Logo
Logo
×

বাতায়ন

বিশ্ব শিক্ষক দিবস

শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন হোক

Icon

কাজী মুহাম্মদ মাইন উদ্দীন

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে প্রতিবছর আমাদের দেশের শিক্ষকরা সরকারের কাছে কিছু প্রত্যাশা করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘Valuing Teachers Voices: Towards a new Social Contract for Education’। এর আভিধানিক অর্থ হলো ‘শিক্ষকদের কণ্ঠের মূল্যায়ন : শিক্ষার জন্য একটি নতুন সামাজিক চুক্তির দিকে’। ব্যাখ্যায় বলা যায়, দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার থেকে দুর্বলদের রক্ষা করার জন্য সমাজের মানুষ যখন কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, তখন তা হলো সামাজিক চুক্তি। সামাজিক চুক্তি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সৃষ্টি হয়। এ চুক্তি দুর্বলদের রক্ষা করার হাতিয়ার। এবার বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিশ্লেষণ করলে মনে হয়, শিক্ষক সমাজ যে দুর্বল সমাজ, ইউনেস্কো তা অন্তত অনুধাবন করতে পেরেছে।

আমাদের দেশের শিক্ষকদের প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক। এ সমস্যার সমাধানে শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি জাতীয়করণের বিকল্প নেই। চাকরি জাতীয়করণের মাধ্যমে শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক উন্নতি করে শিক্ষার উন্নয়ন করতে হবে। কিন্তু জাতীয়করণ যেহেতু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, সেহেতু জাতীয়করণের আগে আমি শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়নের জন্য কিছু প্রস্তাব তুলে ধরছি :

১. স্নাতক (পাস-অনার্স) থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের বেতন কোড-০৪ ও উপাধ্যক্ষের বেতন কোড-০৫, সেসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষের বেতন কোড-০৩ ও উপাধ্যক্ষের বেতন কোড-০৪-এ উন্নীত করতে হবে। ২. থানাভিত্তিক এ ধরনের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মোট শিক্ষকের একটি নির্দিষ্ট হারে একই পর্যায়ের শিক্ষকতায় মোট ২২ বছর ও ২০ বছরের প্রকৃত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষকদের অধ্যাপক বেতন কোড-০৪ এবং সহযোগী অধ্যাপক বেতন কোড-০৫ দিতে হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম চলছে, সেখানে শিক্ষকদের শ্রেণি বক্তৃতা পর্যবেক্ষণ করে (কতক্ষণ বক্তৃতা দিতে সক্ষম, বক্তৃতার মান, বক্তৃতা দেওয়ার কৃত্রিমতা পরিহার করা, স্বাভাবিক থাকা ইত্যাদি যাচাই করে) প্রকৃত অভিজ্ঞ শিক্ষক বাছাই করা যাবে। আর যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা নেই, সেখানে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে তা করতে হবে। থানাভিত্তিক ১০ শতাংশ শিক্ষককে অধ্যাপক এবং ১০ শতাংশ শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির প্রস্তাব করছি, যা এমপিওভুক্ত স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর কলেজে সীমাবদ্ধ থাকবে। ৩. প্রতিষ্ঠান প্রধান হওয়ার জন্য ২০ বছরের সমপর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা এবং ৫০ বছর বয়স হওয়ার বিধান চালু করতে হবে। ৪. বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে। ৫. সর্বশেষ বেতন স্কেলের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া দিতে হবে। ৬. সর্বশেষ বেতন স্কেলের ২০ শতাংশ চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে। ৭. মহানগরের জীবনযাপন ব্যয় অধিক বলে মহানগরের শিক্ষকদের সর্বশেষ বেতন স্কেলের একটি নির্দিষ্ট হারে মহানগর ভাতা দিতে হবে। ৮. বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরির নির্ধারিত প্রবেশ বয়স বাতিল করে অবসরের বয়স গড় আয়ুর সমান অর্থাৎ ৭২ বছর করতে হবে। সর্বস্তরের শিক্ষক তথা শিক্ষা শ্রমিক ও সব প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার (যারা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে চাকরিতে প্রবেশ করেছেন) ক্ষেত্রে গড় আয়ুর সমান অবসর বয়স নির্ধারণের বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে। ৯. কলেজ তথা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষকদের চাকরিতে প্রবেশে বেতন কোড-০৮ নির্ধারণ করতে হবে। ১০. মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে নির্ধারিত অভিজ্ঞতা থাকা সাপেক্ষে ব্যাচেলর অব এডুকেশন সার্টিফিকেট জমা দিলে তাকে উচ্চতর স্কেল দিতে হবে। ১১. অবসরের বয়সসীমা ৭২ বছর করা সম্ভব না হলে আপাতত ৬৫ বছর করতে হবে এবং তা ০১.০৭.২০২৪ তারিখ থেকে কার্যকর করতে হবে। ১২. ৫০ শতাংশ সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রথা বন্ধ করে যোগ্যতার মাপকাঠিতে পদোন্নতি দিতে হবে। ১৩. বার্ষিক দুটি পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দিতে হবে। ১৪. ‘সহযোগী অধ্যাপক’ ও ‘অধ্যাপক’ পদ চালু করে এমপিও পদ সৃষ্টি করতে হবে।

কাজী মুহাম্মদ মাইন উদ্দীন : পেশাজীবী সংগঠক, শিক্ষা গবেষক

kazimain@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম