ভালুকায় বন বিভাগের সঙ্গে সাধারণ মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন জরুরি
আলহাজ মো. আবদুর রশিদ
প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি মৌজায় ১৯৯২ সালের পূর্ব পর্যন্ত গেজেটে বনবিভাগের ভূমির পরিমাণ ছিল ১৫০০ একর, যা বিভিন্ন দাগ মিলে ১৯৯২ সালে বৃদ্ধি পেয়ে গেজেটে এসেছে ২০৫০ একর। এটি ৪ ও ৬ ধারার বন বিজ্ঞাপিত ভূমি। তবে এই ২০৫০ একর ভূমির কোনো ‘ডিমারগেশন’ নেই-কোন জায়গাটুকু বন বিভাগের, কোন জায়গাটুকু রেকর্ডীয় জনসাধারণের নামে অথবা কোন জায়গাটুকু সরকারি খাসভূমি।
এ অবস্থায় যারা বনের জমি জবরদখল করে আছেন, তাদের বিরুদ্ধে বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। কারণ, তারা ইতোমধ্যে বন বিভাগের লোকজনদের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’ করে নিয়েছেন। অথচ যাদের কাগজপত্র সঠিক আছে, বন থেকে আবমুক্তি ও ‘ডিমারগেশন’ করে নিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ভিন্নরকম ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এক্ষেত্রে সরকারি যে নকশা আছে, সেই নকশায় বনভূমি ও জনসাধারণের সম্পত্তি একীভূত করা-একই দাগে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জমি ও বন আছে; কিন্তু কোন অংশে সাধারণ মানুষের জমি ও কোন অংশে বন তা চিহ্নিত করা নেই। বন বিভাগ যদি সরকারিভাবে দেয় রেকর্ডপত্র যাচাই করে স্থানীয় অধিবাসীদের প্রাপ্য অংশটুকু তাদের জন্য রেখে বনের অংশটুকু দখল করে বন সৃজন করত তা হলে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হতেন না। কিন্তু বনবিভাগ জায়গা চিহ্নিত না করে দাগের সব অংশই তাদের বলে দাবি করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এখানে বন বিভাগের নামে কোনো ভূমি নেই, আছে জেলা প্রশাসকের নামে ১নং খতিয়ানের ভূমি। এই ১নং খতিয়ান থেকে কবুলিয়ত দলিলের মাধ্যমে ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্ত দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ভূমি জরিপেও বন বিভাগের নামে ভূমি রেকর্ড হয়নি; রেকর্ড হয়েছে জেলা প্রশাসকের নামে। একজন সাধারণ মানুষ কাগজপত্র অনুযায়ী জীবনের সামান্য এ সম্বলটুকু নিয়ে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে সামান্য আয় করছে; এ অবস্থায় বন বিভাগের লোকজন এসে এ রেকর্ডীয় মালিকের নামে তিন চারটি মামলা ঠুকে দিয়ে তাকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বন বিভাগ মামলা করার সুযোগ নিচ্ছে ওই দাগে বনের অংশ আছে বিধায়।
আবার দেখা যায়, এক দাগের সম্পূর্ণ ভূমিই বন বিভাগের নামে গেজেটে উল্লেখ আছে; অথচ উক্ত দাগে সিএস-আরওআরসহ কবুলিয়ত পাট্টা আছে এবং রেকর্ডীয় মালিক হিসাবে সাধারণ মানুষ ভোগ-দখলে থেকে বাড়িঘর করে চাষাবাদ করে আসছে প্রায় শতবর্ষ ধরে। আবার গেজেটে উল্লেখিত দাগে সরকারিভাবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে দাগের সম্পূর্ণ ভূমি। এ ক্ষেত্রে রেকর্ডীয় ও বন্দোবস্ত মিলে কী পরিমাণ ভূমি বন বিভাগের দখলে কিংবা গেজেটের অংশ কতটুকু, সে হিসাবও নেই। বস্তুত বন বিভাগ চিহ্নিত করতে পারছে না-তাদের অংশ কোনদিকে এবং কোন দাগে কী পরিমাণ জমি তারা দখলে নিবে। অন্যদিকে এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা জীবন দিয়ে হলেও তাদের দখলীয় ভূমি রক্ষা করতে মরিয়া।
আবার দেখা যায়, একটি দাগের আংশিক ভূমি বন বিভাগের, আংশিক রেকর্ডীয় ভূমি সাধারণ মানুষের নামে। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগ তাদের জমি ‘ডিমারগেশন’ না করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে। দেখা যাচ্ছে, বন বিভাগ ওই দাগের সম্পূর্ণ অংশের ভূমিতে সাধারণ মানুষকে দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে-একবার উঠাচ্ছে, আবার বহাল করছে, মামলা দিচ্ছে প্রভৃতি। এতে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছে। বন বিভাগের লোকজন মূলত তাদের চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে সাধারণ মানুষের নামে মামলা দিচ্ছে এবং এতে দুই পক্ষই হয়রানির শিকার হচ্ছে। এভাবে এখানকার সাধারণ মানুষ বনাম বন বিভাগ দ্বন্দ্ব চলছে সেই ১৯৯২ সাল থেকে। যদি ২০ ধারার মাধ্যমে বন বিভাগের নামে ভূমি ‘ডিমারগেশন’ করে না দেওয়া হয়, তবে এখানে বন বিভাগের কোনো ভূমি থাকবে না বলেই মনে হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে এখানকার স্থানীয় অধিবাসী ও বন বিভাগের দ্বন্দ্ব নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং জনবান্ধব বর্তমান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, আসপাডা পরিবেশ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন