আইটি শিল্পের উন্নয়ন : প্রস্তাব ও সুপারিশ
সৈয়দ আলমাস কবীর
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গত তিন দশকে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। প্রথমদিকে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশ থেকে কম্পিউটার হার্ডওয়্যার আমদানি ও বিক্রির দিকে বেশি মনোযোগ দিলেও খুব দ্রুতই তারা নিজস্ব সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং আইটিনির্ভর পরিষেবার ক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে শুরু করে। রেডিমেড গার্মেন্ট শিল্পের সফলতার অনুকরণে অনেক প্রতিষ্ঠান কম খরচের শ্রমবাজারের সুবিধা নিয়ে ডেটা-এন্ট্রি ব্যবসায় প্রবেশ করে। এ বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং (বিপিও) খাত পরবর্তীকালে একটি পরিপূর্ণ শিল্পে রূপ নিয়েছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানটি ছিল মূলত একটি রাজনৈতিক প্রচারণা; তথাপি দেশের আইটি উদ্যোক্তাদের মধ্যে তা ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। নানা অকার্যকর ও ভুয়া আইটি প্রকল্পে গত পনেরো বছরে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা এখন সামনে আসছে। বর্তমানে দেশের আইটি শিল্প নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। এখনই বাধাগুলো দূর না করা হলে, তা দেশের অগ্রগতির অন্তরায় হয়ে উঠবে।
দেশে ডিজিটাল অবকাঠামো এখনো পর্যাপ্তভাবে উন্নত হয়নি। ইন্টারনেট সংযোগের মান প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল, সব জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনো নির্ভরযোগ্য নয়। ফলে আইটি খাতের কার্যকারিতা ব্যাহত হচ্ছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য যেমন স্পষ্ট, তেমনই ধনী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এর ব্যবধান লক্ষণীয়। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে, যা ডিজিটাল সেবা প্রদান ও গ্রহণে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রচুর প্রতিভা রয়েছে, তবে তাদের শিক্ষাগত জ্ঞান ও ইন্ডাস্ট্রির যে চাহিদা, তার মধ্যে একটি বড় ফারাক রয়েছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্রমাগত প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে, যা আইটি খাতের উন্নতির পথে একটি বড় বাধা। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনেও তাই জোর দেওয়া উচিত। বাংলাদেশের আইটি খাতের জন্য প্রচলিত নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জটিল ও অনেক ক্ষেত্রে অস্পষ্ট। নীতি ও বিধিমালার এ অসংগতি এবং স্থিতিশীলতার অভাব বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করার একটা বড় কারণ। বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য তাই নীতিমালা সহজীকরণ ও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আইটি উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পেতেও যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। মেধা-শিল্পে কাজ করা কোম্পানিগুলোর ক্রেডিট রেকর্ড না থাকায় তারা ঋণ পায় না। স্থাবর সম্পত্তি জামানত রাখা তাদের জন্য সম্ভব হয় না। ব্যাংকগুলো তাই ঝুঁকি নিতে অস্বীকার করে। আউটসোর্সিং পরিষেবা প্রদানকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলেও ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম এবং শ্রীলংকার মতো অন্যান্য দেশের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশকে সেবার গুণগত মানোন্নয়নে ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে আরও মনোযোগী হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যে ধরনের পরিষেবা বিদেশে রপ্তানি করা হয়, তা মোটামুটি প্রাথমিক স্তরের। এ ধরনের সেবা রোবটিক্স প্রসেস অটোমেশন (আরপিএ) এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে দ্রুতই প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। ফলে এসব কাজের চাহিদা ক্রমশ কমছে। ‘সস্তা শ্রম’নির্ভরতা থেকে সরে এসে ‘গুণগত মানে’র দিকে মনোযোগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
দেশে গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো, দেশে মেধাভিত্তিক সম্পদ (আইপি) সুরক্ষা আইন ও নীতিমালার কার্যকরভাবে প্রয়োগ হয় না। এছাড়াও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো চিরাচরিত ও গতানুগতিক পাঠ্যক্রমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, যা নতুন চিন্তা ও উদ্ভাবনী দক্ষতার বিকাশে সহায়ক নয়। বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর সুবাদে বাংলাদেশকে আইটি খাতের একটি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার অপরিসীম সম্ভাবনা রয়েছে। আইটি খাতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বড় জমি-জায়গার প্রয়োজন পড়ে না। একটি ল্যাপটপ ও উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই একজন ব্যক্তি ছোট পরিসরে বসেই লক্ষাধিক টাকা আয় করতে সক্ষম হতে পারে এবং দেশের অর্থনীতিতে সরাসরি অবদান রাখতে পারে। প্রয়োজনে ঘরে বসেও আইটিতে কাজ করা সম্ভব, যা কিনা গৃহস্থালি দায়িত্ব পালনকারী বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্যও বেশ উপযুক্ত। এছাড়া বিপিও কোম্পানিগুলো দ্রুত স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়েই অনেক বেশিসংখ্যক কর্মীকে কাজে নিযুক্ত করতে পারে। দেশের বেকার সমস্যার জন্য এটি একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। এ ‘জনতাত্ত্বিক লভ্যাংশ’ খুব বেশি হলে আর দুই দশক পাওয়া যাবে। তাই সময়ক্ষেপণ না করে এখনই নিুলিখিত উদ্যোগগুলো নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের আইটি খাতকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), মেশিন লার্নিং (ML) এবং ব্লকচেইনসহ বিভিন্ন উদীয়মান প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হলে নতুন নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা হবে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক। আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশি আইটি কোম্পানিগুলো নতুন বাজারে প্রবেশ করা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পারে। এ ধরনের কোলাবোরেশন কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে ও তাদের আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করবে, যা বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশকে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে। বিদেশি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতা করে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের পাঠ্যক্রমকেও আধুনিকায়ন করতে পারে। এতে জ্ঞানের পরিধির বিকাশও ঘটবে। পাশাপাশি দেশের আইটি খাতকে আরও গতিশীল করতে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে জোরদার করাও জরুরি। এর জন্য প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থায়ন, পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় রিসোর্স নিশ্চিত করতে হবে। আইনি কাঠামো পুনর্বিবেচনা করে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্মগুলোর জন্য সহজ প্রস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করবে এবং আইটি খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব ও চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের আইটি খাতকেও সবুজ প্রযুক্তির বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
ডিজিটাল বিভাজন কমাতে শহর এবং গ্রামীণ এলাকার মধ্যে অবকাঠামোগত বৈষম্য দূর করাও অত্যন্ত জরুরি। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ-এর দাম ব্যাপকভাবে হ্রাস পেলেও ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কগুলোর (এনটিটিএন) ট্রান্সমিশনের হার কোনো অংশেই কমেনি, বরং কিছু ক্ষেত্রে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থার সুরাহা না করলে শহর ও গ্রামাঞ্চলের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করা সম্ভব হবে না। দেশের টেলিযোগাযোগ নীতিমালাও হালনাগাদ করা দরকার। সক্রিয় অবকাঠামো শেয়ারিংয়ের অনুমতি দিয়ে অপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক নির্মাণের অপচয় রোধ করলে, সম্পদের আরও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হবে। ইন্টারনেটের ব্যয় কমাতে মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাও দূর করা উচিত। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে বা যে কোনো আপৎকালীন ইন্টারনেট পরিষেবা অব্যাহত রাখতে VSAT ভিত্তিক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রযুক্তির অনুমোদন দরকার। প্রয়োজনের ভিত্তিতে দেশের যে কোনো স্থানে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা যাবে। এর ফলে টেলিমেডিসিন, এডটেক ইত্যাদি খাতের বিকাশ ঘটবে এবং প্রযুক্তির সুফল প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ পেতে সক্ষম হবে।
একাডেমিক জ্ঞান এবং শিল্পের বাস্তব দক্ষতার মধ্যে যে ব্যবধান বিদ্যমান, তা দেশের বেকারত্বের একটি প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো হন্যে হয়ে দক্ষ কর্মী খুঁজছে, সেখানে প্রযুক্তিতে স্নাতক হাজার হাজার মানুষ চাকরি পাচ্ছেন না; কারণ তাদের দক্ষতা পর্যাপ্ত নয়। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কিছুদিন অন্তর অন্তর আইটি ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বসে পাঠ্যক্রমকে ক্রমাগত হালনাগাদ রাখতে হবে। এটি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নাসিকতা পরিহার করে তাদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে এখনই। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে দক্ষতার ঘাটতি পূরণ করা হলে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো সর্বাধুনিক প্রযুক্তি প্রদান করে দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকতে পারবে। আইটি উদ্যোক্তা ও কোম্পানিগুলোর জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করাও প্রয়োজন। মেধাভিত্তিক এ শিল্পে জমি, বাড়ি ইত্যাদি স্থাবর সম্পত্তির বদলে মেধাসম্পদকে জামানত হিসাবে গণ্য করার পদ্ধতি সরকার কর্তৃক অনুমোদন করতে হবে। গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ ছাড়া একটি দেশ কখনো নিজস্ব মেধাস্বত্ব তৈরি করতে সক্ষম হয় না। ২০৩৩ সালের ১ জানুয়ারির পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রিপস চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। সুতরাং, কালক্ষেপণ না করে বাংলাদেশের জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের আইন কার্যকর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ আইন শুধু নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাই রক্ষা করবে না, বরং ক্লাউডভিত্তিক মেডিকেল ডেটাবেজের মতো উদীয়মান ব্যবসার জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করবে। সংবেদনশীল তথ্য, বিশেষ করে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য, দেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সংরক্ষণও বাধ্যতামূলক করা উচিত, যাতে কোনো গাফিলতির কারণে তথ্য-লঙ্ঘন হলে বা চুরি হলে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে নতুন ধরনের অপরাধও সৃষ্টি করছে। ভবিষ্যতের ডিজিটাল অপরাধ মোকাবিলায় নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি সংশোধন করে নাগরিকের হয়রানি নয়, বরং নাগরিকের সুরক্ষাকে এর মূল উদ্দেশ্য বানাতে হবে। পাশাপাশি, বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে এর অপব্যবহার রোধেও ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এসব আইনের প্রণয়ন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে নাগরিকদের অধিকার যাতে সমুন্নত থাকে এবং ব্যবসার নিরাপত্তা বজায় থাকে, সে ব্যাপারে নজর রাখা প্রয়োজন। এ আইনগুলো যেন নিয়ন্ত্রণমূলক না হয়ে সুরক্ষামূলক হয়, এটি নিশ্চিত করতে হবে। প্রতিটি বিদেশি হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং সেবার ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্থানীয় মূল্য সংযোজন নিশ্চিত করতে হবে। এটি শুধু নতুন জ্ঞান ও দক্ষতা আনয়নকেই সহজতর করবে না, বরং ক্রয়কৃত পণ্যের দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণকেও সহজ ও সাশ্রয়ী করে তুলবে। হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পগুলোতে সরবরাহকারীকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সরঞ্জাম সংযোজন করার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। সফটওয়্যার এবং সেবার ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত করে কাস্টমাইজেশন ও বাস্তবায়ন করাও জরুরি। বাংলাদেশের অনেক আইটি কোম্পানি বৃহৎ প্রকল্প ডিজাইন ও বাস্তবায়নে পারদর্শিতা অর্জন করেছে। যেমন-বিআরটিএ-এর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স ও যানবাহন নিবন্ধন ব্যবস্থা, হজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, টিয়ার-৪ ডেটা সেন্টার, ইলেকট্রনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি) সিস্টেম ইত্যাদি। এ ধরনের কোম্পানিগুলো বিদেশের অনুরূপ প্রকল্পগুলোতে কাজ করতে সক্ষম। বাংলাদেশের উচিত অনুন্নত দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা, যেখানে অনুরূপ প্রকল্পগুলোর সফল পুনরাবৃত্তি ঘটানো যাবে। শর্ত হবে, এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশি কোম্পানি, আর চুক্তির মাধ্যমে এ প্রযুক্তিগত সহায়তার (টিএ) জন্য বাংলাদেশ সেই দেশকে অনুদান প্রদান করবে। এর ফলে অনুদানের টাকা প্রকল্প থেকে আয় হিসাবে বাংলাদেশেই ফিরে আসবে এবং দেশি কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করবে, যা তাদের বৈশ্বিক নির্ভরযোগ্যতা বাড়িয়ে দেবে। চলমান অর্থবছরের বাজেট পুনর্মূল্যায়ন করে অপ্রয়োজনীয় ও অনাবশ্যক প্রকল্পগুলো বাদ দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধাপ্রদানকারী টেকসই প্রকল্পগুলোর জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোও সমীচীন। দক্ষতা উন্নয়ন, গবেষণা প্রণোদনা এবং জিটুজি প্রযুক্তিগত সহায়তার মতো প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানো হলে সেগুলো কার্যকর ও সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে।
ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি-সচেতন তরুণ জনগোষ্ঠীর এ দেশে ব্যবসা অনুকূল পরিবেশ এবং যথাযথ নীতিগত সহায়তা নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশকে আইটি সেবা ও সফটওয়্যার শিল্পের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত করা যেতে পারে। তবে এ খাতের উন্নয়নে সরকারি সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাগরিকদের ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা না করলে আইটি খাতের প্রসার ঘটবে না।
সৈয়দ আলমাস কবীর : উদ্যোক্তা, পলিসি অ্যাডভোকেট ও আইটি পরামর্শক