আমলাতন্ত্রের ঔপনিবেশিক মানসিকতা
আব্দুর রশিদ
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এক ব্যবসায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে কাগজপত্র দেখানোর সময় তাকে ‘হোল্ড অন’ বলা এবং সাংবাদিকরা তথ্য চাওয়ার কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি প্রদান এবং পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রাখা-সাম্প্রতিক এ দুটি ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রথম ঘটনায় এটা স্পষ্ট, ম্যাজিস্ট্রেট ‘হোল্ড অন’-এর শব্দগত বা ভাষাগত অর্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে ফোন আলাপকালে ইংরেজি ভাষাভাষীদের ‘হোল্ড অন’ বলাটা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। এর সাধারণ অর্থ হলো, ‘অপেক্ষা করুন’ বা ‘একটু ধরুন’। এটাকে ম্যাজিস্ট্রেট অর্ডার হিসাবে নিলেন কেন বোধগম্য হলো না। দ্বিতীয় ঘটনাটি হলো, একেবারে সাধারণ বিষয় নিয়ে লিখিতভাবে তথ্য চাওয়ার কারণে বেচারা সাংবাদিককে শেষ পর্যন্ত অপরাধীর মতো জেলে যেতে হয়েছে। পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রাখার কারণও হলো তথ্য চাওয়া।
এ ঘটনাগুলোয় আসলে আমাদের সরকারি কর্মচারীদের জনগণের প্রতি যে সম্মান, দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনের কথা, তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়। ভূমির খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের প্রবর্তিত কালেক্টরেট সিস্টেমের কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরদর্শিতা বা পদক্ষেপের অভাবে সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক না হয়ে শাসক হয়ে বসেছে। তারা প্রতিনিয়তই নানা সংবাদের জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন। লালমনিরহাটে পাঁচ সাংবাদিককে আটকে রাখার ঘটনা সরকারি কর্মচারীদের ঔপনিবেশিক মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। এ ছাড়াও নিকট বা দূর অতীতে তাদের নানা ধরনের আইনবহির্ভূত, সংবিধানবিরোধী, অনৈতিক কর্মকাণ্ড পাঠকের ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এমনকি রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়ার মতো দুঃসাহসিকতা দেখানোর কথা কম-বেশি সবারই জানা। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার শাসন বা শোষণের অধীনে থাকা আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বে দুর্বলতা, জনগণের অসচেতনতার কারণে আমলাতন্ত্রের প্রভাব বেড়ে যায়, যা এখন জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। বস্তুত স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দীর বেশি পেরিয়ে গেলেও এদের মানসিকতার পরিবর্তন করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক মাহবুব কামাল একসময়ের জনপ্রিয় পত্রিকা যায়যায়দিনের ‘চতুর্থ মাত্রা’ কলামে সরকারি কর্মচারীদের কামলা থেকে আমলা হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে বেশ মজার একটা নিবন্ধ লিখেছিলেন। জনগণকে বোকা বা প্রজা ভেবে তাদের শাসক হয়ে বসার মানসিকতা তাদের মৌলিক প্রশিক্ষণে গলদের পরিচায়ক।
এ প্রসঙ্গে এক অনুষ্ঠানে এক প্রভাবশালী সাবেক মুখ্য সচিবের দেওয়া বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করলে যা দাঁড়ায় তা হলো, বর্তমানে তাদের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া বা কার্যক্রম বা কারিকুলাম হলো অনেকটা এ ধরনের-তোমার গায়ের চামড়া বাদামি বা কালো হলেও তোমার কার্যক্রম, আচার-আচরণ হতে হবে সাদা প্রভুদের মতো। কী সাংঘাতিক কথা! বিগত দশকগুলোতে এ ধরনের মানসিকতার প্রকাশ আরও বেড়ে গেছে। আশপাশের দেশগুলোতে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় নামে থাকলেও আমাদের দেশে এ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে সেবার বদলে তাদের শাসক মনোভাব আরও ভালোভাবে ফলানোর চেষ্টা দেখা যায়। নিজেরা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করলেও মানুষকে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী আইনের বিধি-বিধান শোনায়। ডিসি সম্মেলনে আবদার করে মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে তাদের হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার জন্য, যাতে জনগণের উপরে ক্ষমতার খড়গ চালানো যায়। এ বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণিকে দেশের বহু ক্ষেত্রে অর্থাভাবের কারণে উন্নয়ন কাজ আটকে থাকলেও জনগণের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে বিলাসিতার জন্য শুধু সুদমুক্ত গাড়ি নয়, এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে মাছের ঝোলে মাছ ভাজার চমৎকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিজাত এবং দামি এলাকায় তাদের জন্য ফ্ল্যাট বা বাড়ি বরাদ্দ থাকলেও রাজউক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগের তৈরিকৃত প্লট, ফ্ল্যাট বা বাড়ির এক-তৃতীয়াংশ সরকারি কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত। অথচ এ বিভাগগুলো সৃষ্টি করা হয়েছিল জনগণের আবাসিক সংকট মেটানোর জন্য।
মামলায় জড়ানোর হুমকি, মধ্যরাতে বাড়িতে ঢুকে সাংবাদিককে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নির্যাতনকারী, কারাদণ্ড প্রদানকারী ডেপুটি কমিশনারের যথাসময়ে বদলি এবং পদোন্নতি হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশের জনগণের প্রদত্ত করের এক-তৃতীয়াংশ যায় এই কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা ব্যয় নির্বাহ করতে। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন খাত থেকে তাদের পেছনে অর্থাৎ এই অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হওয়া অর্থ। বর্তমান সরকার তাদের দুর্নীতি রোধের সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের বেতন-ভাতাসহ সুবিধাদি কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু তাদের দুর্নীতি কমানোর অভীষ্ট লক্ষ্য কি অর্জিত হয়েছে? দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এসব সরকারি কর্মচারী গাড়ি বাড়ির সাংঘাতিক কাঙ্গাল। অথচ এদের দুর্নীতি ধরার বিষয়ে কোনো জোরালো পদক্ষেপ দেখা যায় না। শুধু জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধেই অথবা সহজ টার্গেট চিকিৎসক, প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধেই অভিযানের খবর মিডিয়াতে দেখে থাকি। আজ পর্যন্ত কোনো সাবেক বা বর্তমান আমলার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত বা শাস্তির নজির খুব একটা নেই। জাতীয় দৈনিকে রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধিদের দুর্নীতির বা বেআইনি কাজের খবর প্রকাশে যত উদ্যোগ দেখা যায়, কোনো আমলা বা সরকারি কর্মচারী, যাদের সহযোগিতা বা অংশগ্রহণ ছাড়া দুর্নীতি অসম্ভব, তাদের বিষয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা বা এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। হাজারও দুর্নীতি বা অপকর্ম করলেও তাদের শাস্তি হয় বড়জোর এক কর্মস্থল থেকে অন্য কর্মস্থলে বদলি। যেটি অনেক সময় তাদের জন্য শাপে বর হয়ে ওঠে। এদের অনেকে আবার গর্ব করে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর তাদের প্রভাব, নির্বাচনে ভূমিকা নিয়ে গর্ব করেন। স্থানীয় সংসদ-সদস্যকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীদের যোগাযোগ গণতন্ত্রের দুর্বলতা প্রকাশ করে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন এমপি। অন্যদিকে আমলা বা সরকারি কর্মচারীদের অনিয়মতান্ত্রিক ও বেআইনি ক্ষমতার দম্ভ ও ভূমিকা পুরো সমাজব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তরুণ প্রজন্ম তাদের মডেল হিসাবে নিয়ে আমলা হতে চায়। তাই অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, বিজ্ঞানী নেই, দার্শনিক নেই, চিন্তাবিদ নেই, চারদিকে শুধু প্রশাসক আর প্রশাসক। বস্তুত এভাবে চলতে থাকলে এ জাতির কপালে দুর্ভোগ আছে।
অথচ উন্নত বিশ্বে বিপরীত চিত্র বিদ্যমান। বর্তমানে সারা বিশ্বে ‘সার্ভিস উইথ স্মাইল’ বা হাসিমুখে সেবা গুরুত্ব পেলেও এরা সবাই যেন রামগরুড়ের ছানা। বিশ্বের সভ্য ও উন্নত দেশগুলোতে সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান বা জরিপে দেখা গেছে, সুশিক্ষিত যুবক-তরুণরা সরকারি নয় বরং বেসরকারি বা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ছাড়াও কিছু উন্নত দেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে সরকারি চাকরিতে যোগ দিলেও গড়ে চার বছর পরে সে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। এর কারণ হলো, সেখানে দুর্নীতি করে বা অসৎ পথে জনগণকে বা মানুষকে বিপদে ফেলে আয় করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে তারা উন্নত জাতি আর আমরা এখনো উন্নয়নশীল রয়ে গেলাম। এ প্রসঙ্গে তাদের উদ্দেশে বলা বঙ্গবন্ধুর সেই অবিস্মরণীয় উক্তিগুলো মনে পড়ছে। তিনি যথার্থই তাদেরকে আমলা নয়, মানুষ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেই সঙ্গে করদাতা জনগণের করের টাকায় পরিবার ও ছেলেমেয়ে পোষণকারী হিসাবে জনগণের সেবা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। চাকর হয়ে মালিকদের ওপর প্রভুত্ব ফলানোর বিপজ্জনক ও দেশের উন্নয়নে বিঘ্ন সৃষ্টির প্রবণতা বা অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। এরা সুবিধাবাদী রাজনৈতিক আনুগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখাতে যেভাবে দ্বিধা করে না বা কুণ্ঠিত হয় না, তেমনি নিমিষে রাজনৈতিক পরিচয় বদলাতে বা ডিগবাজি খেতে বিন্দুমাত্র দেরি করে না। যে কোনো রাজনৈতিক সরকার নিজেদের পছন্দের সরকারি কর্মচারীদের পদায়ন করতে বা অব্যাহতি দিতে পারে, উন্নত দেশসহ সব দেশেই এর চর্চা আছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াত বা এদের সমর্থক কিংবা বিএনপি-জামায়াত পরিবারের সদস্য, ছাত্রদলের নেতা, ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী, শিবির নেতা ছিলেন এমন অনেকেই সরকারের সচিব পর্যায় ছাড়াও রাষ্ট্রদূত, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত আছেন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এদের চেয়ে বড় সরকারসমর্থক আর নেই। সাবেক বিচারপতি সিনহা পলাতক থাকলেও তার গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীরা বিভাগীয় কমিশনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল তবিয়তে অধিষ্ঠিত আছেন। এমনিই কারিশমা এদের! উন্নত বিশ্বে আরলি রিটায়ারমেন্টে যাওয়ার জন্য সবার চেষ্টা থাকলেও আমাদের দেশে এর বিপরীত চিত্র-আমলারা অবসরের যেতেই চায় না, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য কাঙ্গালের মতো তাদের চেষ্টা তদবির চলতে থাকে। গণমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততাবিহীন এসব সরকারি কর্মচারীর জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকার কারণে হাজার অপকর্ম ও দুর্নীতি করেও তারা পার পেয়ে যান। সংবিধান বা আইনের চোখে সব নাগরিক সমান, এ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও সম্প্রতি পত্রিকার রিপোর্টে দেখা যায় ‘সরল মনে’ তাদের কৃতকর্মের অর্থাৎ দুর্নীতি-অপকর্মের শাস্তি থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য সংবিধান ও নীতিমালাবিরোধী আইন পাশের জোর পাঁয়তারা চলছে। বিগত সরকারের শেষ সময় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে সম্পদ ও টাকা পাচারকারী আমলাদের তালিকা প্রকাশের কথা বলেছিলেন; কিন্তু সে তালিকা আলোর মুখ দেখেনি। অথচ দেশ ও জনস্বার্থে সে তালিকা জনসম্মুখে আসা প্রয়োজন ছিল।
তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী তথ্য সরবরাহে সহযোগিতা করার কথা থাকলেও তথ্য চাওয়ার কারণে উলটো নাজেহাল হতে হয়। সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯, ২০০২, ২০১১, এমনকি ২০১৪ সালে সংশোধনের কাজ শুরু হলেও কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। এর উদ্দেশ্যও কিন্তু তাদের সুবিধা অনুযায়ী সংশোধন করা। ব্রিটিশ শাসক-শোষকরা জনগণের কাছ থেকে জমির খাজনা আদায়ের জন্য যে কালেক্টরেট ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল, বর্তমানে তার কী উপযোগিতা বা প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটা বিবেচনায় এনে সুশাসনের জন্য, জনগণের দোরগোড়ায় উন্নয়নের সুফল পৌঁছানোর জন্য এর সংস্কার প্রয়োজন। আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংস্কারের মাধ্যমে উপজেলা বা জেলার প্রশাসনিক কাজ বিকেন্দ্রীকরণ বা বিষয়ভিত্তিক বণ্টনের মাধ্যমে যে যে-বিষয়ের, কর্মের বা ক্ষেত্রের বা বিভাগের, তাকে সে-বিষয়ে, ক্ষেত্রে বা মাঠ পর্যায়ের দায়িত্ব দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের মাধ্যমে জনগণের সেবা করতে হবে।
আব্দুর রশিদ : ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা