একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হচ্ছে শিক্ষার্থী। আর শিক্ষার্থীদের যাবতীয় দাবি-দাওয়া তুলে ধরার অন্যতম প্লাটফর্ম হচ্ছে ছাত্র সংসদ। এটি শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করে। ছাত্র সংসদ হচ্ছে এমন একটি কার্যনির্বাহী পরিষদ, যেটি ছাত্রদের মধ্যে প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান ও দাবি-দাওয়া আদায়ের মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চেতনা ও স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার হলো এ ছাত্র সংসদ।

বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাসে ছাত্র সংসদের রয়েছে এক গৌরবময় ভূমিকা। যেমন-৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ’৭১-এর স্বাধীনতা আন্দোলন। এছাড়া সর্বশেষ ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে দেশের সংকটময় মুহূর্ত ও ক্রান্তিকালে এগিয়ে এসেছে এ দেশের ছাত্র সমাজ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ন্যায্য দাবি-দাওয়া থাকে শিক্ষার্থীদের। এসব যৌক্তিক দাবি আদায়ে ছাত্র সংসদের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে ছাত্র সংসদের ভূমিকা অপরিসীম। এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাজের উন্নতি, শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ও নেতৃত্বের উন্নয়ন ঘটায়। ছাত্র রাজনীতি মূলত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি হলেও এর অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি দেশ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য উৎকৃষ্ট নেতা তৈরি করা। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতি চর্চার চেয়ে অপচর্চাই বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চালানো হচ্ছে অস্বাভাবিক নির্যাতন। যেমন-সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্ক, র‌্যাগিং, শারীরিক হেনস্তা, মানসিক নির্যাতন, সামাজিক অবমাননা ইত্যাদি। যে চিত্র প্রতিনিয়ত আমাদের চোখে পড়ছে। খুব বেশি আলোচিত-সমালোচিত না হলে এমন হাজারো গল্প থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালেই। এসব ক্ষেত্র বিবেচনায় মুষ্টিমেয় কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে, ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে। তাদের মতে, রাজনীতি করা ছাত্রদের কাজ নয়।

একটি দেশে রাজনীতি হচ্ছে সমাজ ও দেশ সেবার সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম। রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকেই গড়ে ওঠে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব। দেশ ও জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের জন্য ছাত্র সংসদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ছাত্র জীবনে সাধারণ মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন অনেকে, তাদের মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তাজউদ্দীন আহমেদ, হাসানুল হক ইনুসহ বহু ত্যাগী রাজনৈতিক ছাত্র নেতা। রাজনীতি হলো দেশের মৌলিক পরিবর্তন আর দেশের জনগনের ভাগ্য পরিবর্তনের অন্যতম চাবিকাঠি। সফলভাবে একটি রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনযোগ্য নেতৃত্ব আর যোগ্য নেতৃত্বের জন্য প্রয়োজন ছাত্র সংসদ নির্বাচন। গত ৩০ বছর ধরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদের কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নির্বাচিত ছাত্র সংসদ না থাকায় অনেক বছর ধরে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠনগুলো নিজের মতো করে আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে। অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে ছাত্র রাজনীতি তাই বন্ধ করা যাবে না। শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ রাজনীতি চর্চা হলে শিক্ষা ক্ষেত্রে মেধাবীরা এগিয়ে আসতে পারবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে জাতীয় পর্যায়ে অনেক ভালো ভালো নেতৃত্ব উঠে আসবে।

সর্বশেষ ২০২৪-এ আমাদের যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে এটিও ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে মুগ্ধ, তানভীর, দীপ্ত, রুদ্রের মতো অসংখ্য ছাত্রছাত্রী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে দুবার ভাবেনি। যুগে যুগে অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে পঙ্গুত্বকেও সাদরে বরণ করে নিয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সুতরাং যে কোনো স্বাধীনতা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের অগ্রণী ভূমিকার বিষয়টি গুরুত্বারোপ করে দেশের সর্বক্ষেত্রে বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ বা অংশীদারত্ব নিশ্চিতকরণ খুবই প্রয়োজন, যা সম্ভব হবে শুধু ছাত্র সংসদের মাধ্যমে।

শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া