সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার
দিলীপ কুমার সরকার
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পর একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা। আর এ রাষ্ট্র সংস্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার।
আমরা জানি, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রথম এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো নির্বাচন। আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো নির্বাচনি আইন সংস্কার, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা সংস্কার, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংস্কার, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করা, নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং প্রার্থীদের তথ্য ফরম তথা হলফনামা ফরমে পরিবর্তন আনা।
এ করণীয়গুলো সম্পন্ন করার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থায় সংস্কার আনতে হবে এবং তারপর একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করতে হবে। নিচে এ সংক্রান্ত আলোচনা করা হলো।
নির্বাচনি আইন সংস্কার : বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনার মূল আইন হলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ। নির্বাচনিব্যবস্থা সংস্কারের জন্য প্রথমে এ নির্বাচনি আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে হবে নির্বাচন পদ্ধতিতে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতামূলক পদ্ধতির, যাকে First Past The Post (FPTP) নির্বাচন পদ্ধতিও বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতির সমস্যা হলো, একটি দল জাতীয়ভাবে বেশি ভোট পেলেও আসনভিত্তিক ফলাফলে দলটি সরকার গঠনের সুযোগ না-ও পেতে পারে। অপরদিকে প্রকৃত গণরায়ের ভিত্তিতে সরকার গঠনের লক্ষ্যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি একটি কার্যকর পদ্ধতি।
সংগত কারণেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তনের কথা ভাবতে হবে। এ পদ্ধতিতে যে দল শতকরা যত ভোট পাবে, আসনও পাবে শতকরা তত ভাগ। এক্ষেত্রে প্রতিটি দলের পুরুষ ও নারী প্রার্থীদের জন্য পৃথক দুটি তালিকা থাকবে। নারী প্রার্থীর সংখ্যা হবে কমপক্ষে মোট আসনের এক-তৃতীয়াংশ। যে দল যতটি আসন পাবে, তার প্রতি তিনজনে একজন হবেন নারী। কোনো দল যদি দুটি আসন পায়, তার একজন হবেন নারী।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতির ক্ষেত্রে নারীদের জন্য পৃথকভাবে আসন সংরক্ষণের কোনো প্রয়োজন হবে না। এক্ষেত্রে প্রতিটি দলকে বিশেষ সম্মেলন আয়োজন করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে; অন্যথায় দলে জেঁকে বসতে পারে কর্তৃত্ববাদের চর্চা।
এ মুহূর্তে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন সম্ভব না হলে, প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির কিছু সংস্কার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মনোনয়ন বাণিজ্য অবসানের লক্ষ্যে প্রতিটি দলকে আসনভিত্তিকভাবে সংশ্লিষ্ট সব আসনের জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দুজন করে প্রার্থী নির্ধারণ করা এবং কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক ওই দুজনের মধ্য থেকে প্রার্থী মনোনয়ন করতে হবে। প্রার্থী হওয়ার শর্ত হিসাবে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৩ বছর আগে সংশ্লিষ্ট দলের সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে।
নারীদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ এবং ওই আসনগুলোয় প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। খারাপ প্রার্থীদের বর্জনের জন্য ‘না’ ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন করতে হবে। প্রার্থীদের ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থীদের পোস্টার ছাপানো, হলফনামার তথ্য প্রচার ও আসনভিত্তিকভাবে প্রার্থী পরিচিতি সভার আয়োজন করতে হবে। পুরো নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কিছু নির্বাচনি আইন সংশোধন করা গেলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।
সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে এ মর্মে ঐকমত্যে আসতে হবে যে, যে দলই সরকার গঠন করুক না কেন, আগে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলোতে তারা সবার সমর্থনের ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করবে।
রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা সংস্কার : রাজনৈতিক নিবন্ধনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী করা। এ লক্ষ্যে নিবন্ধনের শর্ত হিসাবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক বিধিবিধান, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কমিটির মেয়াদ নির্ধারণ, নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন আয়োজন করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব নির্বাচন ইত্যাদি রাজনৈতিক নিবন্ধন বিধিমালায় সন্নিবেশন করতে হবে।
এছাড়াও উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, নারীর প্রতি বৈষম্য, পরিচয়ভিত্তিক বিদ্বেষ ও রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার পরিহার ইত্যাদি বিষয় নিবন্ধন বিধিমালায় নিবন্ধনের শর্ত হিসাবে উল্লেখ করতে হবে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের পূর্বশর্তগুলো গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০ অনুচ্ছেদেও সংযোজন করতে হবে। পাশাপাশি প্রচলিত বিধিমালায় বর্ণিত অন্যান্য শর্তও বিদ্যমান রাখতে হবে।
নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংস্কার : সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। আর শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রয়োজন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংশোধন। সেই আইনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সুপারিশকৃত জাতীয় সংসদের একজন সদস্য; জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা কর্তৃক সুপারিশকৃত একজন সংসদ-সদস্য; বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান; সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান; মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক; জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান; রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপারিশকৃত নাগরিক সমাজের একজন প্রতিনিধি; রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সুপারিশকৃত গণমাধ্যমের একজন প্রতিনিধি ইত্যাদি ব্যক্তির সমন্বয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের বিধান সন্নিবেশন করতে হবে।
অনুসন্ধান কমিটি প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য কমপক্ষে পাঁচজন নারীসহ ১৫ জন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য পাঁচজন ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করবেন। তারা হবেন বাংলাদেশের নাগরিক; বয়স ৩৫ বছর থেকে বেশি এবং ৭০ বছর থেকে কম; প্রমাণিত প্রশাসনিক দক্ষতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও অনুমিত নিরপেক্ষতাসহ আইনানুগ জ্ঞানসম্পন্ন; কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী এবং স্বীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অন্যূন ১০-১৫ বছর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
তবে অনুসন্ধান কমিটি এমন কোনো ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করবেন না, যদি তিনি সাধারণভাবে সৎ বলে বিবেচিত না হন এবং বৈধ আয়ের ভিত্তিতে জীবন নির্বাহ না করে থাকেন; জাতীয় বা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য হন বা অনুরূপ দলের বা অনুরূপ দলের অঙ্গসংগঠনের সদস্য হন বা পূর্বে ছিলেন; তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনয়নের ভিত্তিতে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন; ওই ব্যক্তি যদি ঋণখেলাপি হন; ওই ব্যক্তি যদি কোনো ফৌজদারি অপরাধে কমপক্ষে ২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন; ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি ৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো অভিযোগ থাকে।
অনুসন্ধান কমিটি তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশসহ তাদের হলফনামা দাখিল, তাদের সম্পর্কে গণশুনানি ও সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করবে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্নসাপেক্ষে অনুসন্ধান কমিটি প্রতিটি পদের বিপরীতে দুটি করে নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশসহ প্রেরণ করবে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ওই তালিকা থেকেই একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ প্রদান করবেন; যাদের মধ্যে কমপক্ষে একজন হবেন নারী।
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন : সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম পূর্ব শর্ত হলো আইনি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে সততা, নৈতিকতা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা। সেজন্য প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করা। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ব্যাপারে ব্যাপক আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এখন সময়ের দাবি।
তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে সৎ, যোগ্য, নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করতে হবে এবং পুনর্গঠিত কমিশনের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। পরবর্তীকালে সংশোধিত আইনের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে।
জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করা : জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পূর্বশর্ত হিসাবে গণ্য করতে হবে। কেননা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ তথা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হবে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করা এবং রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ করা।
নির্বাচনকালীন সরকার : সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমাদের যতগুলো জাতীয় নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, ততবারই ক্ষমতাসীন দল সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। অপরদিকে যতবার জাতীয় নির্বাচন হয়েছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে, ততবারই পূর্ববর্তী ক্ষমতাসীনরা হেরে গেছে।
তাই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণমুক্ত করার পূর্ব পর্যন্ত দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিধান রাখতে হবে। তাই আরও তিনটি নির্বাচন দলনিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে আয়োজন, এ সময়কালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত এবং পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনগুলো স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজন করতে হবে।
হলফনামা ফরমে পরিবর্তন আনা : প্রার্থীদের হালনাগাদকৃত তথ্য সংগ্রহের সুবিধার্থে হলফনামা ফরমে পরিবর্তন আনা আবশ্যক। প্রথমত, প্রার্থীরা হলফনামায় স্থাবর সম্পদের যে তথ্য দেন, তাতে মূল্য উল্লেখের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। পাশাপাশি যেসব সম্পদের মূল্য উল্লেখ করা হয়, তা বর্তমান বাজারমূল্য নয়, অর্জনকালীন। ফলে প্রার্থীরা যেসব তথ্য উল্লেখ করেন, তা দিয়ে সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনাসহ হলফনামার ছকে আরও কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে হবে।
বর্তমান হলফনামা ছকে উল্লিখিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তালিকার সঙ্গে বর্তমান বাজারমূল্য বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখ করার বিধান করা; হলফনামা ফরমে প্রার্থীর পিতা/স্বামীর নামের পরিবর্তে পিতার নাম এবং পৃথক ঘরে স্বামী/স্ত্রীর নাম; ঠিকানার ঘরে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা; বর্তমান ও অতীতের দ্বৈত নাগরিকত্ব সম্পর্কে তথ্য; জন্মতারিখ ও বয়স; প্রয়োজনীয় তথ্যসহ নির্ভরশীলদের তালিকা; একাধিক পেশায় নিয়োজিত থাকলে তার বিবরণ; পেশা ব্যবসা হলে তার ধরন; বিদেশে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ থাকলে তার বিবরণ ইত্যাদি তথ্য হলফনামার ছকে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি হলফনামার তথ্য যাচাই করে অসত্য তথ্য প্রদানকারীদের প্রার্থিতা বাতিল করতে হবে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রব্যবস্থায় এবং রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পর অদূর ভবিষ্যতে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ তথা সুষ্ঠু নির্বাচনের পর বিজয়ীদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিদায় নেবে বলে মানুষের মধ্যে আশাবাদও সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন আয়োজনের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলা হলেও দ্রুততার সঙ্গে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে তাদের মধ্যে এক ধরনের তাগিদ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সেই দলগুলোর পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানানো হচ্ছে। সেজন্য সংস্কার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু ও শেষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। আর এর জন্য যৌক্তিকভাবে যতটুকু সময় প্রয়োজন হবে, তা রাজনৈতিক দলগুলোকে মেনে নিতে হবে। তবে সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আগেই যদি নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তাহলে মাঝপথেই অপমৃত্যু ঘটতে পারে মানুষের স্বপ্নের; যা কারোরই কাম্য নয়।
এ অবস্থায় সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়তে পারে। আর তা যদি হয়, তবে পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতিই আবারও ফিরে আসতে পারে, আবারও চেপে বসতে পারে দুঃশাসন। তাই, পরিবর্তিত এ প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে যে অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে, তাকে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।
দিলীপ কুমার সরকার : কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)