Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণে দরকার স্থায়ী পদক্ষেপ

Icon

মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশের উত্তরে অবস্থিত ভৌগোলিক অঞ্চলকে উত্তরবঙ্গ বলা হয়। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলটি যে বেশ অনুন্নত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অঞ্চলের কিছু জেলার অবস্থা দারিদ্র্যসীমার বেশ নিচে। যে কারণে এ অঞ্চলকে মঙ্গা অঞ্চল হিসাবে অভিহিত করা হয়। অঞ্চলটিকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ অঞ্চলের দারিদ্র্যের জন্য বেশকিছু কারণ দায়ী। এর অন্যতম হলো প্রকৃতি। এসব অঞ্চল প্রকৃতিগত কারণেই সৃষ্টিলগ্ন থেকে অন্যান্য অঞ্চল থেকে পিছিয়ে। বন্যা, নদী ভাঙন, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টিসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয় উত্তরবঙ্গের মানুষকে। তবে এটাও সত্য, এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের পেছনে মানুষও কিছুটা হলেও দায়ী, যে কারণে দুর্যোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। উত্তরবঙ্গের বেহাল দশার জন্য মূলত দুটি প্রাকৃতিক কারণ দায়ী। তা হলো, বন্যা ও নদী ভাঙন। মানচিত্রের দিকে তাকালেই লক্ষ করা যায়, উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে দুশর বেশি নদী প্রবাহিত। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা অনুসারে, বাংলাদেশে বর্তমানে নদীর সংখ্যা ৪০৫, অর্থাৎ প্রায় অর্ধসংখ্যক নদী উত্তরবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত; কিন্তু এ বিপুলসংখ্যক নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো পদক্ষেপ। ফলে সঠিক নিয়ন্ত্রণের অভাবে এসব নদী তাদের গতিপথ পরিবর্তন করায় সৃষ্টি হচ্ছে নদী ভাঙনের মতো ভয়াবহ দুর্যোগ। প্রতিবছর ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আশ্রয়হীন হচ্ছে হাজারো মানুষ। আবার নদীগুলোর নিয়ন্ত্রণের অভাবে পলি জমে এর গভীরতা কমছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদীর স্রোত, হারিয়ে যাচ্ছে নদীর সজীবতা।

বেসরকারি এক জরিপে দেখা যায়, সঠিক পদক্ষেপ আর পরিকল্পনার অভাবে উত্তরবঙ্গের প্রায় ৫৭টি নদী হারিয়ে যাওয়ার পথে। এমন অবস্থায় পানি প্রবাহের সময় পর্যাপ্ত জায়গা না পেয়ে পানি ছড়িয়ে পড়ছে উপকূলে। শত-শত গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে পানিতে, সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ বন্যা। প্রতিবছর একবার, এমনকি দু-তিনবার পর্যন্ত বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে অঞ্চলটি। বিশেষ করে রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নিলফামারীসহ এর আশপাশের অঞ্চলে নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এমন অবস্থায় সরকারের উচিত বেশকিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নদীগুলোর সজীবতা ফিরে আনার জন্য নদী খনন, নদী শাসন ও পানির গতিপথ নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়াও এ অঞ্চলের নদী ভাঙন ও বন্যা পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন। যেহেতু উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে খরস্রোতা নদী তিস্তার উৎপত্তি ভারতে, তাই এর পানি নিয়ন্ত্রণ ভারতের কাছে। কিন্তু বাংলাদেশের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই দেখা যায়, ভারত এ নদীর পানি তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। এর ফলে বাংলাদেশে অসময়ে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, সৃষ্টি হচ্ছে হঠাৎ বন্যা, বৃদ্ধি পাচ্ছে নদী ভাঙন। এতে হাজার হাজার হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। এমন অবস্থায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা উচিত।

উত্তরবঙ্গ বাংলাদেশের একটি বৃহৎ অংশ। এ অঞ্চলকে পেছনে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন করা জরুরি। যেহেতু উত্তরবঙ্গের উন্নয়নের মূল বাধা বন্যা ও নদী ভাঙন, তাই সরকারকে এগুলোর স্থায়ী সমাধান করতে হবে। অন্যথায় এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান হ্রাস পাবে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

রসায়ন বিভাগ, ঢাকা কলেজ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম