
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
বাজারে স্বস্তি ফিরুক

এমদাদুর রহমান উদয়
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংগৃহীত ছবি
আরও পড়ুন
রমজান ঘিরে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি নতুন নয়। রমজান শুরুর কয়েক মাস আগেই আমাদের দেশে মূল্যবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিছু স্বার্থান্বেষী ও অসাধু ব্যবসায়ীর দৌরাত্ম্যরে কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। রমজান আমাদের সংযমের শিক্ষা দিলেও ব্যবসায়ীদের একটা অংশ একে উচ্চ মুনাফা লাভের সুযোগ হিসাবে নিয়ে থাকে, যা এ পবিত্র মাসের সংযমের শিক্ষার বিপরীত। তবে এসব ব্যবসায়ীর এ বিষয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই বললেই চলে। ফলে রমজানে বাজার মনিটরিং ও বিশেষ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেও অনেক ক্ষেত্রে এই দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না।
রমজানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে দেখা যায়। অনেক পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্তও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এছাড়া রমজান উপলক্ষ্যে বিশেষ কিছু খাদ্যপণ্য যেমন-খেজুর, শসা, ছোলা, চিনি ইত্যাদির চাহিদা বৃদ্ধির প্রবণতা রয়েছে। অনেকেই রমজানের শুরুর দিকেই এসব পণ্য কিনে ঘরে মজুত করে রাখেন। আর এই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নেয় বাজার সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীরা। রমজানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য উপদেষ্টা পণ্য সরবরাহের ঘাটতি না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও অনিয়মের বেড়াজালে তা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য মুসলিম দেশে রমজান উপলক্ষ্যে খাদ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেদিক থেকে আমাদের দেশ যেন পুরোপুরি বিপরীত।
রমজান এলেই যেন সরব হয়ে ওঠে ভোজ্যতেলের সিন্ডিকেট। বর্তমানে ক্রেতাদের মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের চাহিদা বাড়লেও বাজারে এর সরবরাহে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে। আবার ক্রেতাদের অভিযোগ, অধিক লাভের আশায়ই তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে একশ্রেণির ব্যবসায়ী। খোলা সয়াবিনের সরবরাহ স্বাভাবিক দেখা গেলেও কিনতে গিয়ে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। সরকার প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দর ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা দরে। রমজানের শীতলতার জন্য শরবত তৈরির অন্যতম উপাদান লেবুর দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে এতকিছুর ভিড়ে কিছুটা অবাক করে দিয়ে কমেছে খেজুরের দাম।
তবে এবার রমজানে এখনো কিছুটা স্বস্তি রয়েছে চিনি, ছোলা, আলু ও সবজির বাজারে। এছাড়া ক্রেতার হাতের নাগালেই আছে পেঁয়াজের দর। বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা ও নৈতিকতার উন্নয়ন। প্রয়োজনীয় সরবরাহ থাকলেও যদি কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়, তবে সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বাজার মনিটরিংয়ের পরিধি বাড়িয়েছে। এছাড়া রমজান সামনে রেখে বিশেষ পর্যবেক্ষণ কর্মকাণ্ড চলমান। এতে করে বাজার পরিস্থিতি অচিরেই নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে বাজামূল্য কিছুটা স্বাভাবিক বলেই মনে করছেন ক্রেতারা। তবে বাজার পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকুক এবং রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকুক, এটিই তাদের অন্যতম চাওয়া।
মানুষের নৈতিক মূল্যবোধের উন্নতি না ঘটলে এসব সমস্যা থেকে সহসাই পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় নেই। রমজানে অর্জিত শিক্ষাকে নিজ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর মধ্যেই এর সার্থকতা নিহিত।
শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাবি