Logo
Logo
×

বাতায়ন

বিশ্ব শিক্ষক দিবস

সব শিক্ষককে শ্রদ্ধা

Icon

মো. রফিকুজ্জামান

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর থেকে ইউনেস্কো এ দিনটিকে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ ঘোষণা করে। এটি দেশ-বিদেশে ‘শিক্ষক’ পেশাজীবীদের জন্য সেরা সম্মান।

বলা বাহুল্য, আমাদের শিক্ষানবিশী জীবন চলতে থাকে জীবনভর। আমরা প্রতিদিন শিখি। জীবনের রোজনামচা আমাদের প্রায় প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় কত কিছু যে শিখতে বা শিখে নিতে বাধ্য করে, তার ইয়ত্তা নেই। আমরা ঠেকে শিখি, ঠকে শিখি, ভুল করি বিস্তর, আবারও ঠিক করে ফেলি। পরবর্তীকালে অভিজ্ঞতালব্ধ জীবনে ছাত্রাবস্থায় শেখা অনেক ভালো জিনিস কাজে লাগে। অনেক কিছু কিন্তু আবার লাগেও না। আমাদের ছাত্রাবস্থায় শেখা বিষয়গুলো সবসময় ঠিক ছিল; কিন্তু নানা প্রতিকূলতা ও চাপের কারণে হয়তো সে আদর্শের কাছে অনেক সময় নতিস্বীকার করতে হয়। দেওয়ালে কখনো পিঠ ঠেকে গেলে এ-ও মনে হয়েছে, ধ্যাৎ জীবনে কিছুই শেখা হলো না আজও।

নার্সারি বা স্কুলে ভর্তি জীবনের আগে পর্যন্ত তো আমরা অ আ ক খ, ইংরেজি বর্ণমালা, ১ থেকে ১০০, ছড়া, রং চেনা, পশুপাখিদের ছবি দেখে চিনতে শেখা, হাদিস-কুরআন, নানা গল্প, আরও কত কী বাড়িতেই শিখে যাই। এগুলো শিখি পারিবারিক পরিবেশে এবং বাবা-মায়ের কাছ থেকেই। হামাগুড়ি বয়স থেকেই হাঁটতে শেখা, কথা বলতে শেখা, সবই তাদের কাছেই। একেবারে কচি বয়স থেকে আমাদের শিক্ষার হাতেখড়ি তাদের হাত ধরেই। বাবা ও মা-ই আমাদের প্রথম ও পরম গুরু, জীবনযাপনের অন্যতম শিক্ষক। পরবর্তীকালেও প্রিয় শিক্ষক তারাই। তাদের স্নেহে, প্রশ্রয়ে, শিক্ষায়, সহমর্মিতায়, মরমি সমালোচনায়, চরিত্র গঠনের দৃঢ় শিক্ষায় আমরা ঋদ্ধ হতে থাকি ক্রমেই। আমাদের প্রতিটি আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঠিক কী হবে, শিশু বয়স থেকেই উচিত-অনুচিতের বোধ আমরা শিখতে থাকি তাদের কাছেই। আমাদের নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ, আমাদের দায়বদ্ধতা, বিশ্বাস, অন্যকে মান্যতা দেওয়া, গুরুজনকে সম্মান জানানো, নিজেদের পারিবারিক রীতিকে মর্যাদা দেওয়া, রক্ষণশীলতাকে টিকিয়ে রাখা-এ সবকিছুই শিখি বাড়ির গুরুজন অভিভাবকদের থেকেই। আমাদের আদর্শ, চরিত্রগঠন সবকিছুর প্রাপ্তি তাদের থেকেই। শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে বাবা-মা’কেও অন্যতম প্রারম্ভিক শিক্ষক তথা গুরু হিসাবে স্মরণ করে প্রণতি জানাই।

ফিরে আসি বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমার প্রিয় শিক্ষকদের কথায়। বলা হয়ে থাকে-‘A great teacher is like a candle-it consumes itself to light the way for others.’ আমার শিক্ষকরা সবাই ছিলেন অতি প্রিয় ও শ্রদ্ধার। আমার জীবনে বেশিরভাগ শিক্ষকই ইতোমধ্যে গত হয়েছেন। শ্রদ্ধা জানাই তাদের। আমার শিক্ষকদের পেয়েছি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো। তারা সবাই নিঃস্বার্থভাবে আলো ছড়িয়েছেন। তারাই আমার মতো অনেকেরই আদর্শ। সবাইকে স্মরণ করছি কৃতজ্ঞচিত্তে।

আমরা বারবার পেছন ফিরি-শিক্ষক দিবস নিয়ে লিখতে বসে ধুলো ঝাড়পোঁচ করে পেছনে ফিরে তাকানোর মতো। কখনো পুরোনো স্মৃতিকাতরতা উথলে ওঠে। ফেলে আসা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের জন্য মন কেমন করে। আবারও এ লেখার হাত ধরেই ফিরে দেখা। শিক্ষকদের নতুন করে দেখা। একাকী হাঁটতে হাঁটতে অথবা কল্পনায় কখনো দেখা হয় এদের সঙ্গে। হারিয়ে যাই। আনন্দ-বেদনায় মন কেমন করে, কষ্টটা টের পাই। জাপানের একটা প্রচলিত প্রবাদ হলো-‘Better than a thousand days of diligent study is one day with a great teacher’. আমার শিক্ষকদের সবারই সাহচর্যে এরকম মনে হতো।

এ কথা বহুলাংশে সত্যি যে, শিক্ষকতা এমনই এক পেশা, যাকে এক সময় বলা হতো সব পেশার মধ্যে উত্তম। তবে দিনকাল বদলেছে। অতীতের গুরুকুলে শিক্ষা, ব্রহ্মাচর্য পালন এসব বহু পুরোনো। সেই সুচারু শিক্ষাব্যবস্থার এখন প্রচণ্ড অবনতি হতে দেখছি, শুনছি। কতটা মান পড়ে যাচ্ছে, যন্ত্রণাকাতর চোখে তা দেখি। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দরকার। অন্তত জাতি তাই আশা করে। অকুণ্ঠচিত্তে শ্রদ্ধা জানাই পৃথিবীর সব শিক্ষককে। বিশ্ব শিক্ষক দিবস আমাদের কাছে একটি মহান দিনপঞ্জি হয়ে থাকুক চিরকাল-এ প্রত্যাশা।

মো. রফিকুজ্জামান : সাবেক অতিরিক্ত সচিব; রেজিস্ট্রার, বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয় অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, ঢাকা

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম