Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

সীমান্ত হত্যার অবসান হোক

Icon

মো. এমদাদুর রহমান উদয়

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নির্বিচারে হত্যা যেন থামছেই না। ২০১১ সালে সীমান্তে পনেরো বছরের কিশোরী ফেলানী হত্যা বিশ্ব বিবেককে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তবে দীর্ঘ একযুগ অতিবাহিত হলেও এর সুষ্ঠু বিচার পাওয়া সম্ভব হয়নি। সীমান্তে এসব হত্যাকাণ্ড যেন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে চৌদ্দ বছরের কিশোরী স্বর্ণা দাশের হত্যার ঘটনায় এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনার উদ্রেক হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে নিজের ছেলের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে কাঁটাতারের বেষ্টনীর কাছে পৌঁছালে বিএসএফ সদস্যদের এলোপাতাড়ি গুলির মুখে পড়েন মা সঞ্জিতা রানি দাশ ও মেয়ে স্বর্ণা দাশ। সীমান্তে এসব ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা না হলে দুই দেশের মধ্যে চলমান সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

মূলত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বসবাসকারী অধিকাংশ মানুষ নানা প্রয়োজনে সীমান্ত পেরিয়ে দুই দেশে যাতায়াত করে। এর পেছনে রয়েছে সীমান্তবর্তী বাণিজ্যিক অবস্থা ও দুই দেশের সীমান্তে গড়ে ওঠা নানাবিধ আত্মীয়তার সম্পর্ক। সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে কৃষি জমিতে কৃষিকাজ কিংবা নদীগুলোতে মৎস্য আহরণের জন্যও অনেক মানুষ সীমান্তপথ অতিক্রম করে। এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময়ের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই সীমান্তে যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা ছিল বেশ লক্ষণীয়। তবে এসব কারণ ছাড়াও আন্তঃসীমান্ত অপরাধগুলো এ পরিস্থিতির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অবৈধ গবাদিপশু ও মাদক চোরাচালানের বিষয়টি নতুন নয়। এছাড়া সীমান্তে মানব পাচার, জাল মুদ্রা পরিবহণসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য পরিবহণের খবরও মেলে। তাই এসব অপকর্ম ঠেকাতে কঠোর আইন করা হয়েছে। তবে নিরস্ত্র ও নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষায় আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি।

দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সীমান্তে এসব হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সঠিক তদন্ত ও এর একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী। এতে করে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই আশা করা যায়। এক্ষেত্রে সীমান্ত পাহারা জোরদার করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ফলপ্রসূ হতে পারে। সীমান্তে চোরাচালান রোধে দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা যেতে পারে। এছাড়া আন্তঃসীমান্ত অপরাধে জড়িতদের বন্দি করে নিজ নিজ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সোপর্দ করা যেতে পারে। এতে করে দেশের আইনে অপরাধীর সঠিক বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া প্রয়োজনে সীমান্তে বন্দিবিনিময় আইন জোরদার করা যেতে পারে। কেননা একটি প্রাণ অতিশয় মূল্যবান। যে কোনো অপরাধী তার অপরাধের সুষ্ঠু বিচার সাপেক্ষে সাজা ভোগের অধিকার রাখে। একজন নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনো ক্রমেই হয়রানি বা শাস্তির শিকার না হয়, এটাই আইনের মূলনীতি। তাই দুই দেশের সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে এ সংকট সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করলে সীমান্তে প্রাণহানি অনেকাংশে কমবে বলে আশা করা যায়। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধনও হবে আরও সুদৃঢ়।

শিক্ষার্থী, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম