দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন এখন সময়ের দাবি

ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

জার্মানভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) তাদের এক প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশ করেছে। বিশ্বের মোট ১৮০টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে সবার শীর্ষে স্থান করে নিয়েছে আফ্রিকান দেশ সোমালিয়া। দেশটি ১০০ পয়েন্টের মধ্যে ১১ স্কোর করেছে।
ডেনমার্ক ৯০ স্কোর করে সবচেয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশের তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বাংলাদেশ দুর্নীতির ধারণাসূচকে ২৩ স্কোর করে ১৪তম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আগের বছরের চেয়ে বাংলাদেশের দুই ধাপ অবনমন ঘটেছে। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ আফগানিস্তানের উপরে রয়েছে।
বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু সেই উন্নয়ন সর্বতোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত উন্নয়ন। বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে অনুধাবন করা যায়, এখানে অতি উন্নয়ন এবং অতি দুর্নীতির এক মহাসম্মিলন ঘটেছে। বিগত সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের ‘রোল মডেলে’ পরিণত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হয়েছিল।
বাইরের দুনিয়াকে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখানো হলেও সেই উন্নয়ন ছিল সর্বতোভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত। যেসব উন্নয়নকর্ম সাধন করা হয়েছে সেটা কতটা টেকসই এবং গুণগত মানসম্পন্ন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা সবাই কথা বলি, কিন্তু সমাজে দুর্নীতির ব্যাপক উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করা যায়। বিগত সরকার আমলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণের কথা বলা হলেও তা ছিল মূলত ধাপ্পাবাজি। কারণ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের প্রত্যক্ষ মদদে দুর্নীতি সাধিত হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরাচারী সরকারের উন্নয়নের মূল লক্ষ্য থাকে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধন করা। বিগত সরকার আমলেও আমরা সেই অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি।
দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে উন্নয়ন ব্যয়ের জন্য অর্থায়ন জোগানোর পরিবর্তে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা থেকে কমিশন ভোগের প্রতিই বেশি গুরুত্ব আরোপ করে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা সেই প্রবণতাই প্রত্যক্ষ করেছি।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান মোতাবেক, বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। অথচ জাপানের ক্ষেত্রে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও হচ্ছে ৩৪ শতাংশের মতো। যেহেতু ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও তুলনামূলকভাবে কম, তাই বাংলাদেশকে উন্নয়ন অর্থায়নের জন্য বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৪ কোটি মার্কিন ডলার, স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১১ লাখ ৭ হাজার ৪০ কোটি টাকা।
দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথাপিছু বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯২ কোটি মার্কিন ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকায়। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, আগামী কয়েক বছর পর নতুন করে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে পূর্ববর্তী ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে পুরো জাতিই এখন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। এই ব্যাপক মাত্রায় ঋণ গ্রহণের প্রধান কারণ হচ্ছে অর্জিত উন্নয়নের সুফল আমরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে বণ্টনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। কিছু মানুষ তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিকভাবে উন্নয়নের অর্জিত সুফল কুক্ষিগত করছে। আর বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ক্রমেই দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়ে পড়ছে।
আমরা নানাভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলি। দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে দুর্নীতি বিদ্যমান আছে। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০১ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল। তারপর আরও ৪ বছর বাংলাদেশ বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে তালিকার শীর্ষে স্থান পেয়েছিল।
আওয়ামী লীগ বিএনপিকে এই বলে দোষারোপ করেছিল যে, বিএনপি আমলে ব্যাপক দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশ বিশ্বের এক নম্বর দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসাবে আখ্যায়িত হয়েছে। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গিয়েছিল, ২০০১ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতির যে ধারণাসূচক প্রকাশ করেছিল, তার ভিত্তি বছর ছিল ২০০০ সাল। সেই সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ব্যাপক দুর্নীতির কারণেই বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের শীর্ষে স্থান করে নিয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষস্থান হারালেও এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না যে, বাংলাদেশে দুর্নীতি হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি জেঁকে বসেছে।
গত সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ ও গোষ্ঠীতন্ত্রের মাধ্যমে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে দুর্নীতির বিষবাষ্পের বিস্তার ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতির কতটা বিস্তার ঘটেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদন থেকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে হস্তান্তরিত শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে মোট ২৩ হাজার ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার সমতুল্য ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। বর্ণিত সময়ে রাজনৈতিক নেতারা ঘুস গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। আমলারা ঘুস নিয়েছেন ৯৮ হাজার কোটি টাকা। শেয়ারবাজার থেকে আত্মসাৎ করা হয়েছে ১ লাখ কোটি টাকা। আর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে লুটপাট করা হয়েছে পৌঁনে ৩ লাখ কোটি টাকা। দুবাইতে বাংলাদেশিদের ৫৩২টি এবং মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে ৩ হাজার ৬০০টি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটা দুর্নীতির প্রাথমিক তথ্য। ব্যাপক অনুসন্ধান চালালে দুর্নীতির আরও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দেশের কোনো একটি সেক্টরও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ লোপাট করা হচ্ছে না। দুর্নীতির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ যেহেতু দেশের অভ্যন্তরে প্রশ্নাতীতভাবে ব্যবহারের সুযোগ নেই, তাই অবৈধ অর্থের মালিকরা তাদের অর্থ ও সম্পদ নানাভাবে বিদেশে পাচার করার চেষ্টা করেন।
অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অসৎ রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী এবং সংসদ-সদস্যরা। বর্তমানে রাজনীতি অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ বিতর্কিত জাতীয় সংসদের সদস্যদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি সদস্য ছিলেন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা। এখন সংসদ সদস্যসহ যে কোনো নির্বাচনে জয়লাভের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। যারা বিভিন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাদের কাছে নির্বাচন একটি লাভজনক ব্যবসা, এর মাধ্যমে ব্যয়িত অর্থ সুদে-আসলে তুলে আনা যায়। নির্বাচন হচ্ছে রাজনৈতিক ক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষমতা অর্জনের একটি সহজ পন্থা।
অর্থ পাচার কোনো দেশের সরকারই মেনে নিতে পারে না। কারণ অর্থ পাচার হলে একটি দেশ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রথমত, যে অর্থ নিজ দেশের উন্নয়নে ব্যয় হতে পারত, তা অন্য দেশের উন্নয়নে ব্যবহৃত হচ্ছে। পাচারের সুবিধা না থাকলে দেশের অভ্যন্তরে দুর্নীতির প্রবণতা কিছুটা হলেও হ্রাস পেত। অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে, মানুষ পাচারের জন্যই দুর্নীতি করে। যেহেতু দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করলে এবং তা দেশের অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করলে নানাবিধ সমস্যা ও জটিলতা দেখা দিতে পারে, তাই তারা নিরাপত্তাজনিত কারণেই নিজ দেশে উপার্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে থাকে।
দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন এবং তা বিদেশে পাচার করা না হলে দেশের টেকসই উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো। বিদেশি ঋণ ব্যাপক মাত্রায় গ্রহণ করার কোনো আবশ্যকতা থাকত না। সরকারের একটি অনুগত গোষ্ঠী দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর মুদ্রানীতি ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কয়েকটি উদ্যোক্তা গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করে বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে এরা ব্যাংক থেকে ঋণের নামে কত কোটি টাকা নিয়ে গেছেন তা তারা নিজেরাও বলতে পারবেন না। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কিছুদিন আগে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে ২৪টি বড় ধরনের জালিয়াতি ও দুর্নীতির ঘটনার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ৯৩ হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্যাংকিং সেক্টর থেকে লুটে নেওয়া অর্থের বেশিরভাগই বিদেশে পাচার করা হয়েছে।
দুর্নীতি আমাদের দেশে কোনো নতুন উপসর্গ নয়। প্রতিটি সরকারের আমলেই দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতি যেভাবে ডালপালা বিস্তার করে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রবেশ করেছে, অতীতে আর কখনোই তেমনটি দেখা যায়নি। অতীতেও সমাজে দুর্নীতি ছিল, তবে তার মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। বিগত সরকারের আমলে দুর্নীতির এমনভাবে বিস্তার ঘটেছে যে, রাষ্ট্রের কোনো প্রতিষ্ঠানই আর দুর্নীতিমুক্ত নয়। সমগ্র সমাজ ও রাষ্ট্র দুর্নীতির ওপর ভিত্তি করেই টিকে আছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গ্লানিকর। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি। দুর্নীতিবাজদের প্রতি ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে। সামাজিকভাবে দুর্নীতিবাজদের বয়কট করতে হবে। কিন্তু সমাজের চিত্র সম্পূর্ণ উলটো। যার যত অর্থ আছে, সমাজে তার প্রভাব ও সম্মান তত বেশি। আগে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারীদের সঙ্গে অনেকেই আত্মীয়তা করতে চাইতেন না। এখন টাকা থাকলে সবকিছুই অর্জন করা যায়।
দেশে যদি সুনাগরিক গড়ে তোলার উপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম নিশ্চিত করা যেত, তাহলে দুর্নীতির মাত্রা কিছুটা হলেও হ্রাস পেত। উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সত্যিকার দেশপ্রেমিক একজন মানুষ কখনোই দুর্নীতি করতে পারেন না। আমাদের ব্যর্থতা এখানেই যে, আমরা প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রীকে উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করছি। কিন্তু তাদের মধ্যে কতজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক এবং আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠছে তার খোঁজ রাখছি না। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের সুকুমার বৃত্তিকে জাগ্রত করে তাকে একজন আদর্শ-দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলা।
দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে হলে আমাদের অনুসন্ধান করতে হবে দুর্নীতি কেন সংঘটিত হয় বা একজন মানুষ কেন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়। কোনো মানুষই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। পারিপার্শ্বিক সামাজিক অবস্থাই তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত হিসাবে গড়ে তোলে। সমাজে যদি সম্পদের সুষম বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেত এবং প্রত্যেক নাগরিক উপযুক্ততা অনুসারে উন্নয়নের সুফল ন্যায্যতার ভিত্তিতে ভোগ করার সুযোগ পেত, তাহলে দুর্নীতি হ্রাস পেত। বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি পদ্ধতি গড়ে তুলতে হবে, যাতে কেউ দুর্নীতি করলে কোনো পর্যায় থেকেই সমর্থন ও প্রশ্রয় পাবেন না। দুর্নীতি একটি সমাজের সবচেয়ে বড় শত্রু। দুর্নীতি সমাজিক কাঠামো ও ব্যবস্থাপনাকে ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভাবনাকে বিনষ্ট করছে। কোনোভাবেই দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা যাবে না। যারা দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য বিচারের মাধ্যমে তাদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতিবাজরা দেশ ও জাতির শত্রু, এদের কোনো ক্ষমা নেই। জাতি হিসাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী : সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত