Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

হজ ব্যবস্থাপনায় জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক

Icon

সালাহ্উদ্দিন নাগরী

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হজ ব্যবস্থাপনায় জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটুক

বেশ কিছুদিন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন হজ এজেন্সির নানারকম অফার, সাশ্রয়ী মূল্যে হজ সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি সংবলিত বিজ্ঞাপন চোখে পড়ছে। গত হজ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে, আগামী হজ আসতে এখনো প্রায় আট মাস বাকি। এর মধ্যেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে হজে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

হজ ও ওমরাহ যাত্রীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। এরই ধরাবাহিকতায় গেলবার সারা বিশ্ব থেকে ১৮ লাখেরও বেশি মানুষ হজ পালন করেছেন। সৌদি আরবের তরফ থেকে আমাদের দেশের ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার অনুমোদন থাকলেও গিয়েছিলেন ৮৫ হাজার ২২৫ জন। খরচ বেড়ে যাওয়াকেই কোটা পূরণ না হওয়ার কারণ মনে করা হচ্ছে।

পাকিস্তান, ভারত, এমনকি দূরের দেশ ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার চেয়েও আমাদের হজের খরচ বেশি। গতবার আমাদের কম মূল্যের দুটি হজ প্যাকেজের দাম ছিল যথাক্রমে ৫ লাখ ৯০ হাজার ও ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সাধারণত এ টাকার খাতওয়ারি কোনো হিসাব সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সি বা কারও তরফ থেকে দেওয়া হয় না। তাই খরচের ব্রেকআপ সম্পর্কে অন্ধকারে থাকতে হয়। স্বাভাবিক সময় এবং ওমরায় ঢাকা-সৌদি আরব-ঢাকা বিমান ভাড়া সর্বোচ্চ ৭০-৭৫ হাজার টাকা, অথচ হজের সময় এত ভাড়া কেন নেওয়া হয়, তা সাধারণের বোধগম্য নয়। ধরেই নিলাম হজের সময় সৌদি আরবে যাত্রী নামিয়ে বিমানটিকে ঢাকায় যাত্রীশূন্য অবস্থায় ফিরতে হয়। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভাড়া দেড় লাখ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু নেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। হজ প্যাকেজের মূল্য বেশি হওয়ার কারণ হিসাবে কেউ কেউ যুক্তি দেন-যেসব দেশ কম টাকা নেয়, তারা মুসল্লিদের বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববি থেকে অনেক দূরে রাখে। কিন্তু কথা হলো, আমাদের হজযাত্রীদের কি কাছে রাখা হয়? বাংলাদেশের বহু মুসলিমকে বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববি থেকে ২৫-৩০ মিনিটের হাঁটাপথের দূরত্বে রাখা হয়। এতদূর থেকে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে তাদের পক্ষে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগি করা কঠিন হয়ে পড়ে। এরপর ৬-৮ জনকে এক রুমে গাদাগাদি করে রাখা রাখা হয়, ঘাড় ঘুরানোরও জায়গা থাকে না। এতজনের পক্ষে একটি টয়লেট বা বাথরুম শেয়ার করাও খুব কষ্টকর।

হজ এজেন্সির মাধ্যমে যেসব হজযাত্রী ভিআইপি প্যাকেজে যান, তাদের মক্কায় ৫ তারকা হোটেলে ও মদিনায় ৩/৪ তারকা আর যদি আজিজিয়ায় থাকতে হয়, তবে সেখানেও ৩/৪ তারকা মানের হোটেলে রাখা হবে মর্মে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু মদিনা ও আজিজিয়ায় যে হোটেলগুলোতে রাখা হয়, সেগুলো কোনো স্টারের মধ্যে তো পড়েই না, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই হোটেলগুলো সাবস্ট্যান্ডার্ড মানের হয়ে থাকে। এ বিষয়গুলো নিয়ে মদিনা ও আজিজিয়ায় হজযাত্রীদের সঙ্গে এজেন্সির লোকজনের বাকবিতণ্ডা হলেও কোনো প্রতিকার নেই। এগুলোর সমাধান দরকার।

প্রসঙ্গত, গেলবার আমি স্ত্রীসহ হজে গিয়েছিলাম এবং হজযাত্রার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী বিভিন্ন পর্যায়ে হজ কার্যক্রমে বেশকিছু ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছিল। আমাদের প্রথমে আশকোনা হাজিক্যাম্পে নেওয়া হয় এবং ওখানে যাত্রীদের লাগেজ গ্রহণ ও বাংলাদেশ পার্টের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়। ইমিগ্রেশনের আগে যে রুমে বা স্পেসে রাখা হয়, সেখানে প্লাস্টিকের কিছু চেয়ার দেওয়া আছে, তাও পর্যাপ্ত নয়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তো না-ই, সিলিংফ্যানের বাতাসও সবখানে পৌঁছে না। ভ্যাপসা গরম ও মশার কামড়ে বসে থাকা দায়। চারদিকে নাকি এত উন্নয়ন হয়েছিল, তাহলে আশকোনা হাজিক্যাম্পের এ করুণ চিত্র কেন? হজক্যাম্পের ভেতরের ডেকোরেশন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং সবার বসার জন্য মানসম্পন্ন সোফা বা চেয়ারের ব্যবস্থা এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা বৃদ্ধি সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

হজযাত্রীদের বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা সহজ করার জন্য সৌদি সরকারের ব্যবস্থাপনায় ঢাকা বিমানবন্দরে ‘মক্কা রুট ইনিশিয়েটিভ’ নামে একটি ডিপারচার লাউঞ্জ চালু করা হয়েছে এবং জেদ্দা পৌঁছার পর যাত্রীদের যে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার কথা, তা আমাদের বিমানবন্দরেই (বাংলাদেশ) সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে; এতে করে হজযাত্রীরা জেদ্দা বিমানবন্দরে নেমে হেঁটে লাউঞ্জের ভেতর দিয়ে সোজা মক্কা যাওয়ার বাসে উঠে যাচ্ছেন। অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। আমাদের বিমানবন্দরের এ ডিপারচার লাউঞ্জে হজযাত্রীদের বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজ পড়তে হয়, কিন্তু সেখানে ওজু করার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বেসিনের উপর পা ধুতে হয়; এতে সবার, বিশেষত অসুস্থ, বৃদ্ধ ও স্থূলকায় মানুষের কষ্ট হয়, বিষয়টি দৃষ্টিকটুও। এ জায়গায় একত্রে অন্তত ৫-৬ জনের ওজু করার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার।

মিনা ও আরাফাতের ময়দানে একই দেশের তাঁবুগুলো সাধারণত একই ব্লকে পাশাপাশি থাকে। কিন্তু আরাফাতের ময়দানে বাংলাদেশের হাজিদের ব্লকে প্রবেশ করেও আমরা যখন তাঁবু খুঁজে পাচ্ছিলাম না এবং ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা মাথায় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ছটফট করেছি, তখন কোনো স্বেচ্ছাসেবককে দেখতে পাইনি।

শুধু তা-ই নয়-মক্কা, মদিনা, মিনা, মুজদালিফা ও জামারাতেও কোনো স্বেচ্ছাসেবক চোখে পড়েনি। কিন্তু আমাদের হজযাত্রীদের সহযোগিতা করার জন্য প্রতিবছর সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়। এবারও এর ব্যত্যয় ঘটেনি এবং চারশ’র মতো স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্বে ছিল বলে জেনেছি। প্রশ্ন জাগে, আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের ভূমিকা কী? তারা কী দায়িত্ব পালন করে? কেন তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়?

শুনলাম, এবার মুজদালিফায় অনেক হাজি পানির অভাবে কষ্ট পেয়েছেন এবং এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছিলেন যে অনেক হাজি বাংলাদেশে ফোন করে আত্মীয়স্বজনের কাছে মাফও চেয়ে নিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। মিনা, আরাফা, মুজদালিফায় যে অংশে বাংলাদেশিরা থাকবে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবক রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের কাছে পানি ও কিছু শুকনা খাবার অবশ্যই থাকতে হবে, যেন প্রয়োজনে পরিস্থিতি দ্রুত মোকাবিলা করা যায়।

যেসব দেশ থেকে বেশিসংখ্যক মানুষ হজে যান, তাদের গ্রুপে মেডিকেল টিম থাকে। বাংলাদেশের মেডিকেল টিমের মক্কায় অবস্থান ছিল মিসফালাহ এলাকায়, কিন্তু মদিনায় এ টিমের অবস্থান সম্পর্কে সিংহভাগ হাজিই জানতেন না। যেহেতু সবাই মসজিদে নববিতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে আসেন, তাই মসজিদে নববির নিকটবর্তী কোনো স্থানে মেডিকেল টিমের অবস্থান হওয়া বাঞ্ছনীয়। মিনা, আরাফা, মুজদালিফা ও জামারায় পাথর নিক্ষেপের স্থানে হেলথ ক্যাম্প স্থাপনসহ ক্যাম্পের লোকেশন সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য সাইনবোর্ড বা নির্দেশফলক বিভিন্ন স্থানে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এগুলোকে দর্শনযোগ্য করতে হবে, নতুবা কেউ অসুস্থ হলে হেলথ ক্যাম্প খুঁজে বের করতে গিয়ে রোগীর অবস্থাই খারাপ হয়ে পড়বে। আমাদের দেশের হাজিদের মাসব্যাপী সৌদিতে অবস্থান শুধু মক্কা ও মদিনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অনেকেই প্রায় ৮-১০ দিন আজিজিয়ায় অবস্থান করেন। তাই হাজিদের চিকিৎসাসুবিধা বিবেচনায় আজিজিয়াতেও মেডিকেল টিম রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

হজ সম্পন্নকরণে মুজদালিফায় একরাত খোলা আকাশের নিচে এবং একদিন আরাফাত ময়দানে এবং বাকি চার রাত মিনায় অবস্থান করতে হয়। মিনা ও আরাফাতের মাঠে হাজিদের অবস্থান হয় তাঁবুতে। মিনার এক তাঁবুতে প্রায় ১০০ এবং আরাফাতের তাঁবুগুলোতে ২০০-২৫০ মানুষ থাকতে পারে। দুই জায়গাতেই তাঁবুতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে এবং প্রত্যেক হাজির জন্য একটি করে দেড় ফুট প্রস্থের ফোম, একটি কম্বল, ফোমের বালিশ ও চাদর বরাদ্দ থাকে। তাঁবুর পুরো মেঝেতে ফোমগুলো পাশাপাশি বিছানো থাকে। হাজিরা সেই ফোমে শুয়ে-বসে ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটান। কিন্তু মেঝেতে বিছানো ফোম থেকে উঠে দাঁড়ানো এবং দাঁড়ানো অবস্থা থেকে আবার বসা বা শোয়া অত্যন্ত কঠিন। তবে যত কষ্টই হোক, তাকে মেঝেতে বিছানো ওই ফোমেই শুতে হয়, বসতে হয়, আবার ওই অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতেও হয়। প্রত্যেক তাঁবুতে কিছু হাতলওয়ালা চেয়ারের ব্যবস্থা করলে মুসল্লিরা মাঝেমাঝে চেয়ারে বসে কিছু সময় পার করতে পারেন। এতে ফোম থেকে উঠে দাঁড়ানো বা বসার যন্ত্রণা থেকে কিছুটা হলেও রেহাই মিলবে।

মিনা ও আরাফাতের ময়দানে সাধারণত আট-দশটির মতো তাঁবুকে কেন্দ্র করে টয়লেটের একটি শেড থাকে। মিনায় আমাদের শেডে আট-দশটি টয়লেট, দু’একটি গোসলখানা এবং ওজুর জায়গায় ছয়টি পানির ট্যাপ ছিল। দিনে-রাতে যখনই হোক, অন্তত লাইনে দশ-বারো জনের পেছনে দাঁড়াতে হতো। এ অবস্থায় কারও টয়লেটের জরুরি প্রয়োজন হলে দীর্ঘক্ষণ চেপে রাখা মুশকিল। তারপর ওজু করার অংশে ইংরেজি ‘খ’ অক্ষরের মতো দুবাহুতে তিনটি করে ছয়টি ট্যাপ লাগানো ছিল। ওখানে ওজু করতে গেলে একজন আরেকজনের গা ঘেঁষে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই। এ অবস্থায় একজনের হাত-পা, মুখ ধোয়া পানি, কফ-থুতু আরেকজনের গায়ে পড়ে। এতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যায়। আর যারা শুচিবাইগ্রস্ত, তাদের পক্ষে এ অবস্থা মোকাবিলা করা খুবই কষ্টকর। এ শেডগুলোতে টয়লেট ও ওজু করার ট্যাপের সংখ্যা কি বাড়ানো যায় না? কেন আল্লাহর মেহমানদের এত চাপাচাপির ভেতর প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পাদন করতে হবে? শুনেছি, উন্নত দেশগুলো থেকে আসা হাজিদের জন্য নাকি অনেক ভালো আয়োজন থাকে। বিষয়টি সত্যি হলে বলতে হয়, ইসলামের সমতার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আল্লাহর সব মেহমানের সমসুবিধা প্রদানের ওপর জোর দেওয়া উচিত।

হজ সম্পাদনে শয়তানকে তিনদিন পাথর মারতে হয়। হাজিরা সাধারণত মিনা, মক্কা ও আজিজিয়া থেকে পাথর মারতে জামারায় গিয়ে থাকেন। আজিজিয়া থেকে জামারায় যাওয়ার জন্য সৌদি সরকার পরিচালিত বাস সার্ভিস আছে। যারা মিনা ও মক্কা থেকে জামারায় পাথর মারতে আসেন, তাদের দীর্ঘ পথ হেঁটেই পাড়ি দিতে হয়। আবার কেউ কেউ মিনা ও মক্কা থেকে হেঁটে আজিজিয়ায় এসে তারপর বাসে করে জামারায় যান। আজিজিয়া থেকে বাসে উঠতে যে চাপাচাপির মধ্যে পড়তে হয়, তা বর্ণনাতীত। এর ওপর আবার আজিজিয়া-জামারা-আজিজিয়া রুটের বাস সার্ভিস মাঝেমধ্যে বন্ধই থাকে। ফলে প্রচণ্ড রোদের মধ্যেই হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। আর এতে করে হাজিরা ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেকেই বলেন, পাথর মারতে হাজিদের মিনা, মক্কা ও আজিজিয়া থেকে জামারা পর্যন্ত দীর্ঘপথ গরমের মধ্যে হেঁটে যাওয়া-আসা করা ব্যাপক সংখ্যায় মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তাই সংশ্লিষ্টদের এ পথটুকুতে পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করার উদ্যেগ নিতে হবে। তাছাড়া, উন্নত বিমানবন্দরগুলোতে যেমন ‘চলন্ত পথ’ থাকে, ঠিক তেমনি মিনা ও মক্কা থেকে জামারার পথটুকুতে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে কিছুদূর পরপর ‘চলন্ত পথে’র ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে হাজিদের কষ্টই শুধু লাঘব হবে না, মৃত্যুও কমে আসবে।

হজে গিয়ে ওদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে প্রয়োজনে অনেক সময় কথাবার্তা বলতে হয়। কিন্তু ওরা আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলেন না; আবার সিংহভাগ হাজি আরবি বোঝেন না। এতে করে তাদের কোনো অনুরোধ, নির্দেশনা, ঘোষণা হাজিরা বুঝতে পারেন না। এতে হাজিদের সমস্যায় পড়তে হয়। তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের আরবিসহ আন্তর্জাতিক দু’একটি ভাষা বা যেসব ভাষাভাষী হাজির সংখ্যা বেশি হয়, সে ভাষায় প্রয়োজনীয় কথাবার্তা শেখানোর উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। অথবা ভিনদেশি হাজিদের ভাষায় প্রয়োজনীয় কিছু অনুরোধ-নির্দেশনার ‘অডিও রেকর্ড’ বাজানো/শোনানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

হজ আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষের জন্য একটি ফরজ ইবাদত। এছাড়াও হজের সঙ্গে আবেগ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মিশে আছে। বহু মানুষের মনের ইচ্ছা, কাফনের কাপড় পরার আগে তিনি যেন ইহরামের কাপড় পরতে পারেন। তাই অসুস্থ, বৃদ্ধ, পঙ্গু মানুষজন জমিজমা, ভিটেমাটি বিক্রি করে হলেও হাজার হাজার মাইল দূর থেকে আল্লাহর ঘর বাইতুল্লাহ দর্শনে ছুটে যান। কাবার সামনে দাঁড়িয়ে অনেককে আমি অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখেছি। তাই আবেগের এ জায়গাটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের হজ আয়োজনকে সাজাতে হবে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন সরকার এসেছে। জনআকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। তাই আশা করছি, এবার থেকে হজের খরচ ও হজযাত্রীদের ভোগান্তি কমে আসবে। হাজিরা এদেশ ও সৌদি আরবে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় হজের প্রতিটি কার্যক্রম আরও স্বস্তির সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারবেন।

সালাহ্উদ্দিন নাগরী : কলাম লেখক

snagari2012@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম