Logo
Logo
×

উপসম্পাদকীয়

চেনা পৃথিবীতে আসে বৈশাখ

Icon

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চেনা পৃথিবীতে আসে বৈশাখ

বাংলা বর্ষের শুরু বৈশাখ দিয়ে, এর শেষ চৈত্রের অন্তর্ধানে। দুটি মাসই তপ্ত, তৃষিত। চৈত্রে মাটি ফেটে চৌচির হয়, বৈশাখে ঝড় আসে, যে ঝড় বৃষ্টিও নামায়। তবে সেই বৃষ্টিপাত হয় হঠাৎ হঠাৎ, ফলে মাস দুটি খুব সহনীয় নয়। মাঠের কৃষক আর শহরের পথচারীকে এ মাস দুটি ক্লান্ত, ঘর্মাক্ত করে। তাদের স্বস্তি কেড়ে নেয়। কিন্তু চৈত্রের শেষ ও বৈশাখের শুরু যে নতুন বছরটি নিয়ে আসে, তার উদযাপনে মানুষের ক্লান্তি নেই। গঞ্জের দোকানি, শহরের ব্যবসায়ী এ দিন নতুন হালখাতা খোলেন। খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করান। গ্রামে মেলা হয়, শহরে এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার একটা চর্চা এখনো আছে, এবং শহরগুলোতে তার পরিসর বাড়ছে।

তারপরও নববর্ষ উদযাপন যে সর্বজনীন, তা বলা যাবে না। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বৈসু, সাংগ্রাই ও বিজু উৎসবে যেরকম প্রায় প্রত্যেক পরিবার অংশগ্রহণ করে, পহেলা বৈশাখে বাঙালিদের অংশগ্রহণ তার ধারে কাছেও নয়। পঞ্চাশ বছর আগেও শহরগুলোতে বাংলা নববর্ষ নিয়ে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস বা আয়োজন চোখে পড়ত না, গ্রামের বাজার বা গঞ্জে বরং এর আগমন অনেক বেশি দৃশ্যমান ছিল। কোনো কোনো গ্রামে মেলা হতো। এখন নববর্ষ নিয়ে উচ্ছ্বাস শহরগুলোতেই বরং বেশি।

পরিবেশগত সংকট, যা গভীর করছে জলবায়ু পরিবর্তন, এখন চৈত্র-বৈশাখের চরিত্রে অনেক পরিবর্তন আনছে। আগামীতে এ পরিবর্তন আরও ব্যাপক হতে পারে, তাতে কালবৈশাখীর সংখ্যা বাড়তে পারে, কমতেও পারে। তবে যা হওয়ার ইঙ্গিত এখনই পাওয়া যাচ্ছে, তা হচ্ছে তাপমাত্রার পারদ ওপরে ওঠা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে প্রলয় নেমে আসবে। সেই আশঙ্কার কথা না তুললেও এটুকু বলা যায়, গত পঞ্চাশ বছরে চৈত্র-বৈশাখের দাবদাহ, অন্তত শহরগুলোতে বেড়েছে। শহরগুলোর বায়ুর মান ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে, অর্থাৎ এখন থেকে নববর্ষকে নিয়ে নতুন যে কাজ করতে হবে, তা হচ্ছে প্রকৃতিকে প্রতিপালন ও রক্ষা করা থেকে নিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধ করার বাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

গত কয়েক দশকে নববর্ষ নিয়ে আমাকে অনেক লেখাই লিখতে হয়েছে। অনেক লেখাতে আমি নববর্ষের ইতিহাসের প্রসঙ্গ তুলেছি, এর উদযাপনের বিবর্তন নিয়ে লিখেছি, নববর্ষ আমাদের কী বাণী দেয়, এ নিয়েও মন্তব্য করেছি। তবে আজকের এ লেখাটিতে আমি ইতিহাস বা উদযাপনের বিষয়ে যাব না, যদিও বাণীর বিষয়টি থাকবে। আমরা জানি, কোনো ‘দিবস’ কোনো বাণী দেয় না, এটি আমরাই বরং দিনটির ওপর চাপিয়ে দেই এবং দিনটির হয়ে নিজেরাই তা ঠিক করে নেই। এটি করার মধ্যে দিনটি যে গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়টি স্বীকার করে নেই এবং বাণীর ভেতর দিয়ে আমাদের প্রত্যাশাগুলো, কর্তব্যগুলো নির্ধারণ করে ফেলি। এবার বৈশাখ আমাদের কী বাণী দিতে পারে, তার একটি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি। আরেকটি হতে পারে আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষা করার জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ। অনেক বছর আগে শামসুর রাহমান এ কথাটি নববর্ষ বরণের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন। গত শতকের শেষ দশকের শুরুতে। আজ, প্রায় ত্রিশ বছর পর তার সেই কথাটি অনেক বেশি গুরুত্ব নিয়ে প্রাসঙ্গিক হচ্ছে।

এ লেখাটির শিরোনাম শামসুর রাহমানের একটি গান থেকে নেওয়া। গানের এ পঙ্ক্তির আগের পঙ্ক্তিতে তিনি লিখেছেন, ‘প্রান্তরে আজ নতুনের ডাক।’ এ বৈশাখেও, প্রতি বৈশাখের মতো, আমরা নতুনের ডাক শুনব। কিন্তু সেই ডাক কি সত্যি নতুন হবে, না নতুন মোড়কে পুরোনোর পুনরাবির্ভাব হবে?

কথাগুলো ব্যাখ্যা করার আগে শামসুর রাহমানের প্রসঙ্গে আরেকবার ফিরে যাওয়া যাক।

নববর্ষের সেই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছিল একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন, যাতে আড়ম্বর ছিল না, বক্তৃতার বাহুল্য ছিল না। কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীতের সঙ্গে গণসংগীত পরিবেশিত হয়েছিল, নজরুলের কবিতার আবৃত্তি ছিল। শামসুর রাহমান ছিলেন একজন আলোচক। তার সঙ্গে ছিলেন মোস্তফা নূর-উল ইসলাম। আমি ছিলাম শ্রোতাদের সারিতে। শামসুর রাহমান জনসমক্ষে বক্তৃতা দিতে কুণ্ঠা বোধ করতেন। সেদিনও তিনি সংক্ষেপে তার ভাষণ শেষ করেছিলেন। তার মূল বক্তব্য ছিল, আমাদের সংস্কৃতি বিপদগ্রস্ত এবং এ বিপদ বাইরে থেকে আসেনি, এটি কালবৈশাখীর মতো তৈরি হয়েছে আমাদের নিজস্ব ভূগোলেই। যারা আমাদের সংস্কৃতিতে আঘাত করছে, নানাভাবে, তারাও বাঙালি, কিন্তু তাদের কাছে বাঙালির সংস্কৃতি অগ্রহণযোগ্য। শুধু অগ্রহণযোগ্য হলেও না হয় হতো, এ সংস্কৃতি বিনাশে তারা তৎপরও।

শামসুর রাহমানের ওপর অস্ত্র হাতে এ সংস্কৃতিবিরোধীরা হামলা করেছিল। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। সেদিনের তার কয়েকটি কথায় যে বিপদের ইঙ্গিত তিনি দিয়েছিলেন, তা ক্রমেই স্পষ্ট হতে শুরু হলো। তার ওপর হামলাটি তার একটা প্রমাণও দিল।

মানুষ হিসাবে শামসুর রাহমান ছিলেন নম্র স্বভাবের। তিনি ক্রোধ দেখাতে পছন্দ করতেন না, সহিংসতাকে প্রত্যাখ্যান করতেন। সেদিনের আলোচনায় তিনি যে কথাগুলো বলেছিলেন, তাতে ছিল এক পরিচ্ছন্ন চিন্তার ছায়াপাত। সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হবে সবাই মিলে, যার শুরুটা হবে ঘর থেকে, তারপর সেই দায়িত্ব ভাগ করে নেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সমাজের নানা সংগঠন। রাজনীতি নিয়ে তার কোনো আগ্রহ ছিল না, কিন্তু তিনি সংস্কৃতি রক্ষায় রাজনীতিকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নামতে হবে, এরকম কথা বলেছিলেন। তার বক্তৃতা তিনি শেষ করেছিলেন এ প্রত্যয়ের কথা শুনিয়ে যে, সংস্কৃতি রক্ষার ও বিকাশের প্রয়াস যে নেবে, সে প্রকৃতিকেও রক্ষা করবে, কারণ প্রকৃতিই আমাদের সংস্কৃতির ছন্দ তৈরি করে দেয়।

প্রকৃতির ছন্দ খোঁজাটা শামসুর রাহমান তার কবিতার জন্য একটা আবশ্যকতা হিসাবে দেখেছেন। তার কাছে চৈত্র-বৈশাখও ছিল ছন্দময়, যে ছন্দ একান্ত তাদের নিজস্ব। ১৯৯১ সালে মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার জানুয়ারি-মার্চ সংখ্যাটি ছিল ‘শামসুর রাহমান সংখ্যা’। এতে অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ-সাক্ষাৎকারের মধ্যে ছিল ফজল-এ-খোদার আলোচনা ‘বাঙলা গান ও শামসুর রাহমান’। এ লেখাটির শেষে তিনি শামসুর রাহমানের লেখা বেশ কিছু গান জুড়ে দিয়েছিলেন। কয়েকটি গানে শামসুর রাহমান বৈশাখ নিয়ে তার নানা অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। একটি উদাহরণ :

বৈশাখ তুমি আমার ক্লান্তি

পুড়িয়ে দাও

জীর্ণ পাতার সব হাহাকার

গুঁড়িয়ে দাও॥

. . . . . . . . .

এসো আশা নিয়ে বৈশাখ

সৃষ্টির দিকে মিছিলের মুখ

ঘুরিয়ে দাও॥

যেসব গানের উপলক্ষ্য বৈশাখ, তার সব কটিতেই তিনি বৈশাখকে সামনে রেখে তার নিজের বোধ-অনুভূতি, ভাবনা এবং প্রত্যাশাকেই প্রকাশ করেছেন। বৈশাখের তপ্তদহন তাকে পোড়াবে এবং তার সব খাদ দূর করে দেবে, যেমন সোনাকে পুড়িয়ে খাঁটি করা হয়। বৈশাখ মানুষের মিছিলকে সৃষ্টির দিকে ফেরাবে। সৃষ্টির বিপরীত ধ্বংস। অর্থাৎ ধ্বংসের পথ থেকে মানুষ সৃষ্টির পথে যাবে, প্রতিটি মানুষ পুড়ে পুড়ে খাঁটি হবে।

মানুষের মধ্যে খাদ কীভাবে ঢুকে যায়? যায়, যখন তার ভেতর থাকে সহিংসতা, আত্মম্ভরিতা, বিদ্বেষ, কূপমণ্ডূকতা, দুর্নীতি, অন্ধতা। বৈশাখের অনল কি এসব পোড়াতে পারে? সৃষ্টির পথে বৈশাখ কি মানুষকে ফেরাতে পারে? আমাদের সময়ে সারা বিশ্বে সহিংসতা, পরধর্মবিদ্বেষ, পরিবেশসংহার আর জাতিবিদ্বেষের যে বাড়বাড়ন্ত আমরা দেখছি, তার কোনো সমাপ্তি কি আমরা কল্পনা করতে পারি?

আপাতদৃষ্টিতে এ প্রশ্নের নেতিবাচক ছাড়া আর কোনো উত্তর আমাদের চোখে পড়বে না। কিন্তু কবিরা বলবেন ভিন্ন কথা। মানুষ যদি প্রকৃতির দিকে তাকায়, তাহলে একটা সদর্থক উত্তর পাবে, এ রকম বিশ্বাস এক সময় কিছু কবির কাছে প্রবল ছিল। তাদের বলা হতো রোমান্টিক কবি, আধুনিক যুগের শুরুতে, যন্ত্রের আর ইট-পাথরের শাসনে, রোমান্টিকতা আড়ালে চলে গিয়েছিল। কিন্তু চেতনাটি লুপ্ত হয়নি। শামসুর রাহমানের মধ্যে রোমান্টিকতার একটা স্রোত বহমান ছিল। আমাদের সবার মধ্যেই তা আছে; সেই স্রোতটা অন্তর্লীন, যাকে বলে অন্তঃসলিলা। তাতে একটা পা রাখলে দৃশ্যপট বদলে যায়। ক্ষুদ্র মানুষ বৃহৎ হয়ে যায়। প্রকৃতি ভালোবাসে না এমন মানুষ নিশ্চয় খুব কমই আছে। একেবারে কাঠখোট্টা মানুষের মধ্যেও রোমান্টিকতা থাকে, যদিও তার প্রকাশ থেকে দিতে সে চায় না তা। এ যে প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, রোমান্টিক আবেগ-এগুলোকে শুধু ইট-সিমেন্টের আর যন্ত্রের শাসনই আড়ালে ঠেলে দেয় না, ভুলিয়ে দেয় না; বরং সংস্কৃতির অনেক মূল্যবোধের মতো, সহজাত অনেক সুন্দর প্রবৃত্তির মতো, সেগুলোকে গ্রাস করতে পারে মানুষের সক্রিয়তা, চিন্তা, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আর তাদের কাজের জগৎ, যেখানে বহু মানুষের, মতাদর্শের, ভ্রান্ত দর্শনের, আর প্রলোভনের আনাগোনা। মানুষের জন্ম হয় নিষ্পাপতার ছবি হয়ে, কিন্তু সেই নিষ্পাপতা, ইংল্যান্ডের কবিতায় রোমান্টিক যুগের শুরুর দিকের একজন কবি উইলিয়াম ব্লেইক যেমন লিখেছেন, অভিজ্ঞতার জগতে তার পা রাখা শুরুর মধ্য দিয়ে মিলিয়ে যেতে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কখনো নিষ্পাপ থাকতে পারে না, অনেকে শৈশবের শেষে এসে নিষ্পাপতা হারাতে থাকে, যৌবনে তার অস্তিত্ব থাকে একটা ছায়ার মতো-তাও সবার কাছে নয়। কিন্তু যেসব মূল্যবোধের চর্চা, সৌন্দর্য ও নীতি-বিশ্বাসের প্রতিফলন সেই ছায়াটাকে কিছুটা কায়া দিতে পারে, তা সম্ভব হয় সংস্কৃতি এবং শিক্ষার শক্তিতে, যে শিক্ষা মানুষের জন্য, সমাজ ও জগতের জন্য কিছু দিতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। এ সংস্কৃতি আর শিক্ষা থেকে যখন মানুষ দূরে থাকে, তার আদর্শবাদে জায়গা করে নেয় উগ্রতা এবং সহিংসতা, তখন বিপরীতটাই ঘটে। সভ্যতার এত অগ্রগতির পর, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির এতটা উন্নতির পরও পশ্চিমের অনেক দেশ মনের দিক থেকে যখন পেছাচ্ছে-কারণ ওই উগ্রতা আর বিদ্বেষ এবং নীতির প্রশ্নে দ্বিচারিতা-তখন মনে হয় পৃথিবীর বোধহয় বয়স হয়েছে, পুরোনো, স্থবির হয়ে পড়েছে এ গ্রহ। তার নতুন করে জেগে ওঠার সম্ভাবনা নেই।

আর আমাদের নিজেদের ভূখণ্ডের দিকে, আশপাশের দেশগুলোর দিকে তাকালে হতাশাটা বাড়ে। আমাদের দেশে এখন চিন্তাচেতনায় যে অবসাদ এবং পশ্চাদগামিতা লক্ষ করি, মধ্যযুগকে নিজেদের ঠিকানা ভেবে পেছন পায়ে হাঁটার যে পরিতৃপ্তি দেখি, তাতে ভয় হয়, আমরা এক সময় নিজেদের ছায়া হয়েই পড়ে থাকি কিনা।

কিন্তু অন্ধকার যখন নামে, অন্ধকারের অবসানে আলোর উদ্ভাসের সম্ভাবনা নিয়েই নামে। এটি প্রকৃতির একটি সূত্র। সে জন্যই অনেক হতাশার মধ্যে শামসুর রাহমান বৈশাখকে আবাহন করেছিলেন, তার কাছে প্রত্যাশা করেছিলেন, তাকেও তার দেশের মানুষকে পুড়িয়ে খাঁটি করে দেওয়ার জন্য, মিছিলের মুখ ধ্বংস থেকে সৃষ্টির দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।

নতুন বছরের শুভ উদ্বোধনের মুহূর্তে আমিও প্রকৃতির দিকে তাকাই এ দুটি অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য। তাহলে এ চেনা পৃথিবীটি আমূল বদলে যাবে, যে পৃথিবীতে শুধু সৃষ্টি হবে, ধ্বংস নয়।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম