Logo
Logo
×

দৃষ্টিপাত

যে পরিবর্তন দেখতে চায় তরুণ প্রজন্ম

Icon

মো. রাসেল হোসেন

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি ও কর্তৃত্ববাদী শাসকদের জনবিচ্ছিন্নতার কারণে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার শাসকের অবসান হয়েছে। মানুষের মাঝে বছরের পর বছর ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকা অসন্তোষের মেঘ জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বৃষ্টি ঝরে পড়ল। তরুণ প্রজন্মের এ আন্দোলন শাসকদের বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, জনগণের সম্পদে গড়ে তোলা অত্যাচারীর সিংহাসন চিরস্থায়ী নয়। কোটা সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে গেলে কর্তৃত্ববাদী সরকারের হামলায় শিকার হতে হয়। কিছুদিনের মধ্যে ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় গণআন্দোলনে। ছাত্র-জনতা এ গণআন্দোলনের মাধ্যমে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব অপ্রাপ্তি আদায় করতে চেয়েছে। স্বৈরতান্ত্রিক শাসকদের সরে যেতে বাধ্য করেছে। তরুণদের এ আন্দোলনের কথা শুধু বাংলাদেশের গণ্ডিতেই আবদ্ধ থাকেনি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। যেমনটা দেখা গিয়েছিল আরব বসন্তে। ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ, ওয়ার্ডপ্রেস, মাইস্পেস, ইউটিউব থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাহসী ভূমিকা ও সক্রিয়তায় একের পর এক স্বৈরাচার শাসকদের অপকর্ম ও প্রশাসনিক দুর্বলতা প্রকাশ পায়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি সংগ্রাম করেছে তাদের নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য, গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ও রাজনৈতিক সংস্কার নিশ্চিত করতে। অন্য দেশগুলো বিপ্লবের মাধ্যমে নিজেদের অধিকারকে বাস্তবায়ন করতে পারলেও বাংলাদেশের মানুষকে অনেক সময় স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কবলে থাকতে হয়েছে। ক্ষমতার হাত বদলের পরও দেশের মানুষের ভাগ্য বদলায়নি। গণমাধ্যমকে বলা হয় একটি রাষ্ট্রের দর্পণ। এ দর্পণের মাধ্যমে একটি দেশ তার সত্যিকার চেহারা দেখতে পায়। তাই যুক্তিসংগতভাবে গণমাধ্যমের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা কাম্য। বলা হয়ে থাকে, যে দেশে গণমাধ্যম যত স্বাধীন, ওই দেশ তত গণতান্ত্রিক। যেমন নরওয়ে ও সুইডেন। এ দেশ দুটির সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে সব সময় বদ্ধপরিকর। সরকারের সমালোচনা কিংবা দুর্নীতির খবর প্রকাশ করলেও কখনো তাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয় না। প্রকারান্তরে বাংলাদেশের চিত্র ভিন্ন। একটি দেশের শাসনব্যবস্থা জনবান্ধব করতে ‘সেপারেশন অব পাওয়ার’ অর্থাৎ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের বিকল্প নেই। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ থাকলে স্থানীয় সরকারগুলো নিজেদের কর্মভার সুনির্দিষ্টভাবে সাজিয়ে নিতে পারে। যা স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, জনগণের সঙ্গে দূরত্ব কমায়। যার বাস্তব উদাহরণ দেখা যায় জার্মানিতে। এ বিষয়টিও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।

এছাড়া মানসম্মত শিক্ষা বিস্তার করতে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যক্রম আধুনীকরণের বিকল্প নেই। এজন্য গৎবাঁধা পাঠ্যক্রম না রেখে আন্তর্জাতিকমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রাখা উচিত। যা শিক্ষার্থীদের চিন্তা-শক্তিকে সৃজনশীল ও বিকশিত করবে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠদান করতে মাঝে মধ্যে ব্যাকফুটে থাকতে হয়। যার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমাদের দেশে শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এ সেক্টরে বাজেটের অপ্রতুলতা। যা প্রায় মোট বাজেটের ২ শতাংশের চেয়েও কম। ফলে এ খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। শিক্ষা খাতে তাই বাজেট বাড়াতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা যোগ্যতার চেয়ে রাজনীতির বলয়ে যুক্ত হওয়ার কারণে নেতৃত্ব গুণের অভাবে শিক্ষার স্বাভাবিক ও সৃজনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় না। যার জন্য দক্ষ ও যোগ্য লোককে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান করতে হবে। জনগণের জীবনমান উন্নত করতে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের বিকল্প নেই। পরিবর্তনই পারে একটি দেশের ইতিহাসের মোড় বদলে দিতে, চিন্তার জগৎ এ সৃজনশীলতা বয়ে আনতে। তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে, কর্তৃত্ববাদী সরকারকে কুক্ষিগত হতে বাধ্য হয়েছে, সেই বাংলাদেশ দক্ষ ও যোগ্যদের হাতে থাকুক। চতুর্থ বিপ্লবকে সামনে রেখে বাংলাদেশের পরিবর্তন নিশ্চিত হোক তরুণ প্রজন্ম সেই কামনা করে।

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম