Logo
Logo
×

বাতায়ন

ডিজিটালাইজেশন, তথ্যবিভ্রাট ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

Icon

ড. ফারজানা মাহমুদ

প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ডিজিটালাইজেশন, তথ্যবিভ্রাট ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা

ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে বিভ্রান্তি এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে যে, তথ্যের নৈতিক সংরক্ষণ এবং নিরাপদ তথ্য প্রেরণ আগের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

বাকস্বাধীনতা এবং তথ্যের আদান-প্রদান বিশ্বব্যাপী ভারসাম্যহীন বলে মনে হচ্ছে। ফ্লোরিডায় ব্লগাররা একটি বিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, যা তাদের রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবন্ধন করতে বাধ্য করতে পারে, যদি তারা সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট লেখেন।

উইকিলিকসের প্রকাশক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধের লগ এবং গুয়ানতানামো বন্দিদের দুরবস্থা প্রকাশ করায় ১৮টি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যার জন্য অ্যাসাঞ্জের ১৭৫ বছরের কারাদণ্ডের সম্ভাবনা রয়েছে।

মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক ও টুইটার থেকে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে অপসারণে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন। এমন অনেক উদাহরণ আছে, যা আমাদের ভাবায়।

ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো বাংলাদেশের জন্য একটি বিশেষ উদ্বেগের বিষয়, যেখানে জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ সাইবার নিরাপত্তা এবং আইনি অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ছাড়াই ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। নাগরিকদের জন্য নিরাপদ ডিজিটাল প্ল্যাটফরম নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়, যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬-কে প্রতিস্থাপন করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত, জাতির পিতা, জাতীয়তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কোনো মিথ্যা প্রচারণা নিষিদ্ধ করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মর্যাদা ও সঠিক ইতিহাস রক্ষা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। ১৯৭৫ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে ফেলার বহু ষড়যন্ত্র ও অপচেষ্টা করা হয়েছে। এটি আমাদের ইতিহাস সংরক্ষণের জন্য আইনি বিধান করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতির পিতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মুক্তিযুদ্ধের তথ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের অবদানকে ক্ষুণ্ন করে বিশেষ কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য মিথ্যা আখ্যান গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ দেওয়া মানে দেশের লাখ লাখ নারী-পুরুষের আত্মত্যাগকে ক্ষুণ্ন করা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উৎসাহিত করা।

নাৎসি মতাদর্শের প্রচার এবং হলোকাস্টকে অস্বীকার করা ইউরোপিয়ান কনভেনশন অন হিউম্যান রাইটসের (ইসিএইচআর) অধীনে বাকস্বাধীনতার সুরক্ষার পরিপন্থি (অনুচ্ছেদ ১০)। ডিআইআই বনাম জার্মানি মামলায় দেখা যায়, আবেদনকারী, যিনি একজন ইতিহাসবিদ ছিলেন, তিনি একটি জনসভায় আউশভিৎজে নাৎসি গ্যাস চেম্বারগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করেছিলেন। এ মামলায় ইউরোপিয়ান কমিশন অন হিউম্যান রাইটস বলেছে, তার বিবৃতিগুলো জাতিগত ও ধর্মীয় বৈষম্যের পক্ষে এবং কনভেনশনের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত শান্তি ও ন্যায়বিচারের নীতির বিপরীতে। কমিশন উল্লেখ করে, অপরাধ প্রতিরোধে জনস্বার্থ এবং ইহুদিদের অধিকার রক্ষার প্রয়োজনীয়তায় নাৎসিদের অধীনে ইহুদিদের ওপর নির্যাতনকে অস্বীকার করে দেওয়া বক্তব্য একটি গণতান্ত্রিক সমাজে আবেদনকারীর বাকস্বাধীনতাকে ছাড়িয়ে যায়। ২০০২ সালে একজন ফরাসি কার্টুনিস্টকে সন্ত্রাসবাদে উৎসাহিত করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল; কারণ তিনি একটি ম্যাগাজিনে টুইন টাওয়ারে হামলার প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি চিত্রে একটি ক্যাপশন ব্যবহার করেছিলেন, যা একটি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনের স্লোগানের প্যারোডি : ‘আমরা সবাই এটার স্বপ্ন দেখেছি...হামাস এটা করেছে’ (সিএফ ‘সনি এটা করেছে’)। আদালত উল্লেখ করেন, কার্টুনিস্ট ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১-এর হামলার অপরাধী হিসাবে যাদের অনুমান করেছিলেন, তাদের প্রতি তার নৈতিক সমর্থন প্রকাশ করেছেন এ চিত্রায়ণের মাধ্যমে, যা হামলায় নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। ৯/১১ বা হলোকাস্টের শিকার ব্যক্তিদের মর্যাদা সম্পর্কিত উপরিউক্ত পর্যবেক্ষণগুলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ও বীরাঙ্গনাদের মর্যাদা রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২১-এর অধীনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিভাষাটিকে আইনের অপব্যবহারের ঝুঁকি রোধ করার জন্য স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করা উচিত।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৭ জনশৃঙ্খলা, অন্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করার উদ্দেশ্যে বা বিদেশি রাষ্ট্র বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির উপকার করার উদ্দেশ্যে করা কোনো সাইবার অপরাধকে সাইবার সন্ত্রাস বলে উল্লেখ করে। এ ধারাটি যে কোনো সাইবার অপরাধকেই সাইবার সন্ত্রাস হিসাবে গণ্য করে না। ভারতের দ্য ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট ২০০০ ওইসব সাইবার অপরাধকে সাইবার সন্ত্রাস হিসাবে আখ্যায়িত করে, যা ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, রাষ্ট্রটির নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং দেশে জনশৃঙ্খলা নষ্ট করতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (আইসিসিপিআর) এবং ইসিএইচআর জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা, জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে একটি গণতান্ত্রিক সমাজে আইনের বিধিসাপেক্ষে বাকস্বাধীনতাকে সীমিত করার অনুমতি দেয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৮ ইলেকট্রনিক বিন্যাস বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এমন কিছু সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধকে আঘাত করতে পারে। অনুভূতি একটি বিমূর্ত ও বিস্তৃত শব্দ, তাই এটি কোনো বিষয়বস্তু অনুমোদিত এবং সুশীলসমাজ বা সাধারণ মানুষ কীভাবে অভিব্যক্তিকে প্রকাশ করবে, সে সম্পর্কে অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি করতে পারে। যদিও আমাদের বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থা বিশেষভাবে কোনো ঘৃণাসূচক বক্তব্য, যা অপরাধকে উসকে দেয় তার উল্লেখ করে না, তবে এটি সাংবিধানিক আদেশে অন্তর্নিহিত আছে। দেওয়ান আবদুল কাদের বনাম বাংলাদেশ (১৯৯৪) মামলাটিতে আদালত পর্যবেক্ষণ করেছে, সংবিধানের ৩৯(২) অনুচ্ছেদে বর্ণিত বাকস্বাধীনতা আইন দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ যেমন: রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জননিরাপত্তা বা কোনো অপরাধের জন্য উসকানি দেওয়া ইত্যাদি সাপেক্ষে মতপ্রকাশ, প্রকাশনা ও প্রচারণাকে বোঝায়। অতএব, অনুচ্ছেদ ৩৯(২)-এর অন্তর্নিহিত ভাবার্থ বিদ্বেষপূর্ণ বা ঘৃণাসূচক বক্তব্য, যা জনশৃঙ্খলা বা শান্তি নষ্ট করতে পারে, সম্প্রদায়ের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করতে পারে বা সহিংসতা উসকে দিতে পারে, তা নিষিদ্ধ করে। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিদ্বেষ বা ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য, যা অপরাধে সহায়ক তা উল্লেখ করলে আইনটির প্রাসঙ্গিক বিধানের কোনো ভুল ব্যাখ্যা ও অপব্যবহার বন্ধ হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে যে কোনো প্রাঙ্গণে তল্লাশি করার, কোনো কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং সার্ভার জব্দ করার, যে কোনো ব্যক্তিকে তল্লাশি করার এবং ওয়ারেন্ট ছাড়াই কাউকে গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেয় শুধু এ সন্দেহের ভিত্তিতে যে, ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড বর্ডার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৯ বর্ডার এজেন্টদের বর্ডার ক্রসিংয়ে দেশের অর্থনীতি এবং জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলে এমন বৈরী কার্যকলাপ শনাক্ত করতে এজেন্টদের যুক্তিসংগত সন্দেহের পরিপ্রেক্ষিতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস তল্লাশি এবং গ্রেফতার করার ক্ষমতা দেয়। তবে যুক্তরাজ্যের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যাক্টের বিপরীতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ৪৩-এর পরিধি অপরাধের ব্যাপ্তি ও অঞ্চলের দিক থেকে প্রশস্ত। তাই কর্তৃত্বের অপব্যবহার অস্বাভাবিক কিছু নয়। পুলিশ অফিসাররা কোন কোন ক্ষেত্রে এ ধরনের ক্ষমতা ব্যবহার করতে পারে, তা নির্দিষ্ট করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৪৩ ধারায় সংশোধন আনা যেতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮ ধারা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশনকে ইন্টারনেটে কোনো তথ্য বা ডেটা অপসারণ এবং ব্লক করার আদেশ দেওয়ার অনুমতি দেয়, যদি তা ডিজিটাল নিরাপত্তা বা সংহতি, আর্থিক কার্যক্রম, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে বা জাতিগত বৈরিতা ও ঘৃণা উসকে দেয়। অনলাইন সেফটি বিল ২০২২-এর অধীনে যুক্তরাজ্য সরকার ক্ষতিকারক বলে বিবেচিত কিন্তু অবৈধ নয় এমন বিষয়বস্তু বা উপাদানগুলোকে ডিজিটাল প্ল্যাটফরম থেকে সরিয়ে ফেলতে বাধ্য করতে পারে। আবার জার্মানির নেটওয়ার্ক এনফোর্সমেন্ট অ্যাক্ট ২০১৭ বৃহৎ সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফরমগুলোকে অবিলম্বে বেআইনি বিষয়বস্তু; যেমন: পাবলিক অফিসের অবমাননা থেকে শুরু করে সহিংসতার প্রকৃত হুমকি রয়েছে এমন উপাদানগুলোকে সরিয়ে ফেলার জন্যে বাধ্য করতে পারে। ভারতীয় দি ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্ট ২০০০-এর অধীনে সরকার ইন্টারনেট ও টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী, ওয়েব হোস্টিং পরিষেবা, অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং সার্চ ইঞ্জিনগুলোকে সামাজিক শৃঙ্খলা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এমন বিষয়বস্তু সরাতে নির্দেশ দিতে পারে। ভারতে আইটি, স্বরাষ্ট্র, আইন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটি যদি সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট বা বিষয়বস্তু অপসারণ করা দরকার, তখন সেটি অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ডিজিটাল বিষয়বস্তু অপসারণ করার ক্ষেত্রে ক্ষমতার যে কোনো স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার এড়াতে বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় মডেল অনুসরণ করতে পারে এবং প্রাসঙ্গিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করে একটি কমিটি গঠন করতে পারে, যারা কোন কোন বিষয়বস্তু অপসারণ করতে হবে তার ওপর মতামত দেবেন।

বিশ্বায়িত ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা বা বৈষম্য ও ঘৃণা দূর করা চ্যালেঞ্জিং। ইসিএইচআরের অধীনে বেআইনি বলে বিবেচিত অভিব্যক্তিগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুরক্ষিত, যেমন: বর্ণবাদী বা ঘৃণামূলক বক্তব্য। ফ্রান্সকে ফরাসি আইন মেনে চলতে হয়, যা নাৎসি স্মৃতিচিহ্ন নিষিদ্ধ করে, কিন্তু এর মার্কিন সদর দপ্তরের এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এ উদাহরণগুলো বোঝায় যে, মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সর্বজনীন মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত করা জটিল ব্যাপার, কারণ একটি দেশের আইন সেই নির্দিষ্ট সমাজের প্রেক্ষাপট, নৈতিক মূল্যবোধ ও প্রয়োজনকেও প্রতিফলিত করে।

বাংলাদেশে প্রায় ৭ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাই বিশ্বস্ত ও নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করা সহজ নয়। ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্যের ওপর যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও তত্ত্বাবধান সাম্প্রদায়িক হামলা নিশ্চিহ্ন করতে পারে, নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস তৈরি করতে পারে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকেও উন্নত করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানবাধিকারের একটি অপরিহার্য উপাদান, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন মানবাধিকার লঙ্ঘনকেও তীব্রতর করে। তাই আইন ও বিধিনিষেধের অনুশীলন সেই অনুযায়ী গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু পদ্ধতিগত ও বাস্তবায়নের সমস্যা রয়েছে। পদ্ধতিগত ও বাস্তবায়ন উভয় সমস্যাই আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপট ও নৈতিক মূল্যবোধ বিবেচনা করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

ড. ফারজানা মাহমুদ : আইনজীবী ও গবেষক

 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম