রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জটিলতা
কর্নেল মো. সালাহউদ্দিন
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
২০১৭ সালে পৃথিবী এক নারকীয় অমানবিক দৃশ্য দেখেছিল। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠী নিধনে তাদের অভিযান শুরু করে; রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ‘বাঙালি’ দাবি করে জোর করে বাস্তুচ্যুত করা হয়। এ নির্যাতনের মাধ্যমে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাকে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানো হয়। যারা রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করেছিল, মিয়ানমারের সেই বর্ডার গার্ড পুলিশ সদস্যরাই ৭ বছরের মাথায় আরাকান আর্মির আক্রমণে দিশেহারা হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। বর্তমানে আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিটুওয়ে ছাড়া কোনো এলাকাই জান্তাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে নেই। এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কি সসম্মানে ফিরে যেতে পারবে নিজ দেশে? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমাদের খুঁড়তে হবে ইতিহাস।
ইতিহাসের নিরিখে আরাকান-বাংলা সম্পর্ক
প্রাচীন যুগ : রোসাং বা রাখাইন রাজ্য মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত এবং বাংলার সঙ্গে এর সম্পর্ক বহু প্রাচীন। প্রাচীনকালে রাখাইন ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য এবং বাংলার সঙ্গে এর বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় ছিল গুরুত্বপূর্ণ। বাংলার ব্যবসায়ীরা রোসাং রাজ্যে মসলাসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন।
মুঘল আমল : মুঘল শাসনের সময়ে রোসাং রাজ্যের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। ১৬৬০-এর দশকে মুঘল সাম্রাজ্যের অংশ হিসাবে রোসাং রাজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। বাংলার সুবেদাররা রোসাং রাজ্যের সঙ্গে সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখতেন। মুঘল বাংলার সঙ্গে রোসাং রাজ্যের সম্পর্কের একটি সুস্পষ্ট চিত্র মধ্যযুগীয় কবিদের রচনায় পাওয়া যায়, বিশেষ করে আলাওলের রচনায়।
ঔপনিবেশিক আমল : ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে রাখাইন রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামো পরিবর্তিত হয় এবং এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশে পরিণত হয়। এ সময়ে বাংলার সঙ্গে রাখাইন অঞ্চলের যোগাযোগের ধরনেও পরিবর্তন আসে।
আধুনিক যুগে সম্পর্ক : বর্তমান সময়ে রাখাইন রাজ্য এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক বেশ জটিল। রোহিঙ্গা সংকট এ দুই অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের বাংলাদেশে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট : রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী একটি ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠী, যারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। তাদের ইতিহাস বহু শতাব্দীর। রোহিঙ্গারা দাবি করেন, তারা প্রাচীনকালে আরব, মুঘল ও পর্তুগিজ প্রভাবিত জনবসতির অংশ হিসাবে বসবাস করতেন। তবে মিয়ানমার সরকার তাদের বাংলাদেশ থেকে আগত অভিবাসী হিসাবে চিহ্নিত করে এবং নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে। ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই রোহিঙ্গারা নাগরিক ও সমঅধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। ১৯৭৮, ১৯৯১-১৯৯২, ২০১২, ২০১৬-২০১৮ সালের বিভিন্ন সময়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন চালায়। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতনের ফলে সাড়ে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এ নির্যাতনকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গণহত্যা হিসাবে বিবেচনা করে এবং এ বিষয়ে তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত।
রোহিঙ্গা-রাখাইন দ্বন্দ্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
প্রাচীন ইতিহাস : রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস দীর্ঘকালের। রাখাইন (আরাকান) ছিল একটি স্বাধীন রাজ্য, যা ১৭৮৪ সালে বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) দ্বারা বিজিত হয় এবং পরে এটি ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ হয়ে যায়।
ঔপনিবেশিক আমল : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সমর্থনে রোহিঙ্গারা জাপানিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, যা রাখাইন বৌদ্ধদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তোলে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় : ১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-নির্যাতন চলে আসছে। তাই তারা নাগরিক ও সমঅধিকারের জন্য সংগ্রাম করে আসছে। ১৯৪৮ সালে বুথিডং ও মংডু টাউনশিপে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি জানায় রোহিঙ্গারা। ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার সরকার ‘অপারেশন ড্রাগন কিং’ নামক সামরিক অভিযান চালায়, যা রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচারের প্রথম বড় উদাহরণ।
১৯৯১-১৯৯২ সালের ক্র্যাকডাউন : ১৯৯১-১৯৯২ সালে মিয়ানমার সরকার আবারও রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান চালায়, যা ‘অপারেশন ক্লিন অ্যান্ড বিউটিফুল নেশন’ নামে পরিচিত। এর ফলে প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
সাম্প্রতিক ইতিহাস : ২০১৬ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হারাকাহ আল-ইয়াকিন’ মিয়ানমারের সীমান্ত পোস্টগুলোতে আক্রমণ করে, যার ফলস্বরূপ মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সরকার ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ শুরু করে, যার ফলে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
রোহিঙ্গা নিধনে আরাকান আর্মির ভূমিকা : ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় রাখাইন জনগোষ্ঠী, আরাকান আর্মি (এএ) এবং ইউনাইটেড লিগ অফ আরাকানের (ইউএলএ) ভূমিকা ছিল জটিল। রাখাইন জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসাবে দেখে এবং তাদের রাখাইন রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে স্বীকার করে না। ইউএলএ-এএ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলে, তারা তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও পোশাক সরবরাহ করছে।
আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্ক : রাখাইন রাজ্যে বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক হিংসা ও সামরিক সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গাদের অবস্থার আরও অবনতি ঘটেছে। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অংশগ্রহণ তুলনামূলক কম। এএ প্রধানত রাখাইন জনগণের স্বার্থে কাজ করে; তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে ইচ্ছুক নয়। আরসার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অত্যন্ত বৈরী এবং আরএসওর সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা শীতল হলেও সহানুভূতির অবকাশ রয়েছে।
জান্তাবাহিনীতে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণ : অপারেশন ১০২৭-এর পর আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীতে রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ও বিতর্ক উঠেছে। মিয়ানমারের জান্তাবাহিনী রোহিঙ্গা পুরুষদের জোরপূর্বক তাদের বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছে। তারা রোহিঙ্গা যুবকদের জোরপূর্বক সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর চেষ্টা করেছে। যে জান্তাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করে বাংলাদেশে পাঠাল, সেই জান্তার পক্ষেই রোহিঙ্গাদের এ অস্ত্র ধারণে রাখাইন জনগোষ্ঠীর প্রতি তাদের অবিশ্বাস স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অপারেশন ১০২৭-এ আরাকান আর্মির সাফল্য : অপারেশন ১০২৭ মিয়ানমারে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য ও সমন্বিত বিদ্রোহী অভিযান ছিল। এ অপারেশনে এএ, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং তাআং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) মিলে ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ গঠন করে। অপারেশন ১০২৭ মিয়ানমারের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গভীর পরিবর্তন এনেছে।
সামরিক সাফল্য : অপারেশন ১০২৭-এর ফলে বিদ্রোহীরা উত্তর শান রাজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ও বাণিজ্য রুটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। জান্তাবাহিনীর মনোবলে ধস নামে এবং অনেক সেনা আত্মসমর্পণ করে বা পালিয়ে যায়। উত্তর শান রাজ্যে প্রধান বাণিজ্য রুটগুলোর অবরোধের কারণে জান্তা তাদের প্রধান আয়ের উৎস হারায়।
রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব : অপারেশন ১০২৭ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সমর্থন পেয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ অভিযানে চীনের মৃদু সমর্থন রয়েছে। জান্তা নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে দখলকৃত অঞ্চলে বিদ্রোহীরা অন্তর্বর্তী প্রশাসনিক কাঠামো স্থাপন করেছে। অপারেশন ১০২৭ বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংহতি ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে।
আরাকান আর্মির সাফল্যের নেপথ্যে : আরাকান আর্মির তরুণ নেতারা তাদের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্ভাবনী কৌশলের মাধ্যমে সংগঠনকে পরিচালনা করছেন, যা নতুন প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। রাখাইন অঞ্চলের জনগণের উন্নয়নকেন্দ্রিক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার ফলে আরাকান আর্মি স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আরাকান আর্মি তাদের সংগঠনের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও সংযুক্ত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা দ্রুত ও কার্যকরভাবে জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হয়েছে।
আন্তর্জাতিক যোগাযোগ : আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন এবং সমর্থন আদায় করার মাধ্যমে আরাকান আর্মি তাদের সংগ্রামকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে পরিচিত করেছে, যা তাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন বৃদ্ধি করেছে।
জনসম্পৃক্ততা ও সমর্থন : আরাকান আর্মি জনগণের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে তাদের চাহিদা ও সমস্যা সমাধানে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে। এটি তাদের জনপ্রিয়তা ও সমর্থন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ : মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো উল্লেখযোগ্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘটেনি। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরাপত্তার গ্যারান্টি না দিতে পারা এবং রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব না দেওয়াকে এর প্রধান কারণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এএ’র সাম্প্রতিক সামরিক সাফল্য তাদের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলেছে।
বাংলাদেশের ভূমিকা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গা সংকট একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের পদক্ষেপগুলো কার্যকর হলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।
আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমন্বয় : রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্ক, আসিয়ান, ওআইসি এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনকে এ সংকট সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে এবং তাদের সুরক্ষিত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করে। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদান করতে হবে, যাতে তারা সুরক্ষিত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারে। গণমাধ্যমকে রোহিঙ্গা সংকটের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ সংকট সমাধানে সক্রিয় ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যেতে হবে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গাদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এফডিএমএন ক্যাম্পের উন্নয়ন করতে হবে, যাতে রোহিঙ্গারা মৌলিক অধিকার ও সেবা পান।
উপরোক্ত পদক্ষেপগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির উত্থান এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জটিলতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশের করণীয়গুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সম্ভব হবে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থা, গণমাধ্যম এবং আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষিত ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সবাইকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
কর্নেল মো. সালাহউদ্দিন : সেনা কর্মকর্তা