Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

সীমান্তে হত্যা বন্ধ হোক

Icon

নাদিরা হক অর্পা

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সীমান্তে হত্যা বন্ধ হোক

সংগৃহীত ছবি

সীমান্ত হত্যা হলো একটি দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বা অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত হত্যাকাণ্ড। এটি সাধারণত অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান বা ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা ঘটে, তবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এটি একটি গুরুতর মানবাধিকার ইস্যু হিসাবে উঠে এসেছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রায়ই বাংলাদেশি নাগরিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগের কারণ।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার (২,৫৪৬ মাইল) দীর্ঘ আন্তর্জাতিক সীমানায় অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালানসহ নানা কারণে বছরে বহুবার সীমান্ত অঞ্চলে হত্যাকাণ্ড ঘটে। সীমান্তে চোরাচালান ও বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিতর্কিত শ্যুট-অন-সাইট (দেখামাত্র গুলি) নীতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এখনো বহাল আছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে বিএসএফ কারণে-অকারণে বাংলাদেশি নাগরিককে গুলি করতে পারে।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ বেসামরিক বাংলাদেশি হত্যার অভিযোগ আছে। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী দ্বারা কমপক্ষে ১৭ বাংলাদেশি হত্যা ও বিভিন্ন নির্যাতনের দৃষ্টান্ত নথিভুক্ত করে। কলকাতাভিত্তিক এনজিও ‘মাসুম’ সীমান্ত এলাকার যে তথ্য উদঘাটন করে, তাতে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় গুলি চালনার হার কমলেও বিএসএফ সন্দেহভাজনদের আক্রমণাত্মক ভীতি প্রদর্শন, নিষ্ঠুরভাবে প্রহার ও নির্যাতন করে। বিগত ১০ বছরে প্রায় ১,০০০ মানুষ ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নিহত হয়, যার বেশির ভাগই বাংলাদেশি। সীমান্ত এলাকায় অনেক ক্ষেত্রে নিরস্ত্র ও অসহায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ডের পরিষ্কার প্রমাণ সত্ত্বেও, এখন পর্যন্ত কাউকেই এ জন্য অভিযুক্ত করা হয়নি।

ভারতীয় কর্মকর্তারা বিএসএফের আচরণের পরিবর্তন এবং ‘শ্যুট-অন-সাইট’ নীতি বাতিল করার অঙ্গীকার করেছেন। তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারকারী বা পাচারকারীদের ধরতে অহিংস উপায় ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন। যদিও বাস্তবে তা এখনো কার্যকর হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে ভারত থেকে গরু রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপরও চোরাইপথে গরু আসছে। হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন মূলত রাখাল শ্রেণির চোরাকারবারিরা। ২০১১ সালে সীমান্তে ফেলানি হত্যার নির্মম ঘটনা বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে। এর বছর ছয়েক পরে ২০১৮ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সীমান্ত সম্মেলনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করার প্রতিশ্রুতি দেয় ভারত। সেই প্রতিশ্রুতি তারা রাখেনি। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারত বারবার আশ্বাস দিলেও সেটার বাস্তবায়ন শূন্যের কোঠায়। যার সবশেষ প্রমাণ, ২৪ অক্টোবর নেত্রকোণা সীমান্তে যুবকের মরদেহ উদ্ধার।

সীমান্ত হত্যা একটি মর্মান্তিক এবং দীর্ঘদিনের সমস্যা, যা বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয় কষ্ট বয়ে আনে। এ সমস্যার সমাধান করতে দুই দেশের সরকারের মধ্যে কার্যকর ও আন্তরিক আলোচনা প্রয়োজন। সীমান্তে কার্যকর নজরদারি, যৌথ টহল এবং মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড কমানো সম্ভব। জনগণের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কণ্ঠ আরও জোরালো হওয়া উচিত এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে চাপ প্রয়োগ করা জরুরি।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম