Logo
Logo
×

বাতায়ন

গরিবের সুচিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে

Icon

মিকাইল হোসেন

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গরিবের সুচিকিৎসার সুযোগ বাড়াতে হবে

গত ৭ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়েছে। এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে যে বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তা হলো ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ বা হেলথ ফর অল। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ এখন নিম্ন-মধ্যবিত্তের দেশ। দেশের অর্ধেক মানুষ প্রকৃত অর্থে নিরক্ষর। বর্তমানে বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়নসাধন করেছে, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে। ফলে জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আর এ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রোগব্যধির ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। আধুনিক যুগে রোগব্যধিরও উন্নতি হয়েছে। অনেক বড় বড় রোগ এখন ঘরে ঘরে দেখা যাচ্ছে। আগে কিছু রোগ শুধু ধনীদের মাঝে দেখা যেত, বর্তমানে তা ধনীদের সঙ্গে সঙ্গে গরিবদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে, ধনীদের জীবনযাত্রা গরিবদেরও প্রভাবিত করছে। ধনীদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও খাবার গরিবদের ঘরে চলে আসছে। কারণ অনেক রোগকে বলা হয় সভ্যতার রোগ।

ব্যয়বহুল রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-হার্টের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, ডায়াবেটিস সমস্যা, ক্যানসার, পেটের সমস্যা, স্ট্রোক, হাড় ক্ষয়, টিউমার, নিউরো সমস্যা, থ্যালাসেমিয়া, থাইরয়েড ইত্যাদি। এসব ব্যয়বহুল রোগের কারণগুলো মোটামুটি একই রকম, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ভেজাল খাবার খাওয়া, পরিশ্রম না করা, অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া, ধূমপান, অ্যান্টিবায়েটিক ও ব্যাথানাশক ওষুধ সেবন এবং চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া। বড় রোগগুলোর আবার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা রয়েছে। লিভার সমস্যার মধ্যে রয়েছে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। কিডনি রোগের মধ্যে রয়েছে কিডনি ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্লান্ট। হার্টের সমস্যার মধ্যে রয়েছে-হার্ট অ্যাটাক, রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য রিং ব্যবহার, বাইপাস সার্জারি।

ক্যানসারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টিউমার, যার মধ্যে ব্রেইন টিউমার অন্যতম। দেশে বর্তমানে এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাখ লাখ, যাদের বেশির ভাগই গরিব মানুষ। প্রতিটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দেখলে বিষয়টি সহজেই বোঝা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, দেশে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ১৫ লাখ, যা ২০৩৫ সালে দাঁড়াবে ৩২ লাখে। প্রতিবছর ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে ২ লাখ মানুষ। বর্তমানে ক্যানসারজনিত মৃত্যু ১.৫ লাখ। জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ বা দুই কোটি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে কিডনি রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা ২০২১ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। দেশে বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ মারা যায় হার্টের সমস্যায়। পৃথিবীর অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কম বয়সে হার্টের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গবেষণা অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বের তুলনায় এ হার ১৭ গুণ বেশি। সাধারণত ৬০ বছর বয়সে প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে।

কিন্তু আমাদের দেশে ৩৫ বছরের কম বয়সি অনেক মানুষের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বের ৫৪ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখের মতো। আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি মানুষ জানে না নিজের রোগটি সম্পর্কে। ডায়াবেটিস রোগের কারণে বাড়ছে অন্ধত্ব, হার্টের সমস্যা, কিডনি রোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি। লিভার রোগে আক্রান্ত রোগীর সঠিক পরিসংখ্যান বাংলাদেশে না থাকলেও তথ্যমতে, দেশে প্রায় ৪.৫ কোটি মানুষ লিভার রোগে আক্রান্ত এবং ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিসে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। রোগীর সংখ্যা কমাতে না পারলে বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা করা আমাদের দেশের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।

সাধারণ মানুষ তাদের অসচেতনতার কারণে এসব ব্যয়বহুল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যার চিকিৎসাব্যয় বহন করা গরিব রোগীদের পক্ষে সম্ভব নয়। এসব রোগের চিকিৎসা অনেক সময় দেশে সম্ভব হয় না। আর কিছু রোগের চিকিৎসা দেশে সম্ভব হলেও খরচ লাখ লাখ টাকা, যা বহন করা গরিব মানুষের পক্ষে তো সম্ভব নয়ই, ক্ষেত্রবিশেষে মধ্যবিত্তও বহন করতে গিয়ে গরিব হয়ে যাচ্ছে। জীবনের সঞ্চিত সঞ্চয় দিয়েও রোগীর চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সরকারি হাসপাতালে বড় বড় রোগের অপারেশনের সিরিয়াল পেতে গেলে যে সময় লাগে, ততক্ষণ অনেক রোগী মারা যায়। আর বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার সামর্থ্য গরিব মানুষের থাকে না। ফলে তাদের বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

কিছু রোগের জন্য রোগী দায়ী থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের অবহেলাও এর জন্য দায়ী; যেমন, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধের কারণে সৃষ্ট রোগের জন্য দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করাই যায়। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। তাই হয় ভেজাল খাদ্য বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হবে।

বাংলাদেশ যদিও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় অনেক উন্নতি করেছে, কিন্তু বড় রোগের চিকিৎসায় কোটি কোটি রোগীকে টেকসই সেবা দিতে পারছে না। তাহলে গরিব মানুষের ব্যয়বহুল চিকিৎসার দায়িত্ব কে নেবে? অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী, সবার জন্য বড় রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোটি কোটি অসুস্থ নাগরিক নিয়ে উন্নত দেশ গড়া সম্ভব নয়। তাই রোগের সব উৎস যে কোনো উপায়ে বন্ধ করতে হবে।

মিকাইল হোসেন : উপাধ্যক্ষ (শিক্ষা), পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলেজ, সাভার, ঢাকা

mekailduaeresc@gmail.com

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম