
প্রিন্ট: ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫২ এএম
এনসিপি বা তারুণ্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কি অসম্ভব?

গৌতম দাস
প্রকাশ: ৩০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
এনসিপি, যার পুরো নাম-ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি-এরা নতুন করে খোলা কয়েক মাস বয়সি এক রাজনৈতিক দল। জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল যারা, মূলত এমন ছাত্র নেতৃত্বের উদ্যোগে তৈরি এক রাজনৈতিক দল এটি। সব রাজনৈতিক উদ্যোগ বা দলের যেমন কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে, এদেরও আছে। বিশেষ করে যা আগে অন্য রাজনৈতিক দলে দেখা যায়নি, এমন বৈশিষ্ট্য এদের মধ্যেও আছে। থাকাটাই স্বাভাবিক! মানুষ এমনটি আশাও করে, গড়ে ২৫-৩০ বছরের আশপাশের তরুণ বা রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে নতুন সৃষ্টিশীল বা ক্রিয়েটিভ অন্তত কিছু তারা দেখবে বলে।
কিন্তু তাই বলে প্রকাশ্য বাগ্বিতণ্ডা!
এনসিপির এক বৈশিষ্ট্য আমরা দেখতে পাচ্ছি, এর শীর্ষনেতাদের প্রকাশ্যে বাগ্বিতণ্ডা, তা-ও একেবারে লিখে করা সেসব বিতণ্ডা! ফেসবুক-সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে তারা প্রকাশ্যে একে অন্যের অবস্থানকে বিরোধিতা/নাকচ করে বা কখনো একে অন্যকে ভিন্ন ব্যাখ্যা/ইন্টারপ্রিটেশন দিয়ে হাজির হচ্ছেন। যেমন সাম্প্রতিক এমন কয়েকটি ঘটনার একটা হলো, সেনাপ্রধান নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর রাতদুপুরে প্রকাশিত বক্তব্যকে বিরোধিতা বা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে দেওয়া পরদিন সারজিস আলমের দেওয়া আরেক বিবৃতি। তারা উভয়েই দলের মুখ্য সংগঠক (উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের) বলে প্রকাশিত; যা দেখে মনে হয়, দলের প্রেসিডেন্ট/সেক্রেটারির পরেই এদের দলীয় পদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ; ফলে তারা শীর্ষনেতা। কিন্তু তারা একে অপরের অবস্থান বা বক্তব্যের বিরোধিতা করে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, যেটি শীর্ষনেতার অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় একেবারেই!
সাধারণভাবে বললে, দলের শীর্ষনেতাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হওয়া-এটি তো ভালোই। যার বিকল্প বিপরীতটা হলো, বিনা বাক্যব্যয়ে উপরের একেক শীর্ষনেতার হুকুমের দাস মানে ‘হ্যাঁ’ তে ‘হ্যাঁ’ মেলানো বা সহমত ভাই হওয়ার চেয়ে-এমন তুলনা করে বললে। আবার আমাদের দেশের কেবল ‘ভোটের রাজনীতির দলগুলোর কালচারের মধ্যে সবার উপরে এক পারিবারিক নেতা বসে থাকেন এবং তা আমৃত্যু! আর তিনি যেটি বলেন, সেটাই শিরোধার্য। জি ভাই বা জি চেয়ারম্যান সাব জিন্দাবাদ, এমন এক কালচারের মধ্যে কোনো দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, তা অনেকের চোখে এটি তো ভালোই বলে তিনি দাবি করতেই পারেন। কিন্তু তাই কি?
না, তা সঠিক নয়। এক কথায় বললে, দলের মধ্যে ভিন্নমত প্রকাশের জায়গা অবশ্যই থাকতেই হবে। কিন্তু ভিন্নমত প্রকাশের নির্দিষ্ট করে দেওয়া জায়গা/ফোরাম থাকবে। আর অবশ্যই এর বাইরে যেখানে-সেখানে তা করা যাবে না; তা প্রকাশ্যে করা একেবারেই অনুচিত। বন্ধ করতেই হবে! কারণ, এমন মতামত প্রকাশকে শৃঙ্খলাবদ্ধ না করলে সেটি আর কোনো রাজনৈতিক দল হয়েই উঠবে না।
এমনিতে দল বা পার্টি করার একটা স্বাভাবিক অর্থ হলো, কয়েক মূল লক্ষ্যের বাস্তবায়নের পক্ষে ‘ঐক্যবদ্ধ হওয়া’। কাজেই যারা ‘ঐক্যবদ্ধ হয়েছে’, তারা কেন প্রকাশ্যে যত্রতত্র বিবাদ বা ভিন্নমত দেখাবে? এ হলো পেছনের মূল কনসেপ্ট। এ কনসেপ্টকে পেছনে মেলে পায়ে মাড়িয়ে, কোনো শীর্ষনেতা কেন ফেসবুক ভারি করবে? ব্যক্তিবোধের সুপ্রিমেসিতে সব ছেয়ে ফেলবে? এছাড়াও শীর্ষনেতাদের প্রতিদিনের কাজকর্মে তাদের অনেক জায়গায় হাজির বা অ্যাটেন্ড করতে হয়। আর সেখানে হাজারও প্রসঙ্গে প্রত্যেক উপস্থিত নেতাকেই মতামত-অবস্থান প্রকাশ করতেই হয়। এটি যেমন সঠিক ও বাস্তবতা, আবার একইসঙ্গে এমন শীর্ষনেতাদের বক্তব্য-অবস্থান, মতামতগুলোর একটা সমন্বয় এনে এর এক সমন্বিত রূপও দিতেই হবে বা থাকতেই হবে।
হাইকমান্ড বা পলিটব্যুরো
সাধারণত এ কারণে শেখ মুজিবের আমলে তার দলে, বিশেষত সত্তরের দশকের আগে ‘হাইকমান্ড’ বলে একটা ধারণার চর্চা হতে দেখেছিলাম আমরা। সাধারণত যা পাঁচজন শীর্ষনেতাকে নিয়েই হয়ে থাকে, কখনো যা বড়জোর সাতজনের হয়। ছোট কমিটি হলে দ্রুত সবাইকে ডেকে বসা যায়, এ সুবিধার জন্য এমন ব্যাপক প্রতিনিধিত্বমূলক কিন্তু ছোট কমিটি!
সম্ভবত ধারণাটা এসেছে কমিউনিস্ট দলের প্র্যাকটিস থেকে, যেখানে ‘পলিটব্যুরো’ (যার সারার্থ রাজনৈতিক বা পলিটিক্যাল থেকে পলিট, এভাবে; এদেরই সিদ্ধান্ত বা শলা-পরামর্শের কমিটি) বলে একটা ধারণা ও কমিটি থাকতে দেখা যায়। অনেক সময় বড় দলের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এ পলিটব্যুরো (যা আসলে দলের এক নির্বাহী ক্ষমতার কমিটি) বেশ বড়, ২০-৩০ জনেরও হতে দেখা যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে এ পলিটব্যুরোর মধ্য থেকেই আবার এক ‘সামারি পলিটব্যুরো’ থাকে (৫-৭ জনের), যারা একদিনের মধ্যেই কয়েকবার সংক্ষিপ্ত নোটিশে মিটিংয়ে বসে যেতে পারে। যেখানে মূল পলিটব্যুরো মিটিংয়ে বসে হয়তো মাসে বা তিন মাসে একবার।
তাহলে মূল কথাটা হলো, দলের প্রতিদিনের কাজ-তৎপরতাকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে বাগ্বিতণ্ডা, তর্কাতর্কি একেবারেই নয়। সহজেই কোনো ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে ফেলা একেবারেই নয়। কোনো ব্যক্তিগত মতামত হাজির করে দেওয়া একেবারেই নয়। খেয়াল রাখতে হবে, রাজনৈতিক দল বা পার্টি, এটি কারও ব্যক্তিগত মতামতকেন্দ্রিক হতেই পারে না। এমনটি হলে তা আর কোনো রাজনৈতিক পার্টি হয়ে উঠবেই না! বরং দলের প্রতিদিনের কাজ-তৎপরতাকে নিয়ে কারও কোনো ভিন্ন ধারণা থাকলে উচিত তা ‘সামারি পলিটব্যুরো’ বা ‘হাইকমান্ড’ ধরনের ছোট শীর্ষ কমিটির নজরে নিয়ে আসা আর এভাবেই একটা কেন্দ্রীয় মতামতের মধ্যে সব সদস্য এবং পুরো দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকা! এ হলো সারকথা! এককথায় ভিন্নতা, যা কিছু হবে বা থাকবে তা ঘরের ভেতরেই থাকবে। একমাত্র তাহলেই এটি একটি এককাট্টা রাজনৈতিক দল হিসাবে আবির্ভূত হবে বা হয়ে থাকতে পারবে।
আর তা না হলে কী হতে পারে?
উপরের কথাগুলোর স্পষ্ট নিদর্শন দেখা যাচ্ছে নতুন দল এনসিপির ভেতর। এখানে যারা একটা দলে ‘ঐক্যবদ্ধ হয়েছে’, সেটি প্রদর্শনের চেয়ে কে কত বড় নেতা ও তার কতটা ভিন্নমত, তা প্রকাশে যেন কোনো সীমা নেই বা বাধা নেই। অনেকের কাছে ব্যাপারটা ‘পোলাপানি’ ঝগড়া রেষারেষির অধিক কিছু নয়, এমন মনে হবে তাহলে। কিন্তু কার্যত যা আরও মারাত্মক। এটি আসলে তারা যে একটা দল হয়ে ওঠেনি, এরই প্রমাণ ও প্রকাশ হয়ে আছে/থাকবে, এরই মারাত্মক লক্ষণ! যেমন, সেনাপ্রধানের ‘ভালো আওয়ামী লীগের পক্ষে সুপারিশ ইস্যুতে’ একদিনের হাসনাত আর সারজিস দুই মারাত্মক ভিন্ন মেরুর বক্তব্য হাজির করতে না করতেই আমরা দেখলাম আবার আর দুই শীর্ষনেতা পাটোয়ারী আর মাসুদ তাদের আরও প্রকাশ্যে ভিন্নমত। মজার কথা হলো, এ নিয়ে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলছেন, ‘হাসনাত আবদুল্লাহ’র বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা উচিত হয়নি। আমরা মনে করি, এটি শিষ্টাচারবর্জিত একটি স্ট্যাটাস হয়েছে’ (একাত্তর টিভি, ২৪ মার্চ)।
আচ্ছা, হাসনাতের বিরুদ্ধে পাটোয়ারীর বক্তব্যকে যদি সত্য মানি, তাহলে একই ফর্মুলায় পাটোয়ারীর বক্তব্যও তো একই অভিযোগে অভিযুক্ত! এর মানে হলো, যেসব কথা দলীয় ফোরামের ভেতরে আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকার কথা, তা পাটোয়ারী মানছেন না। আর এসব কথা পাবলিকের সামনে বলা-এর তাৎপর্য কী? অর্থ হলো, পাবলিকের কাছে বিচার দেওয়া। কিন্তু তা কি পাটোয়ারী সাহেব করতে পারেন? অবশ্যই না। কারণ, জনগণের কাছে বিচার দেওয়া মানে দলের ভেতরে এর বিচার নেই, এর সমাধানের মেকানিজম/পদ্ধতি নেই। তারা তৈরি করেননি। করতে জানেন না। তাই পাবলিকের কাছে এসেছেন। আর এটাই যদি পাটোয়ারীদের কাজ-তৎপরতা হয়, তার মানে, এনসিপি কোনো রাজনৈতিক দলই নয়। দল হয়ে ওঠেনি, পারেনি। হবেও না। এটা ভেঙে গেছে।
ঠিক একই অবস্থা, আরেক নেতা ইতোমধ্যে নিজেকে কেবল সন্দ্বীপের নেতা হিসাবে হাজির করে ফেলেছেন, তিনি হান্নান মাসউদ। তিনি যেন এক বিরাট জ্ঞানের কথা বলছেন, এভাবে বললেন, ‘সারজিস বা হাসনাত, একজন মিথ্যা বলছেন’ (কালের কণ্ঠ, ২৩ মার্চ)।
আচ্ছা এদের একজন যদি মিথ্যা বলে থাকে, তাহলে আপনি এদেরই সঙ্গে আবার কী এখনো দলে আছেন? না পদত্যাগ করে এসেছেন? মনে হয় না এ আত্ম-অন্বেষণের দিকে আপনি আছেন। বরং হেব্বি একটা ‘কথার বাণ’ মারতে পেরেছেন, এমন প্রশান্তি আছে আপনার কথায়! অথচ এতে খোদ এনসিপি দলটাকেই যে মেরে ফেলেছেন বা নাই করে দিয়েছেন, সে বোধ অনুপস্থিত!
আর লেটেস্ট হলো সারজিস-জারা ফেসবুক তর্ক
সারজিস সম্প্রতি এক স্ট্রিট-শোতে শ’-এর ওপর গাড়ি নিয়ে পঞ্চগড়ে নিজ ইলেকশনি শোডাউনে গিয়েছেন। এতে অনেকেই অভিযোগ তুলেছে, এটি তো লীগ বা বিএনপির দলবাজি-চাঁদাবাজির আরেকটি প্রদর্শন হলো! সেই একই বৃত্তে! তাহলে লাভ কী? কিন্তু আমি এমন পাবলিক প্রতিক্রিয়ার কথা বলছি না, বলছি এর চেয়েও মারাত্মক কিছু নিয়ে।
ডা. তসনীম জারা এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব বলে পরিচিত। প্রথম আলো এক রিপোর্ট করেছে, শিরোনাম, ‘‘পঞ্চগড়ে সারজিসের গাড়িবহর নিয়ে ‘পরিষ্কার ব্যাখ্যা’ চাইলেন এনসিপি নেত্রী তাসনীম জারা’’। বলে রাখা ভালো, আজকাল আরেক উলটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে-ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে প্রিন্ট মিডিয়া তা পরে নিউজ করছে! মজা না, সত্যি অনেক মজা! চারদিকে ফেসবুকের জয়জয়কার! রাজনৈতিক দল, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ইত্যাদি কিছুরই যেন আর দরকার নেই! ভূমিকা বদল হয়ে গেছে; তাই এখন সবকিছুই ফেসবুকে আর প্রকাশ্যে! অনেক উন্নতি হয়েছে আমাদের!
তাই এদের কাছে রাজনৈতিক দলের মাহাত্ম্য আর কী বোঝাব?
রাজনৈতিক দল মানে ‘রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ মানুষ’! কিন্তু কোথায় সেসব কী? কোথায় দলের ভেতরে দলকে কেন্দ্র করে জনগণের মতামত-অবস্থানের একটা কেন্দ্র গড়ে তোলা! একটা হাইকমান্ড বা পলিটব্যুরো গঠন ও ঐকমত্যের চর্চা? কিছুই নেই, সব নেই করে ফেলতেছে এরা!! বিপরীতে সবই ব্যক্তি, ব্যক্তি আর ব্যক্তি! জয়জয়কার। যেন সমাজ আর দরকার নেই। ব্যক্তিবোধকে সমাজের অধীনে আনার বা রাখার দরকার নেই? এমন ঐকমত্য তৈরির ব্যবস্থা আর তেমন চর্চার যেন আর দরকার নেই! তাহলে একটা প্রশ্নের জবাব দেন, ফেসবুকে ভিন্নমত বা সমালোচনারই বা আর তাহলে দরকার কী? উদ্দেশ্য কী? জনগণ কেন একমত হবে? ঐক্যবদ্ধ হবে? আর আপনারাই বা কারা তাহলে?
এটা ভুয়া! এটা না বুঝে কাজ করা এক ব্যক্তিবাদ মাত্র! আপনি রাজনৈতিকভাবে একমত হবেন, ঐক্যবদ্ধ হতে পারেন, সেই প্রক্রিয়ার নামই তো রাজনৈতিক দল! অথচ আপনারা রাজনৈতিক দল ভেঙে দিয়ে ফেসবুক করতেছেন! এর উদ্দেশ্য কী? রাজনৈতিক দল প্রক্রিয়াকে ভেঙে তছনছ করে পরে এসেছেন-ফেসবুকে ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে! তাই নয় কী? কী করছেন, কী চাইছেন, সব অর্থহীন! চারদিকে এক উদগ্র-অর্থহীন নিজ ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠা! সেটা আপনি করতেই পারেন! ব্যক্তিগত অধিকারে! কিন্তু মনে রাখতে হবে, সে ক্ষেত্রে আপনি দল, ঐক্যবদ্ধ, ঐকমত্য ইত্যাদি কোনো কিছুরই আর যোগ্য নন, তাই প্রমাণ করছেন!
এটাই কী তারুণ্য! ইয়াংদের বাসনা বোধ! এটা কি আদরণীয় বা প্রশংসনীয়?
কোথায় চলেছে এরা? এভাবে অন্তত সময় নষ্ট করার দরকারই বা কী?
গৌতম দাস : রাজনৈতিক বিশ্লেষক
goutamdas.monuc@gmail.com