Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে চাই পাঠচক্র

Icon

আরিফুল ইসলাম তামিম

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘পাঠচক্র’ শব্দটি শুনলেই হয়তো আমাদের পড়াশোনার কথা মাথায় আসে। তবে এটি গতানুগতিক কিংবা পুথিগত কোনো চর্চা না। চক্রাকারে সুনির্দিষ্ট নানা বিষয়ে আলোচনা, মতামত প্রকাশ, জ্ঞান আদান-প্রদানের মাধ্যমে ইতিবাচক চর্চার মধ্যে দিয়ে পাঠচক্র ফলপ্রসূ হয়। পাঠচক্রের তাৎপর্য ব্যাপকভাবে হলেও অনেকেই পাঠচক্রে তেমন আগ্রহ দেখায় না; কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ থেকে শুরু করে নানাক্ষেত্রে পাঠচক্র বিশেষ ভূমিকা রাখে। আধুনিকায়নের যুগে প্রযুক্তিগত ছোঁয়ায় সবকিছুই পালটে গেছে। খেলাধুলা, আড্ডা, গল্প-সবকিছুই এখন প্রযুক্তিনির্ভর। আমরা সবাই একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে আড্ডা দেই। কিন্তু প্রযুক্তির নেতিবাচক চর্চায় বর্তমান আড্ডাও অনেকটা রসকষহীন। অধিকাংশ সময় দেখা যায় আড্ডা দিতে গিয়ে যে যার মতো মোবাইলে ব্যস্ত, কারও সঙ্গে কারও কথা নেই। ফলে একসঙ্গে বন্ধুদের দেখা হলেও ফলপ্রসূ কোনো আলোচনা হয় না। কিন্তু চাইলেই আমরা আড্ডার মাধ্যমেও নিজেদের ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতে পারি কিংবা জ্ঞান অর্জন করতে পারি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব একটি বিরাট সমস্যা। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পেছনে দৌঁড়াতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। একদিকে চাকরির ক্ষুদ্র বাজার, অন্যদিক অত্যাধিক প্রতিযোগিতা। এ প্রতিযোগিতায় চাকরির বাজারে টিকতে অর্জন করতে হবে বহুমুখী দক্ষতা। কিন্তু আমরা অনেকেই এসব ক্ষেত্রে পিছিয়ে। কম্পিউটার দক্ষতা, ইংরেজি দক্ষতা, যোগাযোগ দক্ষতাসহ নানা ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। কীভাবে এসব দক্ষতা অর্জন করা যায়, নিজেকে প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে কি করতে হবে-পাঠচক্রে আলোচনার মাধ্যমেই তা করা সম্ভব। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা, সংবিধান, আইনসহ নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের পরিবর্তে আমরা অনলাইন কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত সময় কাটাই। একজন শিক্ষার্থী ও দেশের সচেতন নাগরিক হিসাবে দেশের আইন-আদালত সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় অধিকার আদায় ও সংবিধান পরিবর্তন ইস্যুসহ নানা ক্ষেত্রে মতামত প্রকাশেরও সুযোগ থাকে। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর উচিত পাঠচক্রে এসব বিষয় নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করা। পাঠচক্রের মাধ্যমে একদিকে যেমন দেশ, সমাজ, অর্থনীতি, ধর্মসহ সব ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জন সম্ভব, তেমনি সামাজিকীকরণের পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ এতে হয়; যা ব্যক্তি ভবিষ্যৎ ও দেশের জন্য কার্যকরী। একজন শিক্ষার্থী পাঠচক্রে নানা ইতিবাচক আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও দক্ষ হতে পারে, এছাড়া হতাশা, বিষণ্নতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নিয়মিত পাঠচক্রের মাধ্যমে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ তরুণ ব্যক্তিগত ও ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে প্রয়োজন গভীর চিন্তা চেতনা, মেধা শক্তির পাশাপাশি ভালো-মন্দ বোঝার সক্ষমতা। এক্ষেত্রে পাঠচক্রে আলোচনা ও মতামতের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকটাই সহজ হয়ে ওঠে। নিয়মিত পাঠচক্রের মাধ্যমে তরুণরা আলোচনা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে নিজেকে এগিয়ে নিতে পারে। এছাড়া নিয়মিত পাঠচক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি, সুচিন্তার বহিঃপ্রকাশ, প্রতিবাদ করার ক্ষমতা, সচেতন নাগরিক হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখে পাঠচক্র। সর্বপরি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে পাঠচক্রের বিকল্প অপরিসীম। এতে একদিকে যেমন দেশ সমাজ ও পরিবার সম্পর্কে সচেতন হওয়া যায়, তেমনি নিজের জানার জগৎ বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি ভালো মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা সম্ভব।

শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম