প্রত্যয় স্কিম সরকারের মূল ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করেছে
মুঈদ রহমান
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমের’ মতো একটি গ্রহণযোগ ও সময়োপযোগী ধারণাকে সম্প্রতি বিতর্কিত করা হয়েছে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। যে কোনো পেনশনের মূল উদ্দেশ্য থাকে কোনো চাকরিজীবীকে অবসরকালে আর্থিক সমর্থন করা। এ বিবেচনাতেই বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য সরকারি ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু যারা সরকারি চাকরি করেন না, তারাও তো একদিন অবসরে যাবেন, তাদেরও তো জীবনধারণের জন্য আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন পড়বে। তাদের জন্য কিছু করা যায় কিনা এরকম একটি সময়োপযোগী ভাবনা থেকেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট চারটি স্কিম চালু করা হয়, যেগুলোর আওতায় একটি নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মিলবে। স্কিমগুলো হলো : এক. প্রবাস-যা থেকে প্রবাসীরা পেনশন সুবিধা নিতে পারবেন; দুই. প্রগতি-যা থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পেনশন সুবিধার সুযোগ পাবেন; তিন. সুরক্ষা-যাতে অন্তর্ভুক্ত হবেন স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এবং চার. সমতা-যেখানে থাকবেন নিুবিত্ত ও দরিদ্র মানুষজন।
সরকারের ঘোষিত ও গৃহীত এ স্কিমগুলোর জন্য সরকারপ্রধানকে অনেকেই অভিনন্দিত করেছেন। সামাজিক সুরক্ষায় সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সবাই। কিন্তু সরকারের এই ভালো চিন্তাটিকে বিতর্কিত করা হয়েছে নতুন আরোপিত ‘প্রত্যয় স্কিমের’ মাধ্যমে। এই নতুন স্কিমের ফলে সব পাবলিক বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও বাধ্যতামূলকভাবে এখন থেকে মাসে মাসে নিজের অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা রেখে তুলনামূলকভাবে স্বল্প পরিমাণে পেনশনে যেতে হবে। কেন? সর্বজনীন পেনশনের মূল চেতনাটা ছিল-যেসব কর্মজীবীর অবসরকালীন পেনশনের সুযোগ নেই, তাদের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা করা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কর্মরত, তারা তো প্রচলিত সরকারি পেনশন প্রক্রিয়ারই অন্তর্গত। তাদের কেন স্কিমের আওতায় যেতে হবে? তাদেরকে কেন প্রচলিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে? শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বারবার টার্গেট করা হয় কেন? এটি সুবিবেচনাপ্রসূত নয়।
এই বিতর্কিত ও বৈষম্যমূলক স্কিম প্রত্যাহার করার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত দুই মাস ধরে নানা ধরনের প্রতীকী কর্মসূচি পালন করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এখন বাধ্য হয়ে তারা সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন। তাদের দাবি যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত। সরকারের উচিত এই স্কিম প্রত্যাহার করা এবং যারা প্রত্যয় স্কিম আরোপ করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
মুঈদ রহমান : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়