Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে পিছিয়ে পাশ্চাত্য

Icon

ল্যারি এলিয়ট

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে পিছিয়ে পাশ্চাত্য

কম খরচে তৈরি করা চীনের ডিপসিক চ্যাটবটটির কাজের ক্ষমতা প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যাটজিপিটির জন্য সত্যি জেগে ওঠার আহ্বান; এটি মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্য জেগে ওঠার আহ্বান; এটি ‘ওয়াল স্ট্রিটে’র জন্যও জেগে ওঠার জন্য আহ্বান। বস্তুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতার দৌড়ে অংশ নিতে আগ্রহী যে কোনো উন্নত দেশের জন্য এটি জেগে ওঠার আহ্বান। চীনের এ সাফল্যে স্পষ্ট হলো, এক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগাড়ম্বরের জন্য দায়ী নন। ১৯৫৭ সালে, কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম সাফল্যের খবরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কম খরচে তৈরি করা চাইনিজ ডিপসিক চ্যাটবটের কর্মদক্ষতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেমনই বিস্মিত হয়েছে। চীনারা একটি প্রিমিয়াম-মানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা বিনামূল্যে এবং অল্প খরচে পাওয়া যায়। বস্তুত চীনের এ সাফল্য যেন আরেকটি ‘স্পুটনিক’ মুহূর্ত।

এটা ঠিক যে, এমন অনেকেই আছেন যারা প্রশ্ন করেন, একটি চীনা ‘স্টার্টআপ’ এমন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারবে কিনা, যা প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিলিয়ন ডলার খরচ করতে বাধ্য করে। এ ধরনের সন্দেহ সঠিক হতে পারে, নাও পারে। তবে এটা ঠিক যে, পশ্চিমা প্রযুক্তিগত আধিপত্যের ক্ষেত্রে চীনের হুমকি এখন আরও স্পস্ট। গত শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের মহাকাশ প্রতিযোগিতার মতোই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য তুমুল প্রতিযোগিতা চলতে থাকবে এবং সম্ভবত এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হবে আরও তীব্র। চীন সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়েও অর্থনৈতিকভাবে বেশি প্রভাবশালী।

সস্তা শ্রমের পাশাপাশি চীন তার আনুষঙ্গিক সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে এগিয়েছে। ২০২৩ সালে, চীন বিশ্বের অন্যান্য অংশের চেয়ে বেশি পেটেন্ট দাখিল করেছে। চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়ে প্রতি মাসে স্টেম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) বিষয়ে গড়ে ছয় হাজারেরও বেশি পিএইচডি করছে-যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি। যেমন ডিপসিকের ক্ষেত্রে লক্ষ করা গেছে, একদল মেধাবী গবেষক ব্যতিক্রমী চিন্তা করে সফল হয়েছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আধিপত্যের হুমকি সম্পর্কে সচেতন এবং একইসঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক শক্তিকে প্রতিরোধ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চীনা আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যা জো বাইডেনের আমলেও অব্যাহত ছিল। বাইডেন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব শেষ করার এক সপ্তাহ আগেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি উন্নত কম্পিউটার চিপ রপ্তানির ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিলেন, যা চীনের মতো দেশগুলোকে উন্নত প্রযুক্তিগত সুবিধা পেতে বাধা সৃষ্টি করবে।

এটা স্পষ্ট যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আধিপত্যের লড়াই তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প মনে করেন, চীনের দিক থেকে কিছু প্রতিযোগিতা মার্কিন প্রযুক্তি খাতের জন্য খারাপ কিছু নয় এবং তিনি সঠিক অবস্থানেই রয়েছেন। বস্তুত কম খরচে তৈরি করা চাইনিজ ডিপসিক চ্যাটবটবিষয়ক সংবাদটি পশ্চিমকে ভালোভাবেই নাড়া দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আধিপত্যের লড়াইয়ে ব্রিটেনও এগিয়ে থাকতে আগ্রহী। হাইটেক সেক্টরগুলোতে চীনের সাফল্য জাদুকরী কিছু নয় এবং এটি কোনো চমকও নয় যে, চীন হঠাৎই বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারকেও প্রভাবিত করেছে। পূর্ব এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মতো, চীনও যে শিল্পগুলোতে এগিয়ে থাকতে চেয়েছে সেগুলোয় কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছিল এবং প্রচুর বিনিয়োগ করেছিল। এসব ক্ষেত্রে চীন ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে এবং ফলাফলের জন্য ধৈর্যসহ অপেক্ষা করেছে।

(ল্যারি এলিয়ট গার্ডিয়ানের কলামিস্ট)

৩০ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত

ভাষান্তর : মোহাম্মদ কবীর আহমদ

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম