Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

শিক্ষা সমাজ দেশ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার, না সুপ্রিম কাউন্সিল?

Icon

ড. হাসনান আহমেদ

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার, না সুপ্রিম কাউন্সিল?

লিখতে চেয়েছিলাম শিক্ষার একটি সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে সংবিধানে পুনঃস্থাপনের কথা উল্লেখ করায় প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে বাধ্য হলাম।

আমরা জানি, কোনো বিষয় বা ঘটনাকে প্রকৃতির নিয়মেই পূর্বাবস্থায় পেছনে ফিরিয়ে নেওয়া যায় না। পেছনের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে পদ্ধতিকে আরও সমৃদ্ধ করে সময় ও ঘটনার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনে এগিয়ে চলাই মানুষের ধর্ম। একেই বলে উদ্ভাবন। আমরা কেউই এর ব্যতিক্রম নই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন, মানি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন, এ কথাও মানি। বরং এ পত্রিকাতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে অনেকবার লিখেছি।

সংবিধান সংশোধন বা পুনর্লিখন প্রসঙ্গে অনেক বিজ্ঞজন অনেক কথাই প্রতিনিয়ত বলছেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেই যে দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, রাজনৈতিক বা রাজনীতি-পোষ্য খাদকগোষ্ঠীর চরিত্র পূত-পবিত্র হয়ে যাবে, এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন। নির্বাচিত সরকার দেশ চালাবে সত্য। দেশটা ঠিকভাবে চলছে কিনা, তার দেখাশোনা করবে কে? এটাই না আসল কাজ! শুধু নিরপেক্ষভাবে ভোটের ব্যবস্থা করাই দেশের উন্নয়নের ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য কোনোক্রমেই হতে পারে না। শুধু ভোটের আয়োজনই একটা দেশের সবকিছু নয়, উন্নয়নের পূর্বশর্ত মাত্র।

প্রতিটি দলেই কিছু ভালো লোক এখনো আছেন, বাকিরা খাদকগোষ্ঠীভুক্ত। বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, একথা কেউ অস্বীকার করতে পারবেন? এ অল্পসংখ্যক ভালো লোকের ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারি না। কারণ আমরা জানি, তাদেরও বিশাল কর্মীবাহিনী ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকে নিয়ে চলতে হয়, তাদের চাপে হাত-পা-মুখ বাঁধা পড়ে থাকে; দল চালানো কঠিন হয়ে পড়ে, দলীয় কোন্দল দেখা দেয়। এদেশে চাটতে না দিলে ‘চাটার দল’ও সরে পড়ে। আমি অপ্রিয় বাস্তব ও সত্য কথা বলছি।

আমাদের দরকার শুধু গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই নয়, মূল উদ্দেশ্যের দিকে তাকানো। সেগুলো হলো, নির্বাচিত সরকারের পাঁচ বছর সময়ে কোষাগারের প্রতিটি টাকা যেন দেশ ও জনগণের কল্যাণে ব্যয় হয়, কোষাগারে যেন টাকাটা ঠিকমতো আসে, টাকা বানানোর জন্য কোনো মতলববাজ যেন রাজনীতিতে না ঢুকতে পারে, রাজনীতিতে টাকার খেলা বন্ধ হয়, প্রধানমন্ত্রীর পিয়নও যেন ৪০০ কোটি টাকার মালিক না হয়, আইন ও বিচার বিভাগকে অপরাধী যেন বুড়ো আঙুল দেখাতে না পারে, দলবাজ-সুবিধাবাদী লোক যেন অযথা গুরুর নাম-কীর্তন গেয়ে কাছে ভিড়তে না পারে, সুশিক্ষিত-নীতিবান লোক যেন রাজনীতিতে আসে, লাঠিয়াল বাহিনীর নেতা যেন রাজনীতির বড় পদ দখল করতে না পারে, রাজনীতি যেন সত্যিকার অর্থে দেশ ও সমাজসেবার জন্য হয়, দেশ যেন অদৃশ্য বহিঃশক্তির হাতে জিম্মি না হয় ইত্যাদি। ‘মুখে শেখ ফরিদ, বগলে ইট’ যেন না হয়। লক্ষ কোটি টাকা পতিত সরকারপ্রধান নিজে, নিজের আত্মীয়স্বজন, দলীয় লোকজন মেরেকেটে-শুষে রাষ্ট্রীয় কোষাগার ফাঁকা করে বিদেশে পাচার করে পালিয়েছে, এসব আমার-আপনার টাকা নয় কি?

আমরা সবসময় রাজনীতিকদের কুৎসাইবা রটাতে যাব কেন? তারা তো আমাদের শত্রু নন। তাদের রাষ্ট্রবিরুদ্ধ ও জনস্বার্থবিরুদ্ধ কর্মই না আমাদের তাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে। তবে বলতেই হয়, বর্তমান রাজনীতিকদের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য ভালো নয়। এসবের জন্য প্রয়োজন রাজনীতিতে স্বয়ংক্রিয় ও স্বয়ংপ্রভ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, যা আপনা-আপনি আসবে না। রাজনীতিকদের দায়িত্ববোধ ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করা গেলে দুর্নীতিবাজ লোকজন রাজনীতি থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাবে। দেশ সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ ফিরে পাবে; ন্যায়তন্ত্রের ধারাবাহিকতা সমাজে ফিরে আসবে।

অনেক প্রাণের আত্মত্যাগে সুযোগ একবার হাতে এসেছে, সুযোগটা যেন আমরা অবহেলা ও গভীরভাবে চিন্তা না করে হালকা চিন্তার প্রয়োগ দেখিয়ে নষ্ট না করি। ওল্ড মডেল বাদ দিয়ে আধুনিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে বেছে নিই। পরেরবার সুযোগ আসতে অনেকের জীবন শেষ হয়ে যাবে। আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না, ভালোও বলতে চাই না, চাই সংবিধানে দেশ পরিচালনায় সুষ্ঠু ও ভারসাম্যপূর্ণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা; রাজনীতিতে জবাবদিহিতা ও দায়িত্ববোধ পুরোপুরি নিশ্চিতকরণ। যার যার কাজের আওতা আইনে সুবিন্যস্তভাবে লিখিত থাকবে। কাউকে অনিয়ন্ত্রিত ও অসীম ক্ষমতার অধিকারী করা যাবে না।

যদিও এত ছোট পরিসরে সংবিধান সংশোধনের বিস্তারিত বলার অবকাশ নেই, তাই শুধু একটি বিষয়, অর্থাৎ কাঠামোগত পরিবর্তনের কিছু কথা লিখছি। গত ২৮ আগস্ট এ পত্রিকাতেই ‘রাষ্ট্রীয় বিধান পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবিতা’ শিরোনামে এ বিষয়ে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করেছিলাম। হয়তো সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টিতে পড়েনি। অনুসন্ধিৎসু পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন। আরও কিছু পরিবর্তনের বিষয়ে গঠনমূলক পরামর্শও সেখানে আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত অতীতের কয়েকটি নির্বাচনের পর বিজয়ী রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড আমরা নিজ চোখে দেখেছি। বাস্তব সে অভিজ্ঞতা আমাদের রয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাকে ঘোরানো-প্যাঁচানো, মনমতো লোকটিকে সরকারপ্রধানের দায়িত্বে আনা যায় কিনা, সে কসরতও কম দেখিনি। অবশেষে বেশি প্যাঁচ খেয়ে মরা-গিরা পড়ে গেছে। এর মধ্যে নদীর পানিও অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। নতুনের সন্ধান সৃষ্টিধর্মী মানুষের চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা নিয়ে আমাদের মাথায় বিস্তারিত নতুন কিছু এসে গেছে।

অনেকেই বলে থাকেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচনে আবার ক্ষমতায় আসার জন্য বিজয়ী দল দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে দূরে থাকবে, দেশের সেবা করবে। এসব বস্তা-পচা পুরোনো তত্ত্ব অনেক আগেই সুচতুর রাজনীতিকদের মাথা থেকে বিদায় নিয়েছে। লালন গেয়েছিলেন, ‘শুনি ম’লে পাবে বেহেস্তখানা, আসলে তো মন মানে না, ও গো বাকির লোভে নগদ পাওনা, কে ছাড়ে এ ভুবনে, সহজ মানুষ ভজে দেখনা রে মন দিব্য জ্ঞানে...’। আমি চাই, টেবিলের উপর ছাগলকে উঠালেই কাঁঠাল পাতা খায়, কাঁঠাল গাছ কেটে ফেলার দরকার নেই, ছাগলকেও জবাই করার দরকার নেই, বরং টেবিলটাকে সরিয়ে ফেলুন; কাঁঠালের পাতা ছাগলের নাগালের বাইরে রাখুন।

আমরা দেশের রাষ্ট্রপতি পদটাকে ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত করেছি। আবার তিনি সবসময় ক্ষমতাসীন দল থেকেই নির্বাচিত হন। ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্য প্রকাশ করেন। মনে অনেক ইচ্ছা থাকলেও কিছু বলতে ও করতে পারেন না। একজন ব্যক্তির অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে। আমি তো এদেশের রাষ্ট্রপতিকে খুনির ফাঁসির দণ্ড ক্ষমতাসীন দলীয় প্রধানের ইচ্ছানুযায়ী মওকুফ করে বেকসুর খালাস দেওয়া ছাড়া এবং কাউকে শপথবাক্য পাঠ করানো ছাড়া অন্য কোনো কিছু করতে দেখি না। আপনারা রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে রাষ্ট্রপ্রধান পদের পরিবর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকাররের মতো ‘সুপ্রিম কাউন্সিল’ নামে একটা স্বকীয় বডিকে দলনিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের ক্ষমতা দিয়ে দিন। কাউন্সিলরের সংখ্যা ১৫ থেকে ২১ জন হতে পারে। তারা ‘ব্লাড হাউন্ড’ না হয়ে ‘ওয়াচ ডগে’র দায়িত্ব পালন করবেন। তারা রাষ্ট্রের স্বার্থ ও জনগণের জিম্মাদারি দায়িত্ব পালন করবেন।

কেউ কেউ সরকারের গদিতে বসেই দেশের মালিক বনে যান, কিন্তু কার্যত রাষ্ট্রের ও জনস্বার্থ দেখার কোনো মালিক নেই। এখানেই মূল সমস্যা। ‘সুপ্রিম কাউন্সিল’ বাসের স্টিয়ারিংয়ের কাজ করবে। বাস সোজা পথ ছেড়ে বিপথে গেলেই স্টিয়ারিং তাকে সোজা পথে আসতে বাধ্য করবে। এটাই ‘সুপ্রিম কাউন্সিলে’র দায়িত্ব হবে। ‘সুপ্রিম কাউন্সিল’ রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধান বডি। সুপ্রিম কাউন্সিল ক্ষমতাসীন দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা তাদের কোনো সদস্যের কর্মকাণ্ড জনস্বার্থবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী বা দেশের জন্য ক্ষতিকর হচ্ছে কিনা, রাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে তা তদারকি করবে। সংবিধানে তাদের দায়িত্ব ও কার‌্যাবলীর সীমানা নির্ধারিত থাকবে। লক্ষ রাখতে হবে, যেন কোনো রাজনৈতিক দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এ বিধান বাতিল করতে না পারে। সুপ্রিম কাউন্সিল ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী দল কর্তৃক মনোনীত হবেন না। তাদের মনোনীত বা নির্বাচিত করার জন্য বিভিন্ন পেশাদার সংগঠনের সদস্যদের মধ্য থেকে দুই লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ সদস্যের আলাদা দলনিরপেক্ষ, সুশিক্ষিত নির্বাচকমণ্ডলী থাকবে। সুপ্রিম কাউন্সিল নির্বাচকমণ্ডলীর প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন। মেয়াদ হবে ছয় বছর। সর্বোচ্চসংখ্যক ভোটে বিজয়ী ‘প্রধান সুপ্রিম কাউন্সিলর’ হবেন। কাউন্সিলরদের প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা ও অযোগ্যতা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানে উল্লেখ থাকবে। তারা নির্বাচনের ডামাডোল ও ঢাক পিটিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে কাউন্সিলর পদপ্রার্থী হবেন না। তারা হবেন দেশবরেণ্য এবং শ্রদ্ধেয় অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ। নির্বাচন কমিশন প্রত্যেক প্রার্থীর ‘কারিকুলাম ভিটা’ প্রকাশ করবে এবং ‘সুপ্রিম কাউন্সিল নির্বাচন’ পরিচালনা করবে। এক্ষেত্রে সংবিধানে উল্লিখিত ‘ন্যায়পালে’র বিধান না রেখে ন্যায়পালের কার‌্যাবলী, দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেকটা সুপ্রিম কাউন্সিলের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে।

প্রধান সুপ্রিম কাউন্সিলর একা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। রাষ্ট্রীয় কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ২/৩ কাউন্সিলরের সম্মতির প্রয়োজন হবে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরের সম্মতি নিতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় সুপ্রিম কাউন্সিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং প্রয়োজন বোধ করলে নির্বাচন চলাকালীন এক বা একাধিক অরাজনৈতিক যোগ্য ব্যক্তিকে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দিতে পারবে।

সরকারি ও অন্য রাজনৈতিক দলের অসৎ কর্মকাণ্ড, ব্যাংক লুট, বেপরোয়া দুর্নীতি, নেতাকর্মীদের অপকর্ম, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিসর্জন, অপমানসিকতার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সুপ্রিম কাউন্সিলের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সুপ্রিম কাউন্সিল ক্ষমতা ও আইনের আওতার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে পারবে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তাসহ সংবিধিবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো সুপ্রিম কাউন্সিলের অধীনে থাকবে। এছাড়া নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব ও ক্ষমতা সুপ্রিম কাউন্সিলের হাতে থাকবে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীও সুপ্রিম কাউন্সিলের হাতে থাকবে।

রাজনৈতিক দলগুলোকেই বলি, আপনাদের দল যদি দেশ ও জনস্বার্থে কাজ করে, তবে সুপ্রিম কাউন্সিলের অস্তিত্বে আপনাদের কোনো ভয় থাকার কথা না। আপনারা তখন সুপ্রিম কাউন্সিলের একে অন্যের পারস্পরিক কাজ সম্পাদনে সহযোগিতায় আসবেন। আপনারা দেশসেবা ও সমাজসেবাই যদি করতে চান, ইস্পাতই যদি হয়ে থাকেন, আশি মন লোহার ভেতর দিয়ে নিজের অস্তিত্ব বজায় রেখে পার হয়ে যেতে বাধা কোথায়? আমাদের উদ্দেশ্য রাজনীতিতে সুশিক্ষিত লোকজন আসবেন, বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান এসে লাঠির জোরে বড় পদ দখল করবে না। যোগ্যতার বলে ব্যক্তি সরকারের যে কোনো সাংবিধানিক বড় পদে আসবেন; অযোগ্যতা ও দলবাজির মাধ্যমে নয়। জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল স্বাধীন ও গঠনমূলকভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করলে কারও কোনো আপত্তি থাকবে না।

নির্বাচিত সরকার ও সুপ্রিম কাউন্সিলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রেখে আইন তৈরি করতে হবে। আমার মতে এ দেশকে সমৃদ্ধ করতে, উন্নতির শিখরে পৌঁছতে, জনগণকে সুশিক্ষিত করতে ও শিক্ষার মান বাড়াতে রাজনীতি-নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা, আইন-কানুনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ প্রয়োগ সুনিশ্চিত করা এবং দল-মত নির্বিশেষে অন্যায়কে শক্ত হাতে দমন করার কোনো বিকল্প নেই। অনেক বছর পর আজ একটা কথা না লিখে পারছি না, যে কোনো মূল্যে দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। কোনো একক পক্ষের অদূরদর্শিতা, বিদেশি শক্তির প্রতি দেশবিরোধী আনুগত্য ও দাসত্ব এবং গদি রক্ষা করতে গিয়ে এদেশ যেন কোনোদিন ‘দ্বিতীয় ফিলিস্তিনে’ পরিণত না হয়। এটাই আমার বড্ড ভয়। এদেশ কারও একার সম্পত্তি না, আমাদের সবার। ‘জন্মেছি এই নদীর চরে আমি এদেশের সন্তান, শ্যামলা মাটি-মায়ের বুকে সইপাতি পরান, আমি এদেশের সন্তান’।

ড. হাসনান আহমেদ : সাহিত্যিক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ; প্রেসিডেন্ট, জাতীয় শিক্ষাসেবা পরিষদ

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম