূপ পরিস্থিতিতে আটকে রেখেছে। এমন উদাহরণ আরও দেওয়া যাবে।

এ অবস্থায় কেবল রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টায় ভ্যাট-শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। প্রতিক্রিয়া দেখে পরে কিছু ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত বদলালেও তাই এ প্রশ্নটি থেকে যাবে, ঠিক কোন্ বিবেচনায় বা কাদের উৎসাহে এমন পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার? অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যেত। অর্থবছরের মধ্যভাগে এসে শতাধিক পণ্য ও সেবায় এভাবে কর বাড়ানোর পদক্ষেপ অবশ্য অদৃষ্টপূর্ব। এটাও ঠিক, এখনকার মতো পরিস্থিতি আর কখনো কোনো সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়নি। দেশে একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে এবং নতুন ধরনের সরকার নিয়েছে দায়িত্ব। হাসিনা সরকার চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে অর্থনীতিকেও দুর্দশায় নিক্ষেপ করে বিদায় নিয়েছে। এতে প্রথমত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে তার পর আনতে হবে গতি। কিন্তু অর্থবছরের মধ্যভাগে এসে যেভাবে কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কাজটি জটিল হয়ে পড়বে বলেই মনে হচ্ছে। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করা এ অবস্থায় হবে আরও কঠিন। সেজন্য শুধু গুটিকয় পণ্য ও সেবায় নয়; যথাসম্ভব অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভ্যাট-শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপ পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

মাঠে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবসহ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, সরকারের বরং উচিত ছিল পরিচালন ব্যয় কমিয়ে এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যয় না করে কর-রাজস্ব বাড়ানোর এমন পদক্ষেপে না যাওয়া। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা সংগঠনটিও শতাধিক পণ্য ও সেবায় কর বাড়ানোর পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। তারা যে বক্তব্য রেখেছেন, তাতেও রয়েছে বিএনপির সঙ্গে সঙ্গতি। আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির শর্ত তথা কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর বিষয়টিও এ অবস্থায় এসেছে আলোচনায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কর-রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ায় সরকার নিজেও যে কর বাড়াতে চায়, সেটা অনস্বীকার্য। আর বুঝিয়ে বললে আইএমএফ যে বাংলাদেশের বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারবে না, সেটা মনে করার কারণ নেই। বিগত সরকারের আমলে একাধিকবার সংস্থাটির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলেও তারা প্রতিশ্রুত ঋণ প্রদান থেকে সরে আসেনি। আইএমএফের মতো সংস্থা এদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কেও গভীরভাবে অবগত। বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা, বিশেষত এর ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও তাদের জানা। এ অবস্থায় এ চিত্রটিও সামনে এসেছে-সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতায় কী পরিমাণ অর্থ জোগাতে হবে। বাড়তি কর ঠিকমতো আহরণ হলে যে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার বর্ধিত আয় হাতে আসবে, তার অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় হবে ওই মহার্ঘ ভাতা জোগাতে। এমন খবর বাজারে আসার পর শতাধিক পণ্য ও সেবায় কর বাড়ানোর পদক্ষেপে আরও বেশি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, বেসরকারি ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরতদের ‘মহার্ঘ ভাতা’ জোগাবে কে? এ খাতে তো বরং বিরাজ করছে অস্থিরতা। বিদেশি বিনিয়োগ দূরের কথা; বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশি বিনিয়োগও বাড়ছে না। নতুন কলকারখানা প্রতিষ্ঠার খবর নেই বললেই চলে। বিদ্যমান সক্ষমতা ব্যবহার করেও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। এ অবস্থায় বরং চলছে শ্রমিক-কর্মচারী ছাঁটাই। এতে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি হচ্ছে থেকে থেকে। এর ওপর প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ মানুষ এসে যুক্ত হচ্ছে শ্রমবাজারে। তাদের একাংশ বিদেশে কাজের সন্ধানে গেলেও সিংহভাগ থেকে যাচ্ছে দেশে, বেকার অবস্থায়। বিগত সরকার-ঘনিষ্ঠদের প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি সংকটে পড়ে যাওয়ায় সেখান থেকেও হাজার হাজার মানুষ কাজ হারাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রেখে দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে বক্তব্য দেওয়া হলেও কাজটি তো কঠিন। ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনীতিকের যে দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছিল, তার তৎপরতায় ব্যাংক খাতেও বিরাজ করছে অস্থিরতা। একশ্রেণির ব্যাংককে বিশেষ সহায়তায় টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে সরকারকে। নইলে আমানতকারীরাই শুধু বিপদে পড়বেন না; এসব ব্যাংকের কর্মচারীরাও কাজ হারাবেন। গোটা ব্যাংক খাতেও পড়বে এর প্রভাব। একবার আস্থায় ধস নামলে তাতে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করাও কঠিন হবে।

এসব বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক খাতের বাইরে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষও আছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও স্বল্প মজুরি বৃদ্ধির সংকটে। অর্থাৎ মজুরি যে হারে বাড়ছে, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে তার চেয়ে বেশি হারে। তাদের মহার্ঘ ভাতা লাভের তো কোনো সুযোগ নেই, যা দিয়ে মূল্যস্ফীতির ধকল সামলানো যেতে পারে। এ অবস্থায় আবার ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে এদের ওপরই পড়ে বেশি চাপ। এসব দিক বিবেচনা করেই ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের পথচলা উচিত বলে মনে হচ্ছে। নির্বাচনে দাঁড়াবেন না বলে জনপ্রিয় থাকার প্রয়োজন তাদের নেই, এটা মনে করার তো কোনো কারণ নেই। কেননা গণ-অভ্যুত্থানের পথ বেয়ে তারা দায়িত্ব নিয়েছেন দেশকে স্থিতিশীল করে ‘জরুরি সংস্কার’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেওয়ার জন্য। অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা এনে একে গতিশীল করা না গেলে সে লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। তাছাড়া সরকারের দায়িত্ব রয়েছে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সুশাসন এনে দেখানো এবং এক্ষেত্রে বিদ্যমান বৈষম্য বরং দূর করার। কর-রাজস্ব খাতে প্রগতিশীল সংস্কারের কথাও কি অনেকদিন ধরে বলা হচ্ছে না? এর অর্থ কি সর্বসাধারণের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাটের বোঝা আরও বাড়ানো? এর অর্থ বরং অপচয় কমানো; অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প থেকে সরে আসা এবং প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থানে প্রত্যক্ষ কর তথা আয়কর বাড়ানো। স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা নির্ভর করে আছি ভ্যাটসহ বিভিন্ন পরোক্ষ করের ওপর। কর আহরণে ঘাটতি হলেই এ থেকে উদ্ধার পেতে বেছে নেওয়া হচ্ছে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর পদক্ষেপ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল এ ধারা থেকে সরে এসে বরং দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করা, যাতে পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার তা অনুসরণে একরকম চাপ বোধ করে।

জ্বালানি খাতে সরকার যে পরিস্থিতিতে আছে, সেখান থেকে বেরোতেও তারা গ্যাসের দাম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। বিশেষত শিল্পের নতুন সংযোগে এর দাম বাড়ানোর যে হারের কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে নতুন বিনিয়োগ আরও নিরুৎসাহিত হবে। চলতি বিনিয়োগও হিমশিম খাচ্ছে প্রযোজনমতো গ্যাস না পেয়ে। এ অবস্থায় বেশকিছু শিল্পপণ্য ও এর উপকরণে করভার বাড়ানোর পদক্ষেপ দুধারী তলোয়ারের মতো কাটবে। দেশে আমদানি বাড়লেও শিল্পের মেশিনারিজ আমদানি হ্রাসে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে, এ খাত স্থবির। এ অবস্থায় প্রবৃদ্ধিতে শিল্পের অবদান কমবে। শিল্পের অবদান কমলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়ারও কারণ নেই। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকসহ উন্নয়ন সহযোগীরা বলছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি এবার কোভিডকালের মতো হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারও প্রবৃদ্ধি বাড়িয়ে দেখাতে ইচ্ছুক নয়। বিগত সরকার এসব সূচক বাড়িয়ে দেখিয়ে উন্নয়নের বয়ান হাজির করতে ব্যগ্র ছিল। বর্তমান সরকার মূল্যস্ফীতিও বাড়িয়ে দেখাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতির প্রাপ্ত তথ্য সরাসরি প্রকাশের নির্দেশনা বরং দিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। বলেছেন, তার কাছে এটা অনুমোদনের জন্য পাঠানোর প্রয়োজন নেই।

এসব স্বচ্ছতাই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশিত। এটাও তাই প্রত্যাশিত, তারা এ সংকটকালে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে তাদের বলবেন অন্য সবার সঙ্গে দুর্ভোগটা ভাগ করে নিতে। একগুচ্ছ ব্যাংক বাঁচাতে টাকা না ছাপানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়েছে নতুন গভর্নরকে। এর না হয় একটা যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু ভ্যাট-শুল্ক বাড়িয়ে একটি বিশেষ শ্রেণিকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার তো কোনো যৌক্তিকতা নেই। হয়তো বড়জোর স্বল্প বেতন পাওয়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অপচয় রোধ করেও চেষ্টা করতে হবে, যাতে এক্ষেত্রে দাম আরও বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ না নিতে হয়। জরুরি এ খাতকে স্থিতিশীল রাখতে এর দায়দেনা পরিস্থিতিও রাখা চাই নিয়ন্ত্রণে। নইলে গ্রীষ্মে, বিশেষত রোজার সময় জ্বালানি সরবরাহে সংকট দেখা দিলে পরিস্থিতিতে যোগ হবে অস্থিরতা।

এদিকে চালসহ নিত্যপণ্যের আমদানি বাড়িয়ে সরকার চেষ্টা করছে তার পথচলাকে সহজ রাখতে। আলু, পেঁয়াজ, ডিমসহ সবজির দাম কমে আসার ঘটনা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। মূল্যস্ফীতি সহনীয় করে আনতে চালের দামও বাড়তে দেওয়া যাবে না। এরই মধ্যে এর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এমনকি আমন মৌসুমেও। এ অবস্থায় সরকার এসব পণ্যের দাম কমাতে বড় কর ছাড় দিয়েছে। রোজার অনেক আগেই নিয়েছে এমন পদক্ষেপ, সেটাও প্রশংসনীয়। এর সঙ্গে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বৃদ্ধির পদক্ষেপটি স্বভাবতই হয়েছে অপ্রত্যাশিত। সরকারের মধ্যে ভুল সংশোধনের চেষ্টাও কম নেই। তবে খেয়াল রাখা দরকার, তার কোনো পদক্ষেপে সংকটে থাকা অর্থনীতি যেন অস্থির না হয়। বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ানো যাবে না; তবে বিদ্যমান বিনিয়োগ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি না বাড়ে, সেদিকে দৃষ্টি রেখেই সামনের পথটুকু অতিক্রম করতে হবে। নির্বিঘ্নে সংস্কার সেরে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্যও এটা জরুরি।

হাসান মামুন : সাংবাদিক, কলামিস্ট