
প্রিন্ট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪৪ এএম
মুসলিম উম্মাহর মাহে রমজান

এমদাদুর রহমান উদয়
প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সংগৃহীত ছবি
আরও পড়ুন
চলছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বোত্তম পবিত্র রমজান মাস। রমজান আরবি বর্ষের নবম এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মাস। সারা বিশ্বের মুসলিম জাতির কাছে এর ফজিলত অনেক বেশি। মুসলিম উম্মাহর জন্য মাহে রমজানে রোজা পালন করা ফরজ। ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির মধ্যে সিয়াম অন্যতম। পৃথিবীর মুসলিম জনগোষ্ঠী মূলত আল্লাহতায়ালার প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে, একমাত্র তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় রমজান মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে। মূলত সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় নিয়তের সঙ্গে পানাহার ও ইন্দ্রিয়তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম বা রোজা। সিয়াম সাধনা সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ধারণা দিয়ে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো; (সূরা বাকারা : ১৮৩।’ অর্থাৎ সিয়াম সাধনার মূল শিক্ষাই হলো আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল করে এক আল্লাহর নির্দেশে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা নিজের মধ্যে ধারণ করা।
রমজানের ত্রিশ দিনকে মূলত তিনটি অংশে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। রহমতের দশ দিন, মাগফিরাতের দশ দিন ও নাজাতের দশ দিন। রমজানের প্রথম দশকে আল্লাহতায়ালা বান্দার জন্য তার রহমতের ভান্ডার খুলে দেন। বান্দাকে আল্লাহর পথে ফিরে আসার জন্য প্রস্তুত করেন। মাঝের দশকে বান্দার জন্য মাগফিরাতের দরজা উন্মুক্ত করেন। বান্দার ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দিয়ে আত্মাকে পরিশুদ্ধ করেন। আর শেষ দশকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বান্দাকে আহ্বান করেন। এ সময় বান্দা একাগ্রচিত্তে তওবা করলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে চিরশান্তির জান্নাতে অন্তর্ভুক্ত করবেন। এজন্য তিনি রমজানের শেষ দশকের যে কোনো একটি বিজোড় রাতে বান্দার জন্য এমন ফজিলত রেখেছেন, যে রজনি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। অর্থাৎ দয়াময় আল্লাহ তার বান্দাকে অসম্ভব ভালোবাসেন এবং বান্দার ভুলগুলো ক্ষমা করতে চান। এ কারণেই আল্লাহ নিজ কুদরতে এ ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
পরম দয়ালু আল্লাহ রমজানের ফজিলত বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। তিনি রোজাদারের জন্য বিশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। সহিহ হাদিস থেকে পাওয়া যায়, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, রোজা আমার জন্য, আর আমি নিজে এর প্রতিদান দেব।’ অর্থাৎ রমজানের রোজার ফজিলত এতই যে, আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাকে স্বয়ং এর পুরস্কার দিতে ওয়াদা করেছেন। রমজানে প্রতিটি আমলের সওয়াব আল্লাহতায়ালা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন। অর্থাৎ রমজান হলো সৎ আমলের মাধ্যমে জান্নাত কামাই করার একটি অনন্য সুযোগ। তবে রোজা রাখার নানাবিধ উপকার থাকলেও রোজা ভঙ্গকারীদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) কঠোর শাস্তির বার্তা দিয়েছেন। তাই পাগল, মানসিক ভারসাম্যহীন, অতি অসুস্থতার কারণে রোজা পালনে অক্ষম ও শরিয়তসম্মত ওজর ছাড়া কোনো অবস্থাতেই রোজা ভঙ্গ করা যাবে না।
নিয়মিত রোজা রাখলে স্বাস্থ্যগত নানাবিধ উপকারিতা পাওয়া যায়। রমজানে নিয়মিত রোজা রাখার ফলে স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন : উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোজায় পেট খালি থাকার কারণে খাবার হজমের অ্যাসিড এ সময় ধীরগতিতে নিঃসরিত হয়, যা হজম শক্তিজনিত নানা সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও রোজার কোনো বিকল্প নেই। রমজান আমাদের সংযমের শিক্ষা দেয়। জীবন গঠন ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে আত্মনিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ। এ মহান শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ আমরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই লাভ করে থাকি। রোজা আমাদের সহমর্মিতার বার্তা দেয়। পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলতে সহায়তা করে। একজন রোজাদার ব্যক্তি সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যত সুস্বাদু ও লোভনীয় খাবারই সামনে থাকুক না কেন, তা পরিহার করে। এ পরিহার শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। সিয়ামরত অবস্থায় সব ধরনের পাপাচার, ঝগড়া বিবাদ ও হানাহানি থেকে নিজেকে বিরত রাখে। রমজান মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় করে। রমজান আমাদের নিজ কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে য্দ্ধু করে টিকে থাকতে শেখায়। তাই রমজান আমাদের পুরো একটি বছরের জীবনাচরণের শিক্ষা দিয়ে যায়, যাতে করে বান্দা প্রতিনিয়ত তার তাকওয়াকে পরিশুদ্ধ করতে পারে এবং মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। সিয়াম সাধনা গরিব-দুঃখীদের জঠরজ্বালা অনুভব করার জন্য প্রস্তুত করে। ফলে সামাজিক মূল্যবোধ ও ধনী-গরিবের ভেদাভেদ দূর করতেও সাহায্য করে।
শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।