বঙ্গবাজার ট্র্যাজেডি
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে
সাজ্জাদ হোসাইন
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবাজার মার্কেটে যে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সে প্রসঙ্গে বলতে হয়, ওখানে আগুন লাগা ও তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করার সব ধরনের সহায়ক পরিবেশ ছিল।
যেমন: এটি ছিল কাপড়ের মার্কেট। কাপড় ও তুলায় আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এ মার্কেটে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল না। অপ্রশস্ত সড়কের কারণে আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের পর্যাপ্তসংখ্যক গাড়ি মার্কেটটির চারপাশে দাঁড়ানোর জায়গাও ছিল না।
আমি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থাকাকালে ‘অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে ওই মার্কেটে বহুবার ব্যানার টানিয়ে দিয়েছি।
বর্তমানে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তবে নানা কারণে ফায়ার সার্ভিস ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। কোথাও আগুন লাগলে শত শত মানুষ সেখানে গিয়ে ভিড় করে। রাস্তা আটকে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে। এ কারণে দমকলকর্মীরা ঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল বিঘ্নিত হয়। পানির উৎসেরও সমস্যা আছে। বঙ্গবাজার মার্কেটে অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে প্রচুর মালামাল রাখা হতো। এগুলোর সবই দাহ্যপণ্য। তুলা ও কাপড়ে আগুন লাগলে তা দ্রুত নিচের দিকে চলে যায়। ওপরের আগুন নিভলেও ভেতরে থেকে যায়। নেভাতে সময় লাগে। দমকলকর্মীরা বঙ্গবাজার মার্কেটের ভেতরে ঢুকে যে আগুন নেভাবে সেই সুযোগও ছিল না। ঠিকভাবে বাতাস চলাচলের জায়গাও সেখানে ছিল না। এজন্যই আমরা আগে ব্যানার টানিয়ে দিয়েছিলাম।
এ ধরনের আগুন নেভাতে হেলিকপ্টারের সাহায্যে ওপর থেকে পানি ছিটিয়ে খুব একটা লাভ হয় না। ফায়ার ফাইটারদের ভিতরে গিয়ে পানি দিতে হয়। কিন্তু ওই এলাকার মার্কেটগুলোর যে স্ট্রাকচার, তাতে ভেতরে গিয়ে পানি দেওয়া কঠিন। প্রতিটি দোকানে তাৎক্ষণিক আগুন নেভানোর উপকরণ থাকলে আজ হয়তো এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। এসব মার্কেট ও শপিংমলে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেউ তা মানে না। আবার আমরা সব সময় আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিতে পারি না। ফায়ার সার্ভিসের আইনে সর্বনিম্ন সাজা তিন বছর। অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সর্বোচ্চ দুই বছর সাজা দিতে পারে। অর্থাৎ আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও ফায়ার সার্ভিস আইনে শাস্তি দিতে পারি না। আইনের এসব দুর্বলতা দূর করা দরকার।
অগ্নিদুর্ঘটনা কমাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে ঝুঁকি অপসারণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
সাজ্জাদ হোসাইন : সাবেক মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর