Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

ভাষা আন্দোলনের আদর্শ

Icon

মাহমিয়া আলম

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ভাষা আন্দোলনের আদর্শ

ছবি: সংগৃহীত

ফেব্রুয়ারি এলেই শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া, কালো ব্যাজ পরা, আর একুশের গান গাওয়া আমাদের চিরচেনা চিত্র। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালন করাই কি ভাষা আন্দোলনের মূল আদর্শ ছিল? ১৯৫২ সালে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারা যে চেতনা লালন করেছিলেন, আমরা কি আজও সেই চেতনাকে ধারণ করতে পারছি? ভাষা আন্দোলন ছিল শুধু বাংলা ভাষার স্বীকৃতির লড়াই নয়; এটি ছিল মাতৃভাষার অধিকার, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য ও জাতীয় চেতনার প্রশ্ন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু বাঙালিরা তা মেনে নেয়নি। ২১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহিদ হওয়া তরুণরা প্রমাণ করেছিলেন-ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি জাতির অস্তিত্বের ভিত্তি। আন্দোলনের অন্যতম আদর্শ ছিল মাতৃভাষাকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করা, যা পরে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত তৈরি করে। ভাষার এ সংগ্রামই পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের বীজ বুনে দেয়।

আজ, একুশ শতকে এসে, ভাষা আন্দোলনের সেই মূল আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে? বাংলা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে, কিন্তু আমাদের সমাজ, শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রশাসনে তার যথাযথ অবস্থান কতটুকু? বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজির আধিপত্য আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। দেশে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রসার ঘটছে, যেখানে বাংলা চর্চা ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে এসেছে। অনেক শিক্ষার্থী বাংলা লিখতে বা বিশুদ্ধভাবে বলতেও বিব্রতবোধ করে। উচ্চশিক্ষা, চাকরি, এমনকি আদালতেও ইংরেজি ভাষার দাপট প্রকট। এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, আমরা কি সত্যিই ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধরে রাখতে পেরেছি? আমাদের নীতিনির্ধারকরা কি বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন?

আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ইংরেজি শেখা জরুরি, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তার মানে কি মাতৃভাষার গুরুত্ব কমিয়ে দেওয়া? উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখি, তারা মাতৃভাষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। চীন, জাপান, জার্মানি কিংবা ফ্রান্স তাদের মাতৃভাষা সংরক্ষণে বিশেষভাবে কঠোর। সরকারি নথি, আদালত, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের বাইরে অন্য ভাষার ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত। এ দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও মাতৃভাষা বাংলা শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশাসনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। ইংরেজি শেখার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার না করেও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পূর্ণাঙ্গ সুযোগ তৈরি হয়। অন্যথায়, আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনা শুধু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম