Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

ওষুধের যুক্তিহীন ব্যবহার বন্ধ হোক

Icon

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

প্রকাশ: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ওষুধের যুক্তিহীন ব্যবহার বন্ধ হোক

একবার ফেসবুকের সুবাদে আমার হাতে একটি প্রেসক্রিপশন এসেছিল। তাতে এক পাস করা চিকিৎসক এক রোগীকে প্যাডের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিশটি ওষুধ প্রেসক্রাইব করেছেন। এক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রেসক্রিপশন দেখে মন্তব্য করেছেন-নিচে জায়গা থাকলে চিকিৎসক মশাই হয়তো আরও বিশটি ওষুধ লিখতেন। এক প্রেসক্রিপশনেই এত ওষুধ দেখে প্রথমেই আমার মনে হয়েছে-রোগী এত ওষুধ কখন খাবে? এতগুলো ওষুধ সময় করে খেতে শুরু করলে রোগীর যে সারা দিন সারা রাত কেটে যাবে।

প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত এত ওষুধ প্রয়োজনীয় নাকি অপ্রয়োজনীয় তার বিশ্লেষণ না হয় পরেই করলাম। একটিমাত্র প্রেসক্রিপশনে এত বেশিসংখ্যক ওষুধ লেখার বিষয়টি অবাস্তব মনে হলেও তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এসব ওষুধের সিংহভাগই হলো ‘বাণিজ্যিক ওষুধ’, যার সঙ্গে রোগের কোনো সম্পর্ক নেই।

ওষুধের যুক্তিহীন ব্যবহার ও প্রয়োগ দেশের এক বড় সমস্যা। ওষুধ ব্যবহারের সমস্যা জানতে হলে; ওষুধের নিরাপদ, যুক্তিসংগত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সমস্যার উৎস, সমস্যা সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের মানসিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন অপরিহার্য। সমস্যা চিহ্নিত না হলে ওষুধের যুক্তিসংগত প্রয়োগ এবং এর প্রকৃত উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দেশের ক্লিনিক, হেলথ কমপ্লেক্স বা হাসপাতালগুলো ওষুধের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের মূল উৎসগুলোর অন্যতম। অনিয়ন্ত্রিত ওষুধের ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে ওষুধের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের দিক থেকে ড্রাগ স্টোরগুলোর অবস্থান বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে। ডিগ্রিধারী ফার্মাসিস্টের অভাবে এবং ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় সাধারণত অজ্ঞ-অশিক্ষিত লোকজন দ্বারা ড্রাগ স্টোর পরিচালিত হয় অন্য ভোগ্যপণ্যের দোকানের মতো। কিন্তু ওষুধের দোকান আর মুদি দোকান বা কাপড়ের দোকান এক হতে পারে না। তবে ঘোষিত ওষুধনীতি ২০১৬তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি অন্তর্ভুক্তির কারণে ওষুধের অপব্যবহার কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে আমার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

ওষুধের অযৌক্তিক প্রয়োগের বড় উৎস হলো চিকিৎসকের রোগ নির্ণয় ও প্রেসক্রিপশন। চিকিৎসক ঠিকমতো রোগ নির্ণয় করে যুক্তিসংগতভাবে ওষুধ প্রদান না করলে রোগী ওষুধের অপব্যবহারজনিত সমস্যার শিকার হবে। চিকিৎসক তার দায়িত্ব সঠিক ও নির্ভুলভাবে পালন করলেও ওষুধের ডিসপেনসিং যুক্তিসংগত বা সঠিক না হলে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অন্যদিকে প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত ওষুধ সম্পর্কে রোগীকে পর্যাপ্ত ও প্রকৃত তথ্য, পরামর্শ বা উপদেশ প্রদান করা না হলে যুক্তিহীন ব্যবহারের কারণে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রোগীর জন্য প্রেসক্রিপশনে ওষুধ প্রদানে চিকিৎসক যত সতর্কতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করবেন, রোগী তত বেশি উপকৃত হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে পেশেন্ট কাউন্সেলিং বলে কিছু নেই। রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে চিকিৎসকদের ভূমিকাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। আমাদের দেশে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে। চিকিৎসক এলে ওষুধ ছাড়াই রোগীর অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যায়। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক সত্য রয়েছে। কারণ রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় শরীর ও মনের যোগসূত্র অভিন্ন। উন্নত বিশ্বে প্রকৃত চিকিৎসা শুরুর আগেই চিকিৎসক প্রায়ই রোগীকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাঙা করার উদ্যোগ নেন। রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য প্রদান এবং চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করতে চিকিৎসকরা সদা সচেষ্ট থাকেন। এতে রোগীর আস্থা ও আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। রোগীও সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত তথ্য জানার জন্য চিকিৎসককে প্রশ্ন করার অধিকার রাখেন। ফলে রোগ নির্ণয় ও ওষুধ প্রয়োগে ভুল কম হয় বলে ওষুধের অপব্যবহারও কমে আসে।

তারপরও দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে চিকিৎসকরা তাদের প্রেসক্রিপশনে যেসব ওষুধ লিখে থাকেন, তার সব যুক্তিসংগতভাবে লেখেন না। ওষুধের এ অযৌক্তিক প্রয়োগের পেছনে বহুবিধ কারণ কাজ করে। বহু চিকিৎসক পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার অভাবে রোগীকে সঠিক ওষুধ প্রদানে সক্ষম হন না। জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি ও পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এসব চিকিৎসক নিজেদের যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন না। এসব চিকিৎসক সাধারণত সনাতনী পদ্ধতিতে যুগ যুগ সেকেলে মানসিকতা নিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যান বলে রোগ নির্ণয় বা ওষুধ প্রদানে প্রায়ই ভুল হয়। পৃথিবীজুড়েই বহু চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক প্রভাবিত ও প্রলুব্ধ হয়ে অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর ও সস্তা ওষুধের পরিবর্তে দামি ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন। ওষুধ কোম্পানিগুলো ওষুধ বাজারজাত করার পর সর্বশক্তি নিয়োগ করে থাকে তাদের ওষুধের কাটতি বাড়ানোর জন্য। চিকিৎসকরা ওষুধ কোম্পানিগুলোর ইচ্ছা পূরণ করে প্রেসক্রিপশনে প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় অসংখ্য ওষুধ লিখে থাকেন।

উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বের ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত ওষুধের প্রমোশনে এবং পলিটিক্যাল লবিংয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকে। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ব্যয়ভার বহন করতে হয় নিরীহ ক্রেতা বা রোগীকেই। ওষুধের কাটতি বাড়ানোর জন্য ওষুধ কোম্পানিগুলোর মূল টার্গেট চিকিৎসক। কারণ চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে যে ওষুধ লেখেন, রোগী মূলত সেই ওষুধই কিনে থাকে। অধিক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ওষুধ কোম্পানিগুলো সাধারণত টনিক, ভিটামিন, হজমিকারক, বলবৃদ্ধিকারক, এনজাইম, কফমিকচার, এলকালাইজারজাতীয় অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর ওষুধ উৎপাদনে বেশি তৎপর থাকে। ১৯৮২ সালের ওষুধনীতিতে নিষিদ্ধ গ্রাইপ ওয়াটার ও সিমিথিকনজাতীয় ওষুধও চিকিৎসকরা অবলীলায় লিখছেন এবং বাজারে বিক্রিও হচ্ছে। আমার প্রশ্ন, কী আছে এই গ্রাইপ ওয়াটারে এবং কী কারণে শিশুদের এসব জঞ্জাল প্রদান করা হচ্ছে?

কারণ অতি সহজ। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের চেয়ে এসব তথাকথিত ওষুধের ওপর মুনাফার হার বহুগুণ বেশি। এ মুনাফার হার আরও বেশি গুণে বেড়ে যায় যখন চিকিৎসকরা তাদের প্রেসক্রিপশনে এসব ওষুধ নামধারী পণ্য নির্বিচারে প্রেসক্রাইব করে থাকেন। ওষুধ কোম্পানির সঙ্গে এসব ওষুধ প্রেসক্রাইবারদের সম্পর্ক যতটা না পেশাগত তার চেয়ে বেশি ব্যবসায়িক। এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশ্বের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অগ্রগামী হলেও ছোট-বড়, প্রতিষ্ঠিত-অপ্রতিষ্ঠিত প্রতিটি ওষুধ কোম্পানি চিকিৎসকদের পেছনে কম-বেশি অর্থ ব্যয় করে থাকে। ব্রিটেনে চিকিৎসকপ্রতি ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতিবছর দুই লাখ টাকা ব্যয় করে। অর্থ ছাড়াও ওষুধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের প্রচুর পরিমাণ ওষুধ ফ্রি স্যাম্পল হিসাবে উপহার দিয়ে থাকে। অভিজ্ঞ মহল মনে করে, এ ফ্রি স্যাম্পল আর ঘুসের মধ্যে পার্থক্য অতি নগণ্য। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে-চিকিৎসকরা এ ফ্রি স্যাম্পল কেন গ্রহণ করেন বা এ ওষুধ নিয়েই বা তারা কী করেন? এভাবে ফ্রি স্যাম্পল নেওয়া বা দেওয়া নীতিগতভাবে বৈধ হতে পারে না। এভাবে ফ্রি স্যাম্পল দেওয়া বা নেওয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার সময় এসেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ঘোষিত ওষুধনীতি ২০১৬তে ফ্রি স্যাম্পল বা চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য সম্পর্কে কোনো দিকনির্দেশনা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশেও প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত ওষুধের পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপশনে যেসব ওষুধ লিখে থাকেন তার মধ্যে অকেজো বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রায় ৩৩ শতাংশ। ফ্রান্সে বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডেন্টাল সার্জন কর্তৃক প্রদত্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ৪৫ শতাংশই অপ্রয়োজনীয় বলে অভিজ্ঞ মহল মত পোষণ করে। বয়স্ক লোকদের বেলায় ওষুধ প্রয়োগের ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো মেডিক্যাল রুল অনুসরণ করা হয় না বলে অন্য এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। এসব অপ্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করার জন্য চিকিৎসকদের অমনোযোগ ও অজ্ঞতাকে দায়ী করা হয়। ব্রিটেনে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব নারী সন্তান প্রসবের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয় তাদের অনেককে প্রসবের আগের রাতে ঘুমের ওষুধ প্রদান করা হয়। গর্ভবতী মায়েদের এভাবে ঘুমের ওষুধ প্রয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠলেও এর সত্যিকার জবাব পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন উঠেছে, সত্যিকার অর্থে এ ওষুধ কার জন্য? মা, নাকি বাচ্চার জন্য? নাকি চিকিৎসক এবং মেডিক্যাল স্টাফদের জন্য, যারা রাতে শান্তিতে ঘুমাতে চান?

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও সবচেয়ে বেশি অপব্যবহৃত ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক, সিডেটিভ, অ্যান্টিডায়ারিয়াল, ভিটামিন, টনিক, কফমিকচার, স্টেরয়েড, অ্যান্টিহিস্টামিন, অ্যান্টাসিডজাতীয় ওষুধ। টনিক ভিটামিনের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম দুর্বলতা রয়েছে। এ দুর্বলতার কারণ ওষুধ কোম্পানিগুলোর অনৈতিক ড্রাগ প্রমোশন এবং চিকিৎসক কর্তৃক এসব ওষুধের ঢালাও প্রয়োগ। টনিক ও ভিটামিন সম্পর্কে ওষুধ কোম্পানিগুলো যেসব ভ্রান্ত ধারণা চিকিৎসক ও জনসমক্ষে তুলে ধরে, তার মধ্যে রয়েছে টনিক ও ভিটামিন সেবনে ভগ্নস্বাস্থ্য উদ্ধার, বয়স্কদের যৌবন প্রাপ্তি, শিশুদের মেধা ও বয়োঃবৃদ্ধি, ত্বকের শ্রীবৃদ্ধি, চুলপড়া বন্ধ হওয়া ইত্যাদি। এসব বক্তব্যের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও বহু চিকিৎসক প্রায়ই এসব বস্তু প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকেন। রোগী প্রয়োজনীয় মনে করে প্রচুর অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে এসব ওষুধ কিনে থাকে। এ অপব্যাখ্যা ও অপব্যবহার স্পষ্টতই প্রবঞ্চনার শামিল।

ওষুধের অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের ফলে রোগী বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রেসক্রিপশনে প্রদত্ত ওষুধের কোনটি প্রয়োজনীয়, কোনটি অপ্রয়োজনীয় বা প্রদত্ত ওষুধের সঙ্গে সৃষ্ট রোগের আদৌ সম্পর্ক রয়েছে কি না-এসব প্রশ্ন উপস্থাপন করার যোগ্যতা ও ক্ষমতা রোগীরা সচরাচর রাখে না। ফলে রোগী প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ওষুধ কিনতে ও গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। প্রেসক্রিপশন মোতাবেক অপ্রয়োজনীয় ওষুধ কিনলে রোগী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপ্রাসঙ্গিক বা ক্ষতিকর ওষুধ কিনতে গেলে রোগী মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়, বিষক্রিয়া বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়। এ ক্ষতির দায়দায়িত্ব থেকে চিকিৎসক অব্যাহতি পেতে পারে না। উন্নত বিশ্বে রোগী চিকিৎসকের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে আইনের আশ্রয় নিতে পারে। অনুন্নত দেশে রোগী এ সুবিধা বা অধিকার ভোগ করে না। কারণ আমাদের মতো দেশে মনে করা হয় রোগী কমনম্যান, চিকিৎসক সুপারম্যান। তাই সুপারম্যানদের জবাবদিহির ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না।

বাংলাদেশে ড্রাগ প্রমোশন কোম্পানিগুলো মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ নিয়োগ করে থাকে। প্রতি তিনজন চিকিৎসকের পেছনে একজন রিপ্রেজেন্টেটিভ রয়েছে এবং এ খাতে প্রতিবছর কোটি টাকা খরচ হয়। এ রিপ্রেজেন্টেটিভরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওষুধ বিশেষজ্ঞ নন এবং কোনো কোনো সময় ওষুধের ওপর এদের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকে না। তাদের কোনো কোনো সময় ড্রাগ প্রমোশনের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু ড্রাগ প্রমোশনের জন্য ওষুধ কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত এ প্রশিক্ষণ কতটুকু নিরপেক্ষ এবং প্রকৃত তথ্যসাপেক্ষ, তা মূল্যায়নের প্রয়োজন রয়েছে। এরা সাধারণত কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থকে বড় করে দেখে এবং সে মোতাবেক চিকিৎসককে ওষুধ প্রয়োগ এবং ড্রাগ স্টোরগুলোকে ওষুধ কিনতে প্রলুব্ধ করে। প্রকৃত প্রস্তাবে কোনো রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ নির্বাচনে প্রকৃত তথ্য না পেলে চিকিৎসক বিভ্রান্ত হন এবং ফলে ভুল বা ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগের কারণে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ওষুধ কোম্পানিগুলো কর্তৃক চিকিৎসক ও রোগীর জন্য প্রকৃত ও পর্যাপ্ত তথ্যপ্রবাহের নিশ্চয়তা বিধান করার ব্যাপারে সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বর্তমানে ওষুধের জোয়ারে আমাদের চিকিৎসকরা ভাসছেন আর এতসব ওষুধের ওপর প্রকৃত তথ্য অন্বেষণে হিমশিম খাচ্ছেন। কোনো দেশে ওষুধের সংখ্যায় সীমাবদ্ধতা না থাকলে এবং বাজার প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় ওষুধে প্লাবিত হয়ে গেলে সব ওষুধের ওপর সম্যক ধারণা অর্জন কোনো চিকিৎসকের পক্ষে সম্ভব নয়। সুচিকিৎসার জন্য সীমিতসংখ্যক ওষুধের ওপর পর্যাপ্ত জ্ঞান অসংখ্য ওষুধের ওপর অপূর্ণ ও ভাসাভাসা জ্ঞানের চেয়ে অনেক উপকারী। ওষুধের ফলপ্রসূ ও যুক্তিসংগত প্রয়োগের জন্য কোম্পানি প্রদত্ত নামের পরিবর্তে ওষুধের জেনেরিক নাম ব্যবহার আবশ্যক। অবশ্য কোনো কোনো নামিদামি হাসপাতালে ইদানীং জেনেরিক নামে ওষুধ লেখা হচ্ছে। তাদের সাধুবাদ জানাই। প্রত্যেক দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতিকল্পে একটি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশেও তা আছে। কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধের পার্থক্য আমি বুঝি না। সুচিকিৎসার স্বার্থে চিকিৎসকদের জন্য থাকা প্রয়োজন একটি স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন। বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের নিরীহ জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে স্ট্যান্ডার্ড ট্রিটমেন্ট গাইডলাইন কোনো চিকিৎসক অনুসরণ করেন বলে আমার জানা নেই।

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ : প্রফেসর, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

drmuniruddin@gmail.com

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম