Logo
Logo
×

বাতায়ন

স্মৃতির পাতায় শপথ দিবস

Icon

তোফায়েল আহমেদ

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্মৃতির পাতায় শপথ দিবস

মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারি মাস এটি। মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান তুলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ রোপণ করে আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে।

আর আজ তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্র ও উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দেশের মানুষ অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে ও উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। রাষ্ট্র ক্রমেই জনকল্যাণমুখী হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষ গুরুত্ববহ। ১৯৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলনে বাংলার সংগ্রামী ছাত্রসমাজ রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে মাতৃভাষা বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে। আর ’৬৯-এর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সংগ্রামী ছাত্র-জনতা দেশব্যাপী তুমুল গণ-আন্দোলন সংঘটিত করে দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার ‘ভোটাধিকার’ অর্জন এবং সব রাজবন্দিসহ প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করে। সত্যিকার অর্থেই ’৫২-এর রক্তধারা ’৬৯-এর রক্তস্রোতে মিশে ’৭১-এ এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের উন্মেষ ঘটায়। বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এ এক ঐতিহাসিক পরম্পরা।

’৬৯-এর ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডাকসু’ কার্যালয়ে চার ছাত্রসংগঠনের নেতৃত্বে আমার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ডাকসুর ভিপি হিসাবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব আমার ওপর অর্পণ করা হয়। দশজন ছাত্রনেতার উপস্থিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফরম ‘কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করে ছয় দফা দাবি আদায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে ছয় দফাকে দাড়ি, কমা, সেমিকোলনসমেত ১১ দফার ৩ নম্বর দফায় অন্তর্ভুক্ত করে ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষিত হয়। বস্তুত, ১১ দফা ছিল ছয় দফারই সম্প্রসারিত রূপ; যাতে ধারিত ছিল বাংলার মানুষের জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।

উনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা ১১ দফার প্রতি ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীসহ বাংলার সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন আদায় করতে পেরেছিলাম। এরই প্রতিফলন দেখতে পাই আমাদের ঘোষণার স্বতঃস্ফূর্ত বাস্তবায়নে। আমরা সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম গুলিস্তানে এখন যেখানে মহানগর নাট্যমঞ্চ, তার পাশের পার্কটি হবে শহিদ মতিউরের নামে ‘মতিউর পার্ক’; যেটি ছিল আইয়ুব গেট, সেটির নামকরণ শহিদ আসাদের নামে ‘আসাদ গেট’; আর দ্বিতীয় রাজধানী হিসাবে ঘোষিত আইয়ুব নগরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলার কৃষক দরদি নেতা শেরেবাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের নামে ‘শেরেবাংলা নগর’। মুক্তিকামী বিক্ষুব্ধ জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ওই স্থানগুলোয় শহিদদের নামে নামাঙ্কিত ফলক স্থাপন করে। ২৪ জানুয়ারি গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের সর্বত্র সর্বব্যাপী গণবিক্ষোভ এমন ছিল যে, স্বৈরশাসক ভীত হয়ে ২৫, ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি সান্ধ্য আইন বলবৎ রাখে।

২৭ জানুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র গণবিক্ষোভ অব্যাহত থাকে। ১ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান বেতার ভাষণে রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলেন। রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে রেখে এবং ১১ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হবে না-পরিষ্কার জানিয়ে দিয়ে আমরা আইয়ুব খানের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করি। ৬ ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশরক্ষা আইন ও অর্ডিন্যান্সের প্রয়োগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ১১ দফা দাবির ২ নম্বর দফাটি ছিল, ‘জনসংখ্যার ভিত্তিতে জাতীয় পরিষদের আসন বণ্টনসহ প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে হইবে। দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার উপর হইতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করিতে হইবে।’ এ দাবির একাংশ মেনে নিয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাকের ছাপাখানা নিউ নেশন প্রিন্টিং প্রেসের ওপর থেকে স্বৈরশাসক আরোপিত বাজেয়াপ্ত আদেশ এবং দৈনিক ইত্তেফাকের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। ’৬৯-এর ২৫ মার্চ আইয়ুব খান পদত্যাগ করলে ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা গ্রহণ করে এলএফও (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার) জারি করেন এবং ‘প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার’ প্রদান ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের ঘোষণা দেন।

৯ ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন এবং এ দিনেই গণ-আন্দোলন ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। এদিন পল্টনে আমার জীবনের প্রথম জনসভা। পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ‘শপথ দিবস’ পালিত হয়। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আমরা দশজন ছাত্রনেতা লাখো মানুষের সামনে জীবনের বিনিময়ে ১১ দফা দাবি আদায়ের ‘শপথ গ্রহণ’ করি। জনসভা তো নয়, যেন বিশাল এক গণমহাসমুদ্র! চারদিক কানায় কানায় পরিপূর্ণ। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কাজ বন্ধ রেখে দাবি আদায়ে কারখানার শ্রমিক, মেহনতি কৃষক, নৌকার মাঝি, জেলে, কামার-কুমার-তাঁতি, ছাত্র, অফিসের কেরানি, মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী সবাই জনসভায় ছুটে এসেছে প্রাণের টানে। মানুষ ঠাঁই নিয়েছে স্টেডিয়ামের দোতলা-তিনতলার বারান্দায়, কার্নিশে। যে যেখানে পেরেছে স্থান করে নিয়েছে। গণতরঙ্গে উত্তাল বিশাল সেই জনসভায় আগত জনসাধারণ ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ। তাদের মুখে ছিল স্বাধিকারের দৃপ্ত স্লোগান, আর চোখ ছিল দুর্জয় সংকল্পে অটল। সেই অভূতপূর্ব দৃশ্যপট এখনো আমার স্মৃতিতে অম্লান। দেশের বিভিন্নমুখী সমস্যার কথা উল্লেখ করে, ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি ব্যাখ্যা করে, ছাত্রদের রাজনীতি করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে, আইয়ুব খান প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক প্রশ্নে ছাত্রসমাজের অভিমত ব্যাখ্যা করে দশজন ছাত্রনেতার প্রত্যেকের কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল-“অবিলম্বে আইয়ুব খানের পদত্যাগ, বর্তমান শাসনতন্ত্র বাতিল, রাজবন্দিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং ১১ দফা দাবির ভিত্তিতে দেশের জন্য একটি সম্পূর্ণ নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে ‘এক মাথা এক ভোট’ দাবি অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ ভোটে গণপরিষদ গঠন।” সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক এবং সভার সভাপতি হিসাবে পিনপতন নীরবতার মধ্যে একটানা ৪৫ মিনিট বক্তৃতা করি। বক্তৃতা শেষে সমবেত জনতার তুমুল গর্জনের সঙ্গে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান তুলি-‘শপথ নিলাম শপথ নিলাম মুজিব তোমায় মুক্ত করবো; শপথ নিলাম শপথ নিলাম মাগো তোমায় মুক্ত করবো।’ ভাবতে আজ কত ভালো লাগে-ঐতিহাসিক শপথ দিবসের এ স্লোগানের দুটি লক্ষ্যই সংগ্রাম ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জন করেছি। সোনার বাংলার ৩৯ জন সোনার সন্তানের প্রাণের বিনিময়ে ’৬৯-এর ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয়নেতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করে, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে ৬ দফা ও ১১ দফার পক্ষে গণরায় নিয়ে, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষাধিক মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করে সেদিনের সেই শপথবাক্য আমরা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘ডাক’ (ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি)-এর আহ্বানে অর্ধদিবস হরতাল পালন এবং পল্টনের জনসভায় জনতার দাবির মুখে প্রিয় নেতার ছবি বুকে ঝুলিয়ে বক্তৃতা করি। সেদিনের জনসভায় সংগ্রামী জনতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আপনারা কি প্রিয় নেতা শেখ মুজিব ছাড়া গোলটেবিল বৈঠক চান? আপনারা কি প্রিয় নেতা শেখ মুজিবের প্যারোলে মুক্তি চান?’ জনতা সমস্বরে বলেছিল, ‘না, চাই না।’ তখন বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির কথা প্রচার করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর প্রিয় সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন।

’৬৯-এর গণ-আন্দোলন সমগ্র জাতিকে উজ্জীবিত করে ৯ ফেব্রুয়ারি এক মোহনায় শামিল করেছিল। সেদিন পল্টনের জনসভা শেষে সংগ্রামী ছাত্র-জনতার বিক্ষুব্ধ মিছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে। পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় আমরা তৎক্ষণাৎ সেখানে যাই এবং বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাকে শান্ত করে ইকবাল হলে (বর্তমান শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ফিরিয়ে আনি। স্বৈরশাসকের শত উসকানি সত্ত্বেও আমরা নৈরাজ্যের পথে যাইনি। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই আন্দোলন করেছি। নিজেদের মধ্যে মত ও পথের ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও আমরা সেদিন ১১ দফা দাবি আদায়ের প্রশ্নে ছিলাম ঐক্যবদ্ধ।

আজ সেই সোনালি অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলে মনে হয়, কী করে এটি সম্ভব হলো? তখন বঙ্গবন্ধুর বিচার চলছে। ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ অর্থাৎ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বলে যে মামলাকে অভিহিত করা হয়েছিল, সেই মামলার বিচার চলছে। বঙ্গবন্ধু তখন ফাঁসির মঞ্চে। আমরা জাগ্রত ছাত্রসমাজ শুধু ঐক্যবদ্ধ হইনি, গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমরা যখন পল্টনে মিটিং করি, তখন সচিবালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস বন্ধ করে জনসভায় ছুটে আসত। সেদিনের জনসভাগুলো শুধু পল্টন ময়দানেই সীমাবদ্ধ থাকত না, আশপাশের এলাকাসহ সমগ্র মতিঝিল, শাপলা চত্বর থাকত কানায় কানায় পরিপূর্ণ। সেই দিনগুলোয় আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা সর্বব্যাপী গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছিলাম। শপথ দিবসের সেই জনসমুদ্রে লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে মরণপণ শপথ নিয়েছিলাম। ১৪ ফেব্রুয়ারি পল্টন ময়দানে ‘ডেমোক্র্যাটিক অ্যাকশন কমিটি’ তথা ‘ডাক’-এর মানুষ নুরুল আমিনকে প্রত্যাখ্যান করে মঞ্চে আমাদের তুলে নিলে যে বক্তৃতা আমরা করেছিলাম, যে ম্যান্ডেট নিয়েছিলাম, সেই ম্যান্ডেট আমরা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করেছি।

১৫ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত্রিবেলা সার্জেন্ট জহুরুল হককে হত্যা করে আবার কারফিউ জারি করা হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা-যিনি নিজের বুক পেতে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার ছাত্রদের গুলি করার আগে আমার বুকে গুলি চালাতে হবে’-তার বুকে প্রথমে গুলি পরে বেয়নেট চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এর প্রতিবাদে সমগ্র দেশ গণজাগরণ-গণবিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এবং অমর একুশে ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক দিনে পল্টন ময়দানে লাখো জনতার সামনে প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তিদানের আলটিমেটাম দিয়েছিলাম, যার পরিপ্রেক্ষিতে ২২ ফেব্রুয়ারি প্রিয় নেতাকে মুক্তি দিতে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়েছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি আমরা সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে, আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসংবর্ধনার আয়োজন করি। ১০ লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এ গণসংবর্ধনায় বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করি। ৯ ফেব্রুয়ারির পর আমাদের জাতীয় নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মণি, আবদুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেনন, ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকীসহ যারা কারাগারে বন্দি ছিলেন, তারা সবাই এবং পরবর্তীকালে পর্যায়ক্রমে মণি সিংহ, মতিয়া চৌধুরীসহ সব রাজবন্দি মুক্তিলাভ করেন। আগরতলা মামলায় ৩৫ জন আসামি ছিলেন। তন্মধ্যে সার্জেন্ট জহুরুল হক শহিদ হন। আর বাকি ৩৪ জনকে নিঃশর্ত মুক্তিদানে স্বৈরশাসক বাধ্য হয়। তখন কারাগার রাজবন্দি শূন্য। ৯ ফেব্রুয়ারি আন্দোলন আর ১১ দফার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেদিন আন্দোলন ১ দফায় চলে যায়। প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেই আমরা ঘরে ফিরেছি।

প্রতিবছর এ দিনগুলো জাতীয় জীবনে ফিরে আসে। বঙ্গবন্ধু তার প্রতিটি মিটিংয়ে যখন বক্তৃতা করতেন, সেই ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের কথাগুলো বলতেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বক্তৃতায়ও তিনি ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করেছেন। আমার লাইব্রেরি রুমে বসে যখন ’৬৯ ও ’৭১-র সেই দিনগুলোর ছবি ও পত্রিকার পাতাজুড়ে প্রতিবেদনগুলো দেখি, তখন আনন্দে বুক ভরে যায় এই ভেবে যে, একদিন আমরা গৌরবোজ্জ্বল এই দিনগুলো সৃষ্টি করেছিলাম।

তোফায়েল আহমেদ : আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ

tofailahmed69@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম