Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ফেলানী থেকে স্বর্ণা দাস, সীমান্তে আর কত লাশ?

Icon

ড. মো. মনিরুজ্জামান

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফেলানী থেকে স্বর্ণা দাস, সীমান্তে আর কত লাশ?

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যা বিশ্বের ৫ম দীর্ঘতম সীমান্ত। এটি বাংলাদেশের ৬টি বিভাগ এবং ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, মিজোরাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা রাজ্যগুলোকে বিভক্ত করেছে। এ সীমান্ত এখন নানা সমস্যার বিষয় হয়ে উঠেছে। যেমন-চোরাচালান, অবৈধ অভিবাসন, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি। বর্তমান বিশ্বে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। এ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুদিন পরপরই সীমান্তে এরূপ হত্যাকাণ্ডের খবরাখবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ভারতের সঙ্গে ৬টি দেশের স্থল সীমান্ত রয়েছে। এগুলো হলো-চীন, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। উপরোক্ত প্রত্যেকটি দেশের সীমান্তেই বিএসএফ মোতায়েন রয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোর অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তারা শুধু পেটের দায়ে শ্রমিক হিসাবে দুই মুঠো ভাতের আশায় দুই দেশের চোরাকারবারিদের মালামাল বহন করে দিয়ে থাকে। দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো বেশ ঘনবসতিপূর্ণ। উভয় দেশের বহু মানুষ নদীভাঙনের কারণে খেত-খামার ও জীবিকা হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। তারা উভয় সীমান্তে গবাদিপশু ও পণ্য পাচারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে অনেককে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয় অথবা হত্যা করা হয়। পণ্য পাচারের জন্য শিশুদেরও ব্যবহার করা হয়। কারণ তাদের ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এতে তারাও সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়।

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ফেলানী খাতুনের হত্যাকাণ্ড একটি বর্বরোচিত ঘটনা। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুর ইসলাম পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের নয়াদিল্লিতে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। নয়াদিল্লিতে গৃহকর্মীর কাজ করা ফেলানী সেদিন বিয়ের পিঁড়িতে বসার জন্য কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে পিতার সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য মই বেয়ে কাঁটাতারের বেড়া পার হচ্ছিল। বাবা পার হতে পারলেও কন্যা ফেলানীর কাপড় সীমান্তের কাঁটাতারে আটকে যায়। আতঙ্কিত হয়ে সে চিৎকার শুরু করে। এমতাবস্থায় অমিয় ঘোষ নামে বিএসএফের একজন সৈনিক ফেলানীকে পাখি শিকারের মতো গুলি করে হত্যা করে। মধ্যযুগীয় কায়দায় তার প্রাণহীন দেহটি প্রায় ৫ ঘণ্টা উলটোভাবে কাঁটাতারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। ফেলানী হত্যার ফলে বাংলাদেশে এবং ভারতেরও কোনো কোনো মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি। ভারত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা বরং ফেলানীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে নির্দেশনা প্রদান করেছিল, তাও আমলে নেয়নি। বিএসএফ সদস্য ফেলানীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলেও ভারতের আদালত তাকে বেকসুর খালাস দেয়। এরপর মামলা ভারতের সুপ্রিমকোর্টে গড়ালে আজও তার নিষ্পত্তি হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশের দুই কিশোর-কিশোরী সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়। ০১.০৯.২০২৪ তারিখ রাতে মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় বসবাসকারী ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে কিশোরী স্বর্ণা দাস নিহত হয়। স্বর্ণা দাস ও তার মা সঞ্চিতা রানী দাস ভাইকে দেখতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ ঘটনার ঠিক ৮ দিন পর ০৯.০৯.২০২৪ তারিখে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে জয়ন্ত কুমার সিংহ নামের এক কিশোর নিহত হয়। জয়ন্ত কুমার সিংহ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ফকিরভিটা বেলপুকুর গ্রামের বাসিন্দা মহাদেব কুমার সিংহের ছেলে। একদল লোক স্থানীয় দালালের সহযোগিতায় ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করলে গভীর রাতে উপজেলার ধনতলা সীমান্ত এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। দুই দেশের সীমান্তে অনেক অভিন্ন পাড়া রয়েছে, যেখানকার মানুষ নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও জীবিকার সন্ধানে অনেকে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। কাউকে দেখামাত্রই গুলি করা মারাত্মক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। এমনটি না করে উভয় দেশের আইন অনুযায়ী অপরাধীকে গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা উচিত। সীমান্ত হত্যা দুই দেশের (বাংলাদেশ-ভারত) ভালো সম্পর্কের পথে অন্তরায় বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

বাংলাদেশ-ভারত পরস্পর পরস্পরের বন্ধু বলে দাবি করলেও ভারত কর্তৃক নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের নাগরিককে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চুক্তি অনুসারে এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনিভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষার্থে যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে, তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাটাই বাঞ্ছনীয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সীমান্তে বিএসএফ যদি কোনো কর্মকাণ্ডকে হুমকিস্বরূপ মনে করে, তাহলে তারা আত্মরক্ষার জন্য সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসাবে গুলি করতে পারবে। কিন্তু কাঁটাতারে কাপড় আটকে যাওয়া এক নিরস্ত্র কিশোরী ফেলানী খাতুন কিংবা মায়ের হাত ধরে সীমান্ত পাড়ি দিতে যাওয়া কিশোরী স্বর্ণা দাস কী করে অস্ত্রধারী বিএসএফের জন্য হুমকি হতে পারে তা বোধগম্য নয়। সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে বেঁচে যাওয়া এবং প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য মতে, বিএসএফ তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা না করে বা সতর্ক না করে নির্বিচারে গুলি চালায়। বিএসএফ আরও দাবি করেছে, দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করলে তারা গুলি চালায়। তবে কোনো অপরাধ সন্দেহে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার ন্যায়সংগত নয়। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, অপরাধী হিসাবে সীমান্তে হত্যার শিকার ব্যক্তিরা হয় নিরস্ত্র থাকে অথবা তাদের নিকট কাস্তে, লাঠি বা ছুরি থাকে। তদন্ত করা মামলার কোনোটিতেই বিএসএফ প্রমাণ করতে পারেনি যে, হত্যার শিকার ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রাণঘাতী অস্ত্র বা বিস্ফোরক পাওয়া গেছে; যার দ্বারা তাদের প্রাণসংহার বা গুরুতর আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে।

সুতরাং সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলি চালানোর দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে মানুষের জীবনের অধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যা বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভারত প্রতিবেশী দেশ হিসাবে সীমান্তে চলাচলকারীদের সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আচরণ করবে। ভারত সরকারের এটা নিশ্চিত করা উচিত যে, সীমান্তরক্ষী বাহিনী মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং আইনের শাসন অনুসরণ করছে। সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার প্রধান কারণ বিএসএফের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেশ উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সীমান্তে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য উভয় দেশের মধ্যে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ সীমান্তে আর কোনো গুলি চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি আর রক্ষা হয় না। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার তো দূরের কথা, ভারত সরকার এতে কোনো উদ্বেগও প্রকাশ করেনি। তাই সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানোর প্রতিশ্রুতি শূন্যেই ঝুলে আছে। এমনকি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই দিনাজপুর সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি কিশোর নিহত হয়। তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতেই অবস্থান করছিলেন। আন্তর্জাতিক আইনে কোনো বাহিনীকে বিশ্বের কোথাও নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের গুলি করার অনুমতি দেয়নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান মতে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএসএফের গুলিতে ও নির্যাতনে প্রায় ৬১০ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশের উচিত ভারতকে লিখিতভাবে অভিযোগ করে এর জবাব চাওয়া। যদি এতেও সমাধান না হয়; তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইনের মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশ সরকারকে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আন্তর্জাতিকভাবে সীমান্ত হত্যার যে আইন আছে, বাংলাদেশ সরকার তা প্রয়োগ না করায় আজও এর সমাধান হয়নি। বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চললেও বাংলাদেশের বিগত সরকারের দিক থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি। হাসিনা সরকার একদিকে ভারতকে একতরফাভাবে ট্রানজিট, বন্দর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যবসাসহ নানা ধরনের সুবিধা প্রদান করেছে, অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশকে আন্তঃসীমান্ত নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পর্যন্ত দেয়নি এবং সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা করছে।

১৩.০৯.২০২৪ তারিখে বাংলাদেশের বাংলাবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী (বিজিবি) কমান্ডার পর্যায়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ উপলক্ষ্যে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সীমান্তে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য বিএসএফ দুঃখ প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে সীমান্তে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ওপর গুলি চালাবে না বলে বিজিবির প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করে। সীমান্তে এরূপ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের অপ্রতিবেশীসুলভ, বন্ধুত্বহীন ও আধিপত্যবাদী মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে হয়। এটি ভারতের প্রতি বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির স্পষ্ট নিদর্শন। বিএসএফের এসব সীমান্ত হত্যাকাণ্ড সার্বিকভাবে বাংলাদেশের জনগণের ভারতবিরোধী মনোভাবকে উসকে দিতে পারে। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি হত্যা ভারতের প্রতিশ্রুতিতে কখনো বন্ধ হবে না। এজন্য আমাদের তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ করতে হবে। ২০১৭ সালের ৯ মার্চ ভারত-নেপাল সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে গোবিন্দ গৌতম নামে এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে নেপালের জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পাওয়া ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে ভারতের তৎকালীন নিরাপত্তা উপদেষ্টা নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং নিহতের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা এবং গোবিন্দ গৌতমকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়। আবার ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানের একজন নাগরিককেও ভারত গুলি করে হত্যা করার সাহস দেখায়নি। অথচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কিছুদিন পরপরই নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করছে। তাই এখনই মোক্ষম সময় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নির্দোষ বাংলাদেশি জনগণকে গুলি করে হত্যা করার সমুচিত জবাব দেওয়া, তা না হলে চলমান এ হত্যাকাণ্ডের ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বন্ধ না হওয়ার অন্যতম কারণ ভারতের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব। ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্র শুধু কাগজে-কলমে লিখিত থাকলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই না। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করলেও তার পেছনে ভারতের স্বার্থ লুকায়িত ছিল। আমরা জানি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক অব্যাহত ছিল। ভারত এখন পর্যন্ত নিঃস্বার্থভাবে বাংলাদেশের জনসাধারণের উপকারে কোনো কাজ করেছে এমনটি ভাবার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিত, তাহলে সীমান্তে নির্দোষ মানুষকে গুলি করে হত্যা করত না। সুতরাং প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসাবে ভারতকে প্রভু তো নয়ই, বরং বন্ধু রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের মূল্যায়ন করতেও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।

ড. মো. মনিরুজ্জামান : সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম