বাইফোকাল লেন্স
নেপথ্যচারী শনাক্তের সরকারি উদ্যোগ কতদূর?
একেএম শামসুদ্দিন
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
এখন থেকে ছয় বছরেরও বেশি সময় আগে পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার রায়ের এক পর্যবেক্ষণে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার পূর্বাপর আলোচনা ও পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এ ঘটনা রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। বিডিআরের কতিপয় উচ্চাভিলাষী সদস্য ওই স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনা ও উসকানিতে সাধারণ ও নবাগত সৈনিকদের বিভ্রান্ত করে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহ করেছিল। শুধু তাই নয়, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়।’ ২০১৭ সালের নভেম্বরে, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক মৃত্যুদণ্ডের এ মামলার আপিলের সংরক্ষিত রায় দিতে গিয়ে তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের অন্যতম এ বিচারপতি আরও বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করে যে কোনো মূল্যে তাদের দাবি আদায় করা। বাহিনীর চেইন অব কমান্ড ধ্বংস করে এই সুশৃঙ্খল বাহিনীকে অকার্যকর করা। সেনাবাহিনী-বিডিআরকে সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা। সংক্ষিপ্ত রায়ের দুবছর পর ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায় দিতে গিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ বিদ্রোহের উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, প্রয়োজনে সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে নির্যাতন ও হত্যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিডিআরে প্রেষণে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করা। রায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ সরকারকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পরামর্শটি দেন তা হলো, ‘সরকার প্রয়োজন মনে করলে তদন্ত কমিশন গঠনের মাধ্যমে জাতির সামনে প্রকৃত স্বার্থান্বেষী মহলের চেহারা উম্মোচনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’
পিলখানা হত্যাকাণ্ড শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্ব ইতিহাসে একটি জঘন্যতম ঘটনা। এ পৃথিবীতে সর্বাধিক সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ইন্দোনেশিয়ায়। ১৯৬৭ সালে চীনপন্থি কমিউনিস্টদের সমর্থনে একটি বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল। সাত দিনব্যাপী চলমান সেই ঘটনায় ১০০ সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু পিলখানা হত্যকাণ্ড সে ঘটনাকেও হার মানিয়েছে। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। উচ্চ আদালতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে এখন থেকে চার বছর আগে। এ সময়ের মধ্যে সরকার হাইকোর্টের পরামর্শ অনুসারে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের নেপথ্যচারীদের স্বরূপ উন্মোচনের জন্য কোনো তদন্ত কমিশন গঠন করেনি। কেন গঠন করেনি, তা আমাদের জানা নেই। এ ব্যাপারে সরকারও নির্বিকার। তদন্ত কমিশন গঠন না করার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, এ বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। স্বাভাবিক কারণেই এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে, ইতিহাসের এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পেছনে যেসব কুশীলব কাজ করেছে, তাদের আসল পরিচয় বেরিয়ে আসুক, এ ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নয়, তাহলে কি খুব বেশি দোষ দেওয়া যাবে?
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সেই বীভৎস দৃশ্যাবলি এদেশের মানুষের মন থেকে আজও মুছে যায়নি। কতিপয় বিডিআর সদস্য যে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করতে পারে, সে কথাও মানুষ বিশ্বাস করে না। তাদের অনেকেই মনে করেন, পর্দার আড়াল থেকে কেউ না কেউ এ ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়েছে। সেই ইন্ধনদাতা কারা? তারা কি এদেশেরই লোক? পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অনেক আগে ঘটে যাওয়া কিছু কিছু ঘটনা বিচার-বিশ্লেষণ করে অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, কেবল কিছুসংখ্যক মধ্যম ও নিু সারির বিডিআর সদস্য দ্বারা এতবড় ঘটনার পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়। এ ঘটনায় স্বার্থান্বেষী মহলের কোনো না কোনো সংশ্লিষ্টতা আছে। আদালতও পূর্ণাঙ্গ রায়ে তারই প্রতিধ্বনি করে বলেছেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে ছিল স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। এদেশের অনেকেই এ হত্যাকাণ্ডকে একটি প্রতিশোধমূলক ঘটনা বলার চেষ্টা করেন, আবার অনেকেই এ ঘটনাকে এক ঢিলে দুই পাখী শিকারের অপচেষ্টা বলেও মনে করেন। এ ঘটনার পেছনে কারা থাকতে পারে সে বিষয়ে ইতঃপূর্বে আমার একটি বিশ্লেষণমূলক লেখা যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছিল। এ ঘটনায় কাদের বেশি স্বার্থরক্ষা হবে, তা বিভিন্ন ঘটনা ও বিশ্লেষণ করে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আজকের এ লেখায় তারই কিছু তথ্য তুলে ধরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যচারীদের স্বরূপ জানার চেষ্টা করব।
প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে, এ ঘটনা থেকে কোন স্বার্থান্বেষী মহল সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। কারণ, অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের ঘটনায় লাভবানরাই নেপথ্যে অনুঘটকের কাজ করেছে। আমাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পেশাগতভাবে যেমন দক্ষ, দায়িত্ব পালনে তেমনই সজাগ। বিডিআরকে সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্যাটালিয়নের মতো ক্ষুদ্র ও ভারী অস্ত্রে সজ্জিত করে এর সদস্যদের একই পর্যায়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও পারদর্শী করে গড়ে তোলা হচ্ছিল। অতএব, সেই বাহিনীর সদস্যদের বিভ্রান্ত করে যদি পুরো বাহিনীকেই অকার্যকর করে ফেলা যায়, তাহলে কারা বেশি লাভবান হতে পারে, তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
আদালত তার পূর্ণাঙ্গ রায়ে দেশের সীমান্তরক্ষী হিসাবে বর্তমান বিজিবিকে আরও শক্তিশালী বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার জন্য এক সুপারিশে বলেছেন, ‘দেশের সীমান্তরক্ষী হিসাবে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রাথমিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর (ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স) দায়িত্বে থাকা বিজিবিকে শক্তিশালী বাহিনীরূপে গড়ে তোলার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম সেনাবাহিনীর পাশাপাশি বিডিআরকে একটি শক্তিশালী বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেছিলেন। বিডিআরকে শুধু অ্যান্টি স্মাগলিং অপারেশন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষায় প্যারা মিলিটারি ফোর্স হিসাবেই গড়ে তুলতে চাননি তিনি; বরং বাংলাদেশ বহিঃশক্তির দ্বারা আক্রান্ত হলে ‘ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স’ লাইনে শত্রুকে ধরে রাখার সক্ষমতা অর্জনের ওপর জোর দিয়েছিলেন, যেন সেনাবাহিনী পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ব্যারাক থেকে বেরিয়ে এসে শত্রু মোকাবিলায় বিডিআরের কাছ থেকে যুদ্ধক্ষেত্র বুঝে নিতে পারে। সময় ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিডিআর ধীরে ধীরে সে পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল।
যুদ্ধের সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিডিআরকে গড়ে তোলা হচ্ছিল একটি পেশাদার বাহিনীরূপে। সীমান্তে শত্রু যখন প্রথমে আক্রমণ করে, শত্রুর সেই First thrust absorb করা এবং সেনাবাহিনীকে যুদ্ধক্ষেত্র বুঝিয়ে দেওয়ার আগ পর্যন্ত মাঝখানের যে সময় থাকে, সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিডিআর সদস্যদের দক্ষভাবে পরিচালনা করে শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় পেশাদার দলনেতা। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনা কর্মকর্তাদের বিকল্প কেউ হতে পারে না। প্রশিক্ষণকালে নিয়মশৃঙ্খলা মান্য করা, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্পিত দায়িত্ব পালনের দক্ষতা অর্জন করা এবং সম্মুখযুদ্ধে শত্রু মোকাবিলায় যাতে পেশাদারির পরিচয় দেওয়া যায়, সামরিক কর্মকর্তারা সেভাবেই বিডিআর সদস্যদের গড়ে তোলেন। সামরিক কর্মকর্তা ব্যতীত শুধু বিভাগীয় কর্মকর্তা দ্বারা এসব করা সম্ভব নয়। অতএব, সামরিক কর্মকর্তাদের বিডিআর থেকে সরিয়ে দিলে কারা বেশি লাভবান হবেন, নেপথ্যচারী শনাক্তের সময় সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।
বিচার প্রক্রিয়া ও সময়ক্ষেপণ নিয়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ আছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি ঘনিয়ে এলেই কেবল বিবৃতির মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ার কিছু খবর গণমাধ্যমগুলোয় প্রচার করা হয়। বছরের বাকি দিনগুলোয় এ বিষয়ে অগ্রগতির কোনো খবর আমরা দেখতে পাই না। অতএব, ইতিহাসের এ কলঙ্কময় ঘটনার বিচারের বিষয়টি দিন যতই গড়াচ্ছে, এর গুরুত্ব যেন ততই কমে আসছে বলে মানুষের ধারণা হতেই পারে। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদেরও দাবি, ‘বিডিআর সদস্যদের কেবল বিচার করলেই চলবে না, এ ঘটনার পেছন থেকে যারা কলকবজা নাড়িয়েছেন, বিডিআর সদস্যদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন, তদন্ত করে তাদেরও খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
গত বছর পিলখানা হত্যাকাণ্ড উপলক্ষ্যে ২৫ ফেব্রুয়ারি সমাধিস্থলে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেওয়া ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন, তাতে বিচার প্রক্রিয়া ও সময়ক্ষেপণ নিয়ে তাদের ক্ষোভের পরিমাণ বোঝা যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ পিতা বলেছেন, ‘সরকার ডাকে’ আমরা আসি, শোকসভা করে চলে যাই। বিচার আটকে আছে, এটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ হলে আমরা রায়টা দেখে যেতে পারব। সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছি। একজন সন্তান বলেছেন, ‘আমরা বিচার পাব না, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার হবে না, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার সম্ভব নয়।’ এই পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডে একই সঙ্গে মা-বাবা হারানো অপর এক সন্তান বলেছেন, ‘আপনারা সত্য প্রচার করতে পারবেন না, বলে লাভ নেই। অযথা সময় নষ্ট করছেন। আমি যা বলব, তা প্রচার করতে পারবেন না।’
ইতোমধ্যে হত্যা মামলার রায় দেওয়া হলেও ২০১১ সালে শুরু হওয়া বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়েই রয়ে আছে। গত ১২ বছরে ১৩শ সাক্ষীর মধ্যে মাত্র ২৭৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ২৮-২৯ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। এ মামলায় আসামি ৮৩৪ জন। তাদের মধ্যে ৫২ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। ১৯ আসামি এখনো পলাতক। ওদিকে হত্যা মামলার হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায়সহ যাবতীয় নথিপত্র আপিল বিভাগে জমা দেওয়া হয়েছে। আপিলের সারসংক্ষেপও জমা দেওয়া আছে। এখন কোনো কিছুই বাকি নেই বলে আসামিপক্ষের আইনজীবী দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, বিচার প্রক্রিয়ার এ সময়ক্ষেপণ দেখে মনে হচ্ছে, রাষ্ট্রপক্ষই হত্যা মামলার রায় পাওয়ার পর বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছে না। হত্যা মামলার খালাসপ্রাপ্ত ২৭৮ আসামি বিস্ফোরক মামলারও আসামি। হত্যা মামলায় খালাস পেতেও বিস্ফোরক আইনের মামলার কারণে তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে হত্যা মামলার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলেছেন, হত্যা মামলার সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত শুনানি করতে আপিল বিভাগে আলাদা বেঞ্চ গঠন করতে হবে। এজন্য আরও চারজন বিচারক প্রয়োজন। শিগ্গির আপিল বিভাগে নতুন বিচারক নিয়োগ হবে। এরপর পৃথক বেঞ্চ গঠন হলে শুনানি শুরু হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল গত বছরও শুনানি শুরু হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বিচারক বাড়িয়ে আলাদা বেঞ্চ গঠন করার প্রয়োজন যদি হয়, তাহলে পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার এতদিন পর কেন এ উপলব্ধি হলো? আগে কেন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হলো না? সময়ক্ষেপণ করে মানুষের মনে কেন বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করা হলো?
ভুক্তভোগী হিসাবে আমার নিজেরও মনে হয়, যাদের আটক করা হয়েছে, বিচারের রায় বহাল থাকলে তাদের যদি ফাঁসি হয়, তাহলেই বা কী? এটা স্বাভাবিক, অপরাধীর তো ফাঁসিই হবে। অথচ পর্দার আড়ালে যারা রয়ে গেলেন, তাদের কিন্তু খুঁজে বের করা হলো না। তাদের খুঁজে বের করার ব্যবস্থা না করে আমরা কি গুরুতর অপরাধীদের ক্ষমা করে দিচ্ছি না? উচ্চ আদালতের পরামর্শ অনুযায়ী পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যচারী শনাক্তের তদন্ত কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া আর ঝুলিয়ে না রেখে যত শিগ্গির তা গঠন করা যায়, ততই ভালো। একই সঙ্গে দরকার হলে বিচারকের সংখ্যা বাড়িয়ে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সময়ক্ষেপণ নিয়ে মানুষের মনে যে সন্দেহের দানা বেঁধেছে, তা দূর করা হোক।
একেএম শামসুদ্দিন : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, কলাম লেখক