Logo
Logo
×

বাতায়ন

অটুট থাকুক পারিবারিক বন্ধন

Icon

আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অটুট থাকুক পারিবারিক বন্ধন

বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক ঐশ্বরিক, আত্মিক; যা কোনো মানদণ্ডেই পরিমাপযোগ্য নয়। সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের খেদমত, খোঁজখবর, আদর-যত্ন অনেক বড় ইবাদত।

বাবা-মা সন্তানের জন্য জান্নাত; আবার বাবা-মায়ের অনাদরেই পরকালের শাস্তি ও জাহান্নাম। সন্তানের সুখ, শান্তি ও নিরাপত্তার কথা ভেবে বাবা-মা সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন। এ জন্য সব ধর্মেই বাবা-মাকে সর্বাধিক সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের নির্দেশনায় বাবা-মা যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অন্যায় আদেশ না করবেন, ততক্ষণ তাদের কথা মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। তাদের সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যাতে তাদের প্রতি অশ্রদ্ধাবোধ কিংবা অসম্মান দেখানো হয়। তারাই হলেন সন্তানের জন্য প্রধান পরামর্শদাতা।

বাবা-মায়ের প্রতি সন্তানের অন্যতম কর্তব্য হলো তাদের জন্য দোয়া করা। তাদের জীবদ্দশায় যেমন দোয়া করা, তেমনি তাদের মৃত্যুর পরও এ দোয়া অব্যাহত রাখা। সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত-২৪-এ উল্লেখ আছে, ‘রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি সাগিরা।’ অর্থ, ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের (বাবা-মা) উভয়ের প্রতি দয়া করো; যেভাবে তারা আমাকে শৈশবে লালন করেছেন।’ হাদিসে এসেছে, ‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’ এবং ‘পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হন; আবার পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হন।’ এ রকম পবিত্র কুরআনের অসংখ্য আয়াতে এবং হাদিসে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। একইভাবে সন্তানের প্রতিও পিতা-মাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য সুচারুভাবে বর্ণিত হয়েছে। পিতা-মাতাকে মনে রাখতে হবে, সন্তান মহান সৃষ্টিকর্তার অমূল্য নেয়ামত। সন্তান পৃথিবীতে পিতা-মাতার মান-সম্মান, মর্যাদা বৃদ্ধি করে তাদের প্রতিষ্ঠিত নিয়ম, নীতি ও আদর্শকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়। এমনকি পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও তাদের আদর্শকে জীবিত রাখে সন্তান।

এবার আসা যাক মূল গল্পে। চার সদস্যের একটি পরিবারে বাবা, মা এবং বড় সন্তানের টুথপেস্ট এবং ভিন্ন ভিন্ন টুথব্রাশ নির্ধারিত স্থানেই থাকে। ছোট সন্তানটা একেবারেই ছোট্ট বিধায় দাঁত ব্রাশ করার মতো প্রয়োজনীয়তা এখনো তার হয়নি। তাই বাবা, মা এবং বড় সন্তান যার যার মতো সময় করে নিজেদের প্রয়োজনীয় হাতের কাজ শেষ করে দাঁত ব্রাশ করে। তিনজনের টুথব্রাশ তিন রঙের-সবুজ, নীল ও বেগুনি; ভিন্ন ভিন্ন রঙের, যাতে কারোটির সঙ্গে কারোটি মিশে না যায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজস্ব গতিতে সবকিছু চলতে থাকে। কিছু দিন বাদে বাবার টুথব্রাশের ক্যাপ (প্লাস্টিক কভার) হারিয়ে যায়, যা টুথব্রাশগুলো কেনার সময়ে সঙ্গে দেওয়া ছিল। স্বভাবতই কর্মব্যস্ত দিন ও সময় পার করে বাবার এ নিয়ে অতটা চিন্তাভাবনা থাকে না। কারণ, সন্তানের নিরাপত্তা বাবা-মায়ের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই সন্তানের প্রতি সহজাতভাবেই বাবা-মা সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখেন, তাদের প্রতিনিয়ত সুস্থভাবে বড় করাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

বাবা একদিন লক্ষ করেন, সন্তানের টুথব্রাশ ক্যাপ ছাড়া। তাই তিনি তার সন্তানের টুথব্রাশে ময়লা ধরবে বিধায় নিজের নীল রঙের টুথব্রাশের ক্যাপ (প্লাস্টিক কভার) খুলে ছেলের সবুজ রঙের টুথব্রাশে পরিয়ে দেন। এটা স্বাভাবিকভাবেই সন্তানের প্রতি বাবা কিংবা মায়ের খেয়ালে চলে আসার কথা। কিন্তু অবাক করার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় সন্তানও যখন দেখে বাবার টুথব্রাশটি ক্যাপ ছাড়া, সে তখন নিজের সবুজ রঙের টুথব্রাশের ক্যাপ খুলে বাবার নীল রঙের টুথব্রাশে পরিয়ে দেয়। বাবাও যথারীতি নিজের নীল রঙের টুথব্রাশের ক্যাপ (প্লাস্টিক কভার) খুলে ছেলের সবুজ রঙের টুথব্রাশে পরিয়ে দেন। আর এভাবেই পৌনঃপুনিকভাবে বাবা ও ছেলের মধ্যে একে অপরের প্রতি খেয়ালের অংশ হিসাবে টুথব্রাশের ক্যাপ বদলাবদলি হতে থাকে।

কয়েকদিন এমন চলতে থাকলে বাবা একটু অবাকই হলেন, তাদের মাত্র ৯ বছরের ছেলেটা কিভাবে এতটা অনুধাবন করতে পারল, কেমন করে এতটা কেয়ারিং হলো! তিনি সন্তানের মাকে বিষয়টা দেখান। বিষয়টা খুবই সামান্য, কিন্তু এর গভীরতা অনেক বেশি। সন্তানকে নিয়ে তাই তাদের গর্ব হলো, ছেলেটা যেন এমনই মানবিক হয়ে বেড়ে ওঠে এবং অনাগত দিনগুলোতেও পরিবারের চিরচেনা বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। আমাদের কর্মব্যস্ত জীবনে অবশ্যই প্রত্যেক সন্তানের সুস্থ বিকাশে বাবা-মায়ের যথাসাধ্য খেয়াল রাখা উচিত। চলমান জীবনে ঘটে যাওয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এমন উদাহরণগুলো আমাদেরকে চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাস্তবতার মধ্য দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়।

মূলত সমস্যা ছিল একটাই-টুথব্রাশ তিনটি, কিন্তু প্লাস্টিক ক্যাপ দুটি। তাই দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে একে অপরের টুথব্রাশ জীবাণুমুক্ত রাখতেই বাবা-ছেলের মধ্যে ভালোবাসার এই প্রাণান্তকর লুকোচরি খেলা। আর এর পেছনে রয়েছে পারিবারিক ভালোবাসার সহজাত প্রবৃত্তি। এ সন্তান বড় হয়েও যেন বাবা-মায়ের বৃদ্ধ বয়সটাকে প্রশান্তিময় করে তোলে, এ প্রত্যাশা করাই স্বাভাবিক। প্রতিটি পরিবারেই চির অটুট থাকুক বাবা-মা-সন্তানের এমন বন্ধন।

আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন : পুলিশ সুপার, চুয়াডাঙ্গা

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম