ট্রাম্পের আগ্রহ : আলোচনায় গ্রিনল্যান্ড
এলোইস হার্ডি
প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট না হতেন, তাহলে গ্রিনল্যান্ডের বসন্তকালীন নির্বাচন বিশ্ব সংবাদ হতো না। ডেনমার্কের কাছ থেকে আধাস্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটি নেওয়ার বিষয়ে তার আগ্রহ অবশ্য এর নতুন স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে নতুন করে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। গ্রিনল্যান্ডের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে ‘স্বাধীনতা’ মূল বিষয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা সরকারকে অবশ্যই ৬ এপ্রিলের মধ্যে আহ্বান করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এবং দেশটির সমাজতান্ত্রিক ইন-ইট আতাকাতিগিট পার্টির প্রধান মুতে বোরুপ এগেডে বলেছেন, পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি স্বাধীনতার ওপর গণভোটের আহ্বান জানানোর লক্ষ্যে কাজ করবেন।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ডের ৪৩.৫ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, স্বাধীনতা দেশটির অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক’ বা ‘খুব ইতিবাচক’ প্রভাব ফেলবে, যদি এটি ডেনমার্কের রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। একই জরিপে পাওয়া গেছে, ৬২ শতাংশ মানুষ সেক্ষেত্রে স্বাধীনতার পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেবে। গ্রিনল্যান্ডের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের বিষয়টি ১৯ শতকের গোড়ার দিকে শুরু হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্পের বক্তব্য তা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। যেমন, গেল সপ্তাহে তিনি তার আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘একে পেতে চলেছে’। অন্যদিকে এ সপ্তাহে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন বার্লিন, প্যারিস ও ব্রাসেলস সফরের আগে গ্রিনল্যান্ডে ‘ইউরোপীয় ঐক্য’ গড়ে তুলতে আর্কটিকের জন্য দুই বিলিয়ন ডলারের নিরাপত্তা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন।
ডেনমার্ক বহু শতাব্দী ধরে গ্রিনল্যান্ড শাসন করেছে; কিন্তু ১৯৭৯ সালে এ অঞ্চলটিকে স্বশাসন দেওয়া হয়েছিল-যার ফলে গ্রিনল্যান্ডের বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ বিষয় তারাই নিয়ন্ত্রণ করে, যদিও ডেনমার্কের বৈদেশিক বিষয়ে চূড়ান্ত বয়ান রয়েছে এবং ২০০৯ সাল থেকে মূলত শাসন করেছে। দ্বীপের সাতটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে এগেডের দলসহ চারটিই গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতাকে সমর্থন করে।
তবুও এটি স্পষ্ট নয়, গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা কী রূপ নেবে, সেই সংস্থাগুলোতে ডেনমার্কের সদস্য পদ দিলে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইইউ এবং ন্যাটোর সদস্য হবে কিনা। ২০২৪ সালের গ্রিনল্যান্ডের ইলিসিমাটাসফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে দেখা গেছে, গ্রিনল্যান্ড স্বাধীন হলে ৬০ শতাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী গণভোটে ইইউতে যোগদানের পক্ষেই ভোট দেবে। তবে কিছু রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞ মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো অন্যান্য বৈশ্বিক অংশীদারের সঙ্গে সহযোগিতা এ অঞ্চলের সর্বোত্তম স্বার্থে হবে। এদিকে, যদিও চীন তার গ্রিনল্যান্ডের লক্ষ্য সম্পর্কে কমই স্পষ্ট করেছে, এটি এ অঞ্চলের দিকে উল্লেখযোগ্য শক্তি ও সম্পদ পরিচালনা করেছে। আবার মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের হাইড্রোকার্বন ও খনিজ খাতে চীনা বিনিয়োগ এ অঞ্চলের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।
হিমবাহের বরফ গলে যাওয়া এবং কাঁচামালের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রিনল্যান্ডের কৌশলগত প্রাসঙ্গিকতা এটিকে ভূ-রাজনীতিতে একটি ফ্ল্যাশ পয়েন্ট করে তুলেছে। ডিসেম্বরে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণে তার ইচ্ছা পুনরায় ব্যক্ত করার পর ডেনিশ সরকার এ অঞ্চলের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যয় প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ইউরো বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেনমার্ক ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা যদি চীন ও রাশিয়ার দখলদারত্বের বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের চারপাশ রক্ষা করতে না পারে, তাহলে গ্রিনল্যান্ডকে সুরক্ষিত করার জন্য মার্কিন দাবি আরও জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কাঁচামালের জন্য চীন এবং অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে গ্রিনল্যান্ডের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি চুক্তি রয়েছে। আর্কটিক ইনস্টিটিউটের সভাপতি রোমেইন চুফার্ট পার্লামেন্টকে বলেছেন, একটি ভূ-রাজনৈতিক মোহনা হিসাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রায়ই গ্রিনল্যান্ডের আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করে। কিন্তু বর্তমান মুহূর্তটি এ অঞ্চলের জন্য তার ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার সুযোগ হিসাবে কাজে লাগতে পারে।
দ্য পার্লামেন্ট ম্যাগাজিনে গত ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত নিবন্ধ থেকে অনূদিত
এলোইস হার্ডি : সাংবাদিক, দ্য পার্লামেন্ট ম্যাগাজিন, বেলজিয়াম