Logo
Logo
×

বাতায়ন

উত্তরাঞ্চলে আরও উন্নয়ন প্রয়োজন

Icon

সাইফুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তরাঞ্চলে আরও উন্নয়ন প্রয়োজন

আগামী ২ আগস্ট রংপুরে আসছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে রংপুরবাসীর মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। তারা দীর্ঘদিন পর তাদের পুত্রবধূকে কাছে পাবে। প্রায় সাড়ে চার বছর আগে রংপুরে নির্বাচনি প্রচারণায় এসেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রংপুর বিভাগে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, এ কথা স্বীকার করে নিতেই হবে; এক সময়ের মঙ্গা ও দরিদ্র মানুষের জনপদ ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। কিন্তু তার পরও যেন উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে অন্য অঞ্চলগুলোর সঙ্গে ঠিকমতো পেরে উঠতে পারছে না উত্তরের এ অঞ্চলটি।

এ অঞ্চলে শিল্পায়নের এত প্রসার না ঘটলেও কৃষিতে অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক এগিয়ে আছে। তবে সেচব্যবস্থা, সারের দামসহ নানা কারণে কৃষি খাতেও ভাটা পড়তে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই এসব সমস্যার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করতে ভুলবেন না এ অঞ্চলের রাজনীতিকরা। এ অঞ্চলের মানুষ অবশ্যই চাইবে নির্বাচনের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের দীর্ঘদিনের তিস্তার সমস্যার সমাধান।

এক সময়ের অবহেলিত এ অঞ্চল গত পনেরো বছরে এগিয়েছে অনেক, বিশেষ করে রংপুরকে সিটি করপোরেশন ঘোষণা, এলেঙ্গা থেকে রংপুরে ছয়লেনের প্রকল্প, পীরগঞ্জে মেরিন একাডেমি স্থাপন, আদালতের বহুতল ভবন, সিভিল সার্জনের নতুন ভবন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা শিল্পকলা একাডেমি, বিভাগীয় সদর দপ্তর, রংপুর শিশু হাসপাতাল ও পুলিশ হাসপাতাল, আধুনিক পুলিশ লাইন্স নির্মাণ, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ চোখে পড়ার মতো নানা উন্নয়ন ঘটেছে।

তবে এবারের প্রধানমন্ত্রীর জনসভা এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ; কারণ এ জনসভা থেকে ঘোষণা আসতে পারে এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি তিস্তা নদী নিয়ে সরকারের তিস্তা পরিকল্পনার কথা। সে আশায় বুক বেঁধে আছেন উত্তরের এ জনপদ। বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর ও নীলফামারী জেলার ওপর দিয়ে তিস্তা নদী বয়ে গেছে। উত্তরাঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন তিস্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিশেষ করে তিস্তার অববাহিকার ৫ হাজার ৪২৭টি গ্রামের মানুষ তাদের জীবিকার জন্য এ নদীর ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।

তাছাড়া এখনো দেশে সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাস রংপুর বিভাগে। অর্থাৎ, এখনো দেশের দরিদ্রতম বিভাগ উত্তরাঞ্চলের রংপুর। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও এ অঞ্চলের দারিদ্র্যের হারে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। দেশের যে চারটি জেলায় সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য রয়েছে, তার মধ্যে তিনটি জেলাই রংপুর বিভাগের। এগুলো হচ্ছে-কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর। যার মধ্যে সর্বোচ্চ দারিদ্র্য রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলার চররাজিবপুর উপজেলায়, ৭৯ দশমিক ৮ শতাংশই দরিদ্র।

উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগব্যবস্থার এখন কিছুটা উন্নতি হলেও ভোগান্তি কমেনি, সড়কপথ এবং রেলপথ এ দুই পথেই ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ট্রেনের সিঙ্গেল লাইনের কারণে দিনের পর দিন শিডিউল বিপর্যয় যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। যেখানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে সড়ক এবং রেল দুই পথেই চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে ঢাকা থেকে রংপুরে তার দ্বিগুণ সময় লাগে। তাছাড়া উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দসহ নানা সমীক্ষার দিকে চোখ রাখলে বোঝা যায়, উত্তরের জনপদ কতটা বৈষম্যের শিকার।

এছাড়া ১১ সিটি করপোরেশনের বাজেট বরাদ্দেও পিছিয়ে রংপুর, অথচ এ অঞ্চল থেকে উৎপাদিত চাল বছরে প্রায় চার কোটি মানুষের খাবারের জোগান দেয়। আলু, শাকসবজি, চাসহ নানা কৃষিজপণ্য উৎপাদিত হয়; কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থা ও পর্যাপ্ত সেচের অভাবে দিন দিন কৃষক এ খাতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এছাড়াও এ বিভাগে রয়েছে ৫টি স্থলবন্দর। কিন্তু রংপুর বিভাগের বেশির ভাগ রাস্তাই দুই লেনের হওয়ায় এ বন্দরগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহণে আগ্রহ কম ব্যবসায়ীদেরও। সড়ক দুর্ঘটনা তো প্রতিনিয়ত ঘটছেই।

উত্তরের বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই দৃষ্টি দেবেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে বিশ্ববিদ্যালয়টি, এ সংকট থেকে উত্তরণ এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাণের দাবি। ১৩ বছর আগে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন ‘রংপুরের উন্নয়নের জন্য আমার কাছে কোনো দাবি বা সুপারিশ করার প্রয়োজন হবে না। রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে নিলাম’। তার এ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলনও আমরা দেখেছি।

এজন্যই এবার এ বিভাগের মানুষ মনে করছে, তিস্তা মহাপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়ে আবারও তিস্তার যৌবন ফিরিয়ে দিলেই এ অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হবে। ঢাকার সঙ্গে রংপুরের ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং পর্যাপ্ত রেলের ব্যবস্থা করতে হবে। এ অঞ্চলে গ্যাসের লাইনের সঞ্চালন, মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগরায়ণ, চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্মাণ, উন্নতমানের হিমাগারের ব্যবস্থা, কৃষকের জন্য বিশেষ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের ধান চাষে আরও আগ্রহী করে তোলাসহ দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করার বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।

সাইফুল ইসলাম : প্রভাষক, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম