একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের রূপরেখা
ড. মিফতাহুর রহমান
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েছে। জাতিকে পুনর্গঠন ও সংস্কারের জন্য একটি সুগঠিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল প্রয়োজন। অন্তর্র্বর্তী সরকারকে অবশ্যই একটি বিশাল আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সেক্টরাল সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে; যা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। উত্তরণ-পরবর্তী একটি সফল রোডম্যাপকে শুধু তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে স্থিতিশীল করার মধ্যে সীমিত রাখলে চলবে না; বরং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে এবং সামাজিক সমতাকে উন্নীত করে দীর্ঘমেয়াদি সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করতে হবে। এর মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা, স্থানীয় সরকারগুলোতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে অবশ্যই তার শিল্পে বৈচিত্র্য আনতে হবে; পোশাক খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা থেকে দূরে সরে যেতে হবে এবং প্রযুক্তি, ওষুধ ও নবায়নযোগ্য শক্তির মতো উদীয়মান ক্ষেত্রের উদ্ভাবনকে উদ্দীপিত করতে হবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য আইসিটি, কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে সংস্কার অপরিহার্য। তদুপরি, অন্তর্র্বর্তী সরকারকে অবশ্যই একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি, রপ্তানি বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা সুরক্ষিত করার জন্য বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ, বহুমাত্রিক পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরও ন্যায়সংগত, উদ্ভাবনী এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে একটি পথ নির্ধারণ করতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সেক্টরকে সম্বোধন করার জন্য একটি বিশদ রূপরেখা দেওয়া হলো-
সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন : সব রাজনৈতিক দল এবং সুশীল সমাজের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি পরিবেশ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক নেতৃত্বের ক্ষমতায়ন ও কার্যকর শাসন নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকারের স্বায়ত্তশাসন বৃদ্ধি করতে হবে। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা রক্ষায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে হবে। সামাজিক সমতা রক্ষায় নারী, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সমঅধিকার নিশ্চিত করে বৈষম্য কমানোর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
অর্থনৈতিক সংস্কার : কর সংস্কারের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তদের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য কর ব্যবস্থাকে সরলীকরণ এবং কর ফাঁকির বিরুদ্ধে লড়াই করার সঠিক পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে প্রযুক্তি, ওষুধ ও পর্যটনের মতো উচ্চমূল্যের খাতগুলোতে ফোকাস করা প্রয়োজন। উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে প্রণোদনা ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান চালু করা উচিত বলে আমার অভিমত।
বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি : রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে পাট, আইসিটি, কৃষিভিত্তিক পণ্য এবং ওষুধের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পোশাকের বাইরে রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য আনতে মেধাবী ও যোগ্য জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিকরণ প্রয়োজন। ভর্তুকি, গবেষণা ও উন্নয়ন বিনিয়োগের মাধ্যমে এ খাতে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে। রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া সহজ করা এবং প্রবাসীদের সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করা, বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ করার সঠিক প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নও দরকার। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নবায়নযোগ্য শক্তি এবং ডিজিটাল পরিষেবার মতো উদীয়মান সেক্টরগুলোতে মনোনিবেশ করে অনুকূল নীতি, ট্যাক্স বিরতি ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে সঠিক উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।
আইসিটি সেক্টর সংস্কার : ডিজিটাল ও প্রযুক্তিচালিত অর্থনীতিকে উৎসাহিত করতে দেশব্যাপী উচ্চগতির ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রোগ্রামগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে। দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও সরকারি পরিষেবাগুলোতে অ্যাক্সেস বাড়াতে ব্যাপক ই-গভর্নেন্স সিস্টেম চালু করতে হবে। স্থানীয় স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম বাড়াতে এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা করতে প্রযুক্তি ইনকিউবেটর, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ও ইনোভেশন হাবকে সমর্থন করার মাধ্যমে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
কৃষি খাত : আধুনিক চাষের কৌশল প্রবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি পদ্ধতির প্রক্রিয়া গ্রহণ করে নির্ভুল চাষ, উচ্চফলনের জন্য জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত ফসল ও উন্নত সেচ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষায় ফসল সংগ্রহ-পরবর্তী ক্ষতি কমাতে স্টোরেজ, পরিবহণ এবং বিতরণ পরিকাঠামোয় বিনিয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি-রপ্তানিতে মান ও সার্টিফিকেশন উন্নত করে জৈব ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের একটি প্রধান রপ্তানিকারক দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
গার্মেন্ট সেক্টর : স্থায়িত্ব ও স্বয়ংক্রিয়তার মাধ্যমে টেকসই উৎপাদন প্রক্রিয়ার দিকে রূপান্তর এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা করার জন্য প্রয়োজনীয় অটোমেশন অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিতে ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে শ্রম আইনকে শক্তিশালী করতে হবে। কারখানার অবস্থার উন্নতি ঘটাতে হবে। পণ্য বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে কম দামের পোশাকের বাইরে গিয়ে উচ্চ প্রযুক্তির কাপড় এবং ফ্যাশন-ফরোয়ার্ড পণ্যগুলোতে বিনিয়োগ করতে হবে।
পাট খাত : পাটজাত দ্রব্যে আরএন্ডডি চালুর মাধ্যমে পাটের নতুন ব্যবহার, যেমন বায়োডিগ্রেডেবল পণ্য এবং পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং অন্বেষণ করতে গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে। প্রচারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিকল্প হিসাবে বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের বাজারজাতকরণ, টেকসই উৎপাদনে বাংলাদেশকে একটি শীর্ষস্থানীয় স্থান দিয়েছে-তা সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থা : পাঠ্যক্রম আধুনিকীকরণের লক্ষ্যে STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত), সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও ডিজিটাল দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাঠ্যক্রমকে আধুনিক করতে হবে। বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইসিটি এবং উৎপাদনের মতো ক্রমবর্ধমান শিল্পে দক্ষতার ব্যবধান পূরণ করতে সঠিক কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষার মান উন্নত করতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি বলে আমি মনে করি।
সাংস্কৃতিক পরিবর্তন : ঐতিহ্য সংরক্ষণে শিল্প, উৎসব ও পাবলিক স্পেসের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি এবং জাতীয় গর্বকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রচার বৃদ্ধি করতে হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় একটি প্রাণবন্ত বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সহনশীলতা ও ঐক্য গড়তে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা কমাতে আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃজাতিক সংলাপকে উৎসাহিত করতে হবে।
নৈতিক সংস্কার : শাসনে নৈতিকতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বাধ্যতামূলক নৈতিকতার প্রশিক্ষণ চালু করতে হবে। কঠোর আইন এবং অনৈতিক আচরণের পরিণতি কী হবে-তা প্রচার করার ব্যবস্থা করতে হবে। সততা এবং জাতির সেবার ওপর জোর দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থায় নৈতিক শিক্ষাকে একীভূত করতে হবে।
পরিবহণ ব্যবস্থা : পাবলিক ট্রান্সপোর্ট জনগণের প্রত্যাশা। এটি পূরণে দক্ষ পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বিনিয়োগ করতে হবে, বিশেষ করে মেট্রো সিস্টেম, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ও জাতীয় রেলব্যবস্থায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়ন, শহুরে এলাকায় যানজট কমানোয় আধুনিক উদ্যোগ ও গ্রামীণ যোগাযোগের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হবে। দূষণ কমাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন এবং সবুজ গণপরিবহণ ব্যবস্থার প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা : পুলিশ সংস্কারে যথাযথ প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম এবং মানবাধিকার ও কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ওপর জোর দিয়ে পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকীকরণে উদ্যোগ নিতে হবে। বিচারব্যবস্থা উন্নয়নে মামলার ব্যাকলগ পরিষ্কার করতে হবে, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিচারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে।
স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা : সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হরে। সব নাগরিকের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের ও অ্যাক্সেসযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সুবিধার উন্নতি করতে হবে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় ও প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য টেলিমেডিসিনে বিনিয়োগ করতে হবে। চিকিৎসা, গবেষণা ও উন্নয়নে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে চিকিৎসা গবেষণাকে উৎসাহিত করতে হবে এবং ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
চাকরি সৃষ্টি : সবুজ চাকরির জোগান দিতে বায়ু, সৌর ও জলবিদ্যুৎ শিল্পে কর্মসংস্থান তৈরি করতে এ খাতে বিনিয়োগ করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা যেতে পারে। যুব কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তা কর্মসূচি, শিক্ষানবিশ ও স্টার্টআপ ইনকিউবেশনের মাধ্যমে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ফোকাস করতে হবে।
আইন ও বিচার : বিচারিক সংস্কারে মামলার ব্যাকলগ কমাতে দ্রুত বিচার আদালত ও মধ্যস্থতা কেন্দ্রের মাধ্যমে সময়োপযোগী এবং নিরপেক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার উন্নত করাও দরকার।
পাওয়ার সেক্টর : নবায়নযোগ্য শক্তি উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুতের মতো নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসগুলোতে বিনিয়োগের সঠিক জরিপ ও প্রসার ঘটাতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
গ্যাস সেক্টর : এনার্জি সিকিউরিটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শক্তির উৎসে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং শক্তির স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিতে অপচয় হ্রাস ও গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থার দক্ষতা উন্নত করার ওপর জোর দিতে হবে।
ফিশিং সেক্টর : টেকসই অনুশীলনের মাধ্যমে দেশের মৎস্য সম্পদ রক্ষার জন্য টেকসই মাছ ধরার অনুশীলন ও সামুদ্রিক সংরক্ষণের প্রচার বৃদ্ধি করতে হবে। রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে উচ্চমানের, রপ্তানিযোগ্য মাছের পণ্য বিকাশের জন্য এ শিল্পে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বৈদেশিক নীতি : আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা, বিশেষ করে বাণিজ্য, নিরাপত্তা এবং পানি ব্যবস্থাপনায় আরও জোর দিতে হবে। গ্রোবাল ট্রেড অ্যালায়েন্সে বাংলাদেশি পণ্য ও পরিষেবার জন্য নতুন বাজার উন্মুক্ত করতে বিশ্ব বাণিজ্য জোটে যোগ দিতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির বিকল্প নেই; তাই এটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
দেশীয় খাত : আবাসন ও অবকাঠামো উন্নয়নে শহর ও গ্রামীণ উভয় ক্ষেত্রেই জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতির জন্য সাশ্রয়ীমূল্যের আবাসন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। পানি এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থা, বিশেষ করে অনুন্নত অঞ্চলে পরিষ্কার পানি এবং স্যানিটেশন পরিষেবাগুলোতে সর্বজনীন অ্যাক্সেস নিশ্চিত করতে হবে।
উপরে আলোচিত এ সংকটময় ক্ষেত্রগুলোর প্রতি দৃষ্টিনিবদ্ধ করে অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘমেয়াদি একটি টেকসই, সমৃদ্ধ ও ন্যায়সংগত বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। পরিশেষে, যদিও এ রূপরেখাটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সেক্টরাল উন্নয়নের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছে; তবে এটি কোনোভাবেই সম্পূর্ণ নয়। লিঙ্গ ও সংখ্যালঘু অধিকার, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতার মতো বিষয়গুলো সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। দেশের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিস্থাপক ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য রূপরেখাযুক্ত সংস্কারের সঙ্গে এগুলোর সমাধান করা অপরিহার্য হবে। ভবিষ্যতের জন্য সমাজের সবক্ষেত্রে ন্যায়সংগত বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ক্রমাগত অভিযোজনযোগ্যতা ও প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।
ড. মিফতাহুর রহমান : ডিন, স্কুল অব সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
miftahur.rahman@cub.edu.bd